কোরআনে যে স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি বর্ণিত হয়েছে

কোরআনে যে স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি বর্ণিত হয়েছে

আসমান এবং জমিনে একমাত্র ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সবকিছুর মালিক। পৃথিবীতের মানুষের জীবনের গতিপ্রকৃতিও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নেই। খালি চোখে অনেককে আমরা ক্ষমতাধর, দোর্দণ্ড প্রতাপশালী হিসেবে দেখলেও তিনিই ইচ্ছা করে কাউকে ক্ষমতা দেন, আবার কারো কাছ থেকে কেড়ে নেন। 

আসমান এবং জমিনে একমাত্র ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সবকিছুর মালিক। পৃথিবীতের মানুষের জীবনের গতিপ্রকৃতিও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নেই। খালি চোখে অনেককে আমরা ক্ষমতাধর, দোর্দণ্ড প্রতাপশালী হিসেবে দেখলেও তিনিই ইচ্ছা করে কাউকে ক্ষমতা দেন, আবার কারো কাছ থেকে কেড়ে নেন। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন— ‘বলো, হে আল্লাহ, সারা জাহানের অধিপতি তুমি। যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করো, যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করো আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করো। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ২৬)

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ক্ষমতা বা যেকোনো নিয়ামত দিয়ে পরীক্ষা করেন। সে কীভাবে নিয়ামতের ব্যবহার করছে তার ওপর নির্ভর করে নিয়ামত বাড়িয়ে দেন অথবা কেড়ে নেন।

নিয়ামত ব্যাপারটি সাধারণভাবে বিশেষ অনুগ্রহ মনে হলেও আল্লাহ তায়ালা যার জীবনে যেভাবে চলাফেরার সঙ্গতি দিয়েছেন এবং যাকে যেভাবে স্বাভাবিক জীবন দিয়েছেন, সেটাই তার জীবনের নিয়ামত হিসেবে বিবেচিত। যাকে সাধারণ জনগণ হিসেবে জীবন দিয়েছেন তার জন্য এই জীবনের যথোচিত ব্যবহার করাই কৃতজ্ঞতার বহিরপ্রকাশ। 

যাকে ক্ষমতাশালী বা শাসক করেছেন তার জন্য ক্ষমতার সঠিক ব্যবহারও জরুরি। ক্ষমতা পেয়ে জালেম বা স্বৈরাচারের ভূমিকায় আসীন হওয়া ক্ষমতার যাচ্ছেতাই ব্যবহারের শামিল। যারা ক্ষমতার মতো নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না, তাদের থেকে আল্লাহ তায়ালা মুহূর্তেই তা কেড়ে নিতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এর অসংখ্য নজির রয়েছে। 

এখানে কোরআনে বর্ণিত কিছু স্বৈরশাসক ও তাদের পরিণতির কথা তুলে ধরা হলো—

নমরুদের  ভয়াবহ পরিণতি

পৃথিবীতে দীর্ঘ ৪০০ বছর শাসন করেছিল নমরুদ। সে চরম পর্যায়ের ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল পৃথিবীতে। পৃথিবীর ইতিহাসে আল্লাহর সঙ্গে প্রথম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছিল সে। আল্লাহকে নিঃশেষ করার জন্য আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ এবং নিজেকে প্রভু দাবি করার দুঃসাহস করেছে এই জালিম।  

অবশেষে আল্লাহ তায়ালা শাস্তিস্বরূপ একটি মশা তার নাকে প্রবেশ করান। মশার অসহ্যকর জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত পর্যন্ত করে; কিন্তু এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি, বরং শাস্তির মাত্রা আরো বহুগুণ বেড়েছে। 

ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি ওই ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করোনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইবরাহিমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহিম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক, যিনি জীবনও দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহিম বলল, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত করো তো! এ কথায় সেই কাফির নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ জালিমদের হিদায়াত করেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৫৮)

দাম্ভিক কারুনের করুণ পরিণতি

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে যেসব দাম্ভিক ও স্বৈরাচারের কথা বর্ণিত করেছেন তম্মধ্যে একজন কারুন। সূরা কাসাসে আল্লাহ তায়ালা কারুনের জুলুম ও তার শেষ পরিণতির কথা এভাবে তুলে ধরেন, ‘কারুন ছিল মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি।

কিন্তু সে তাদেরই প্রতি জুলুম করল। আমি তাকে এমন ধনভাণ্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিমান লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিল। স্মরণ করো, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। সে বলল, এসব তো আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি।

সে কি জানত না যে আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতেও তার অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং লোকবলেও বেশি ছিল? অপরাধীদের তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হয় না। পরিণামে আমি তাকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলাম। তার সপক্ষে এমন কোনো দল ছিল না, যারা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও পারল না আত্মরক্ষা করতে। ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সব লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য দেখাতে ও ফাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকিদেরই অনুকূল থাকবে। (সূরা কাসাস, আয়াত : ৭৬-৮৩)

ঔদ্ধত্য ফেরাউনের পতন

বিশ্ববাসীর জন্য যে স্বৈরশাসকের পরিণতি উপদেশ হিসেবে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা তার নাম ফেরাউন। স্বৈরশাসক হিসেবে ফেরাউন এতোটাই ঘৃণা কুড়িয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি স্বৈরাচার হয়ে উঠলে তাকে ফেরাউনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। 

ফেরাউন মুসা আ.-এর যুগের স্বৈরশাসক। মুসা আ. ও তাঁর সম্প্রদায়ের ওপর ফেরাউনের উদ্ধত আচরণের কথা কোরআনে তুলে ধরেছেন আল্লাহ তায়ালা।

নিজ সম্প্রদায়ের ওপর সীমাহীন অত্যাচার ও নিজেকে প্রভু দাবি করেছিল। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাকে এত কঠিন শাস্তি দিলেন যে পৃথিবীর মানুষের জন্য তা বিরাট এক শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে আছে। কোরআন মাজিদে তার শাস্তির কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে—

‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল, তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সেনাদের পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করে ডুবিয়ে মারলাম। এবার দেখো, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে!’ (সূরা কাসাস, আয়াত : ৩৯-৪০)

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *