বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তিক ভুল সিদ্ধান্ত’ আখ্যায়িত করে বিপ্লবী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ও বিগত স্বৈরাচারী সরকারকে পুনর্বহালের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সিকান্দারকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা আবু সালেহ সেকেন্দারকে অবাঞ্ছিত করার ব্যানারের ওপর জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তিক ভুল সিদ্ধান্ত’ আখ্যায়িত করে বিপ্লবী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ও বিগত স্বৈরাচারী সরকারকে পুনর্বহালের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সিকান্দারকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা আবু সালেহ সেকেন্দারকে অবাঞ্ছিত করার ব্যানারের ওপর জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সব শ্রেণিকক্ষে তালা দেন বিভাগটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভাগের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে ভিসি ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে তারা ভিসি বরাবর সেকেন্দারের স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৪ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। এ সময় তাদের স্লোগান ছিল- ‘দালালের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আবু সালেহ বাটপার, এই মুহূর্তে ক্যাম্পাস ছাড়’, ‘আবু সালেহ’র বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’।
শিক্ষার্থীদের চারটি দাবি হলো- আজকের মধ্যে শিক্ষক সালেহ সেকেন্দারকে সাময়িক বহিষ্কারসহ বেতন ভাতাদি ও সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করতে হবে; আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্টের মাধ্যমে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে; একাডেমিক কমিটির অব্যাহতি ২০১৯ এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত অন্যায্যভাবে বেতন ভাতা ও আর্থিক সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন তা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; যতক্ষণ পর্যন্ত সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কার এবং আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ আহম্মেদ বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষে কলাম লিখে জুলাই বিপ্লবকে অসম্মান ও অবহেলা করেছেন তিনি। জুলাই বিপ্লব শেষে আমরা প্রায় দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে এই পরিবর্তন পেয়েছি। এই পরিবর্তনকে নস্যাৎ করতেই স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আবু সালেহ সেকেন্দার তাদেরই একজন। এই পরিস্থিতিতে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার ও সকল বেতন ভাতা স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, থিসিস চুরি ও নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার দায়ে ২০১৯ সালে ডিপার্টমেন্ট থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর শুধু কলাম লেখেন আর বসে বসে বেতন নেন। আওয়ামী লীগের সময় প্রভাব খাটিয়ে ও বিরোধী শিক্ষকদের জামায়াত, শিবির ও জঙ্গি আখ্যায়িত করেন মানসিক পীড়া দিতেন তিনি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, ৫ আগস্টে খুনি হাসিনার দোসরদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেব না। যখন শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, তখন কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করেন নি। এখন তারা সাধু সাজছেন। যারা আগস্টে হত্যাকাণ্ডের অংশ ছিল তাদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিলে শহীদ সাজিদ, আবু সাইদ ও মুগ্ধরা কষ্ট পাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নূর নবী বলেন, বিগত সময়ে যারা স্বৈরাচার সরকারের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং গুম-খুন করত তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। শুধু ছাত্রলীগের পদের কারণে তারা শিক্ষক হয়ে এসেছিল। তার মধ্যে সালেহ সেকেন্দার একজন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শেখ মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, একটি জাতীয় অনলাইন পোর্টালে শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দার ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তিক ভুল সিদ্ধান্ত’ কলামে উল্লেখ করেন, ‘যে আইনের ধারায় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করেছে তা বেশ হাস্যকর ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে। আল-কায়েদা বা আইএস নিষিদ্ধ করা আর ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা এক বিষয় নয়।’ এর পরেই ফুঁসে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এমএল/এমএ