কুমিল্লার বন্যার পানি ঢুকছে চাঁদপুরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

কুমিল্লার বন্যার পানি ঢুকছে চাঁদপুরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

কুমিল্লার লাকসামের ডাকাতিয়া নদী থেকে বন্যার পানি ঢুকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলার জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠেছেন। আবার অনেকের গন্তব্য স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন।

কুমিল্লার লাকসামের ডাকাতিয়া নদী থেকে বন্যার পানি ঢুকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলার জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠেছেন। আবার অনেকের গন্তব্য স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি ও ডাকাতিয়া নদীর জোয়ারের পানি চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলার মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি, মাঠ-রাস্তাঘাট, বীজতলা ও ফসলি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে আছে। নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হচ্ছে। উঠানে জোয়ারের পানি থই থই করছে। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা এলাকাগুলোতে মাটির চুলায় রান্না বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবনে।এতে বন্যার রূপ নিয়েছে।

সোমবার শাহরাস্তি পৌরসভা, উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়ন, রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন, সুচিপাড়া উত্তর ইউনিয়ন, সুচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন, চিতোষী পূর্ব ইউনিয়ন, চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে পানিবন্দি বাসিন্দাদের দুর্দশার চিত্র দেখা যায়।

উপজেলার সুচিপাড়া গ্রামের ইমন বলেন, আমাদের অনেকগুলো মাছের ঘের ছিল। সেগুলোর পাড় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকু নিয়ে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

পাথৈর গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে আমাদের ঘর বাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোথাও সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। বাড়িতে রান্নাঘরের চুলা তুলিয়ে যাওয়ায় বোতলের গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্যাসের দামও বেড়েছে। তেরো শত টাকার গ্যাস পঁচিশ শত টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। তা ছাড়াও পুকুরের মাছগুলো চলে গেছে। 

রায়শ্রী গ্রামের আসমা বেগম বলেন, আমাদের বাড়িতে অনেক পানি উঠে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। রান্না করতে পারছি না। চারপাশে সাপের অনেক ভয় লাগে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চাই।

সুচিপাড়া ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকার রনজিত রায় বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে আমাদের ঘর ডুবে গেছে। তাই পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরেকজন পার্থ সারতি চক্রবর্তী বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ভেসে আমার দুটি পুকুরের প্রায় ৭ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। বাড়িতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গবাদি পশু রাখার মতো স্থান নেই। আমাদের এলাকার চারদিকে পানি থইথই করছে।

আমেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, রান্না ঘরে পানি উঠেছে। বসত  ঘরে যেকোনো মুহূর্তে পানি উঠে যাবে। ঘরের মধ্যে পানি ছুঁই ছুঁই করছে।

সূচিপারা ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা জমির বলেন, আমার বাড়ি উপজেলার দোয়াভাঙ্গা। আমাদের ঘরের মধ্যে কোমর পর্যন্ত পানি। ঘরে পানি উঠে যাওয়ার কারণে বৃদ্ধা মাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে এসেছি। কবে পানি কমবে সেই চিন্তায় আছি।

সূচিপারা ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক কুমিল্লা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রান্তর বলেন, শাহরাস্তির অবস্থা ভালো নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতি মুহূর্তে লোক সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম এই আশ্রয় কেন্দ্রে মাত্র ৯ জন আসে। পরে মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন সবমিলে ৩৮০ জন আছে। এখানের মানুষগুলো খেটে খাওয়ার মানুষ। তাদের জমানো টাকা নেই। যার কারণে এসব মানুষ অসহায় হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও যাদের গরু, ছাগল, হাস, মুরগি আছে, তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার কিছু বিত্তবান মানুষ আছেন। তারা এখানের অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিছু সংগঠনও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রায় সাড়ে ৪শ কেজি চাল দিয়েছে। এখানের মানুষের পরিবার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিত্তবানদের যার যার অবস্থান থেকে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সজাগ ফাউন্ডেশনের সদস্য ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমরা গত কয়েকদিন যারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে খাবার সামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে দুর্গত মানুষের পাশে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই পর্যন্ত ৭ শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে আরও পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার পৌরসভাসহ সব স্থানে কম-বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে। আমরা এসব লোকদের সহযোগিতায় কাজ করছি। অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লার লাকসামের ডাকাতিয়া নদী থেকে বন্যার পানি ঢুকছে চাঁদপুরে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে শাহরাস্তির এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও হাজিগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *