লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। নোয়াখালীর মুছাপুর স্লুইচগেট ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এর প্রভাব লক্ষ্মীপুরেও পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে গেছে, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি ক্ষেত ও বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও ৪-৫ ফুট পানি রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষ দুঃসহ জীবন পার করছে। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাতেই পানি ঢুকে পড়েছে। মানুষজন খাদ্য সংকটে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ওইসব এলাকার মানুষ খাদ্য সংকটে হাহাকার করছে। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, ৪ দিন ধরে তিনি খায়রুল এনাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। পানি বেশি হওয়ায় কেউই ঠিকমতো সেখানে গিয়ে তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। কোনো খাবারও জোটেনি তাদের।
বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, বাড়িতে প্রচুর পানি। থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি মান্দারী যাদৈয়া গ্রামে এসেছি। এছাড়া আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও জায়গা নেই। বাবার বাড়িতেও পানি। সবাই একসঙ্গে থাকব, বাঁচলে সবাই একসঙ্গে বাঁচব।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। মুছাপুরের স্লুইচ গেট ভেঙে গেছে। এতে এর একটি অংশের পানি বেগমগঞ্জ হয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলায় বর্তমানে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুর্গম এলাকায় যারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাননি, তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেলার সর্বত্র ত্রাণ বিতরণ করছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর