শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা, আ. লীগের ৭৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা, আ. লীগের ৭৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তামিম (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ৩৫/৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তামিম (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ৩৫/৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকালে তামিমের মা ফারজানা ইয়াছমিন কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে শহরের বকচত্বর এলাকায় তামিমকে গুলি করে ও মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। সে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তামিম হাটশ হরিপুর এলাকার উজ্জল আহমেদের ছেলে।

আহত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তামিমের মা ফারজানা ইয়াছমিন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ১৭ জুলাই থেকে আমার ছেলে তামিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে আসছিল। ৫ আগস্ট সারা দেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া শহরের বকচত্বরে পৌঁছালে আসামিরা দেশি-বিদেশি অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ধারালো চাপাতি ও বিস্ফোরকদ্রব্য হাতে নিয়ে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ও পথরোধ করে। ১ থেকে ৬ নম্বর আসামির (শেখ আহমেদ কৌশিক, মিলন মন্ডল, রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, মাহমুদ হাসান, রুহুল আমীন মুরাদ, আফরোজা আক্তার ডিউ) হুকুমে হত্যাচেষ্টা করে আসামিরা। আসামিরা তাদের হাতে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য ছুড়ে বিস্ফোরণ ঘটায় ও দেশি-বিদেশি অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও ধারালো চাপাতি নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আন্দোলকারীদের ধাওয়া করে।

এ সময় আমার ছেলে তামিম জীবন বাঁচানোর জন্য ছয় রাস্তার মোড়ের দিকে দৌড় দেয়। থানাপাড়ার আড়ংয়ের সামনে রাস্তার ওপর পৌঁছলে আসামিরা আমার ছেলে তামিমকে সামনে থেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ও এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং ধারালো চাপাতি (দেশীয় অস্ত্র) হাতে নিয়ে ধাওয়া করে। ছররা গুলি খেয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় এবং তাৎক্ষণিক সে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। তখন ১,৩, ৪ ও ১৩ নম্বর  আসামি (কৌশিক, বিপ্লব, মাহমুদ হাসান, ওলিদুজ্জামান শুভ) আমার ছেলে তামিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে এবং অন্যান্য সব আসামিরা চাপাতি ও অস্ত্র দিয়ে তামিমকে এলোপাতাড়ি আঘাত, গুলি ও ধাওয়া করে।

খবর পেয়ে আমার ছেলে তামিমকে বাঁচাতে আগাইয়া আসলে আসামিরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। তামিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা উল্লাস করতে করতে বকচত্বরের দিকে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার ছেলের চিকিৎসা করাই। চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত থাকায় এবং আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হইল।

ফারজানা ইয়াছমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেকে মারপিট ও গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এজাহারে উল্লিখিত অন্য আসামিরা হলেন—শেখ আহমেদ কৌশিক (বিষ্ণু) (৪০), মিলন মন্ডল (৪৫), রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব (৪৯), মাহমুদ হাসান (৩৫), রুহুল আমীন মুরাদ (৪০), আফরোজা আক্তার ডিউ (৪৬), ইসরাত জাহান প্রকৃতি (২৪), আব্দুর রাজ্জাক রাজু (৫০), কামরুজ্জামান নাহিদ (৪০), আবু সাঈদ টুটুল (৩৯), আমিনুর রহমান পল্লব (৩৫), মানব চাকী (৩২), এস. এম. ওলিদুজ্জামান শুভ (৩০), ফেরদৌস হাসান ইমন (২৬), শহীদুল ইসলাম মিন্টু (৫০), সাবিনা খাতুন (৪০), আখি আক্তার (২২), রেমন (২৯), হাসিব কুরাইশি (৩০), বনি আমীন (৩০), হাসানুল আসকার হাসু (৫০), ইমরান হোসেন দোলন (৪৭), হাফিজুর রহমান জীবন (৩৬), নান্টু ডাক্তার (৩৫), ইমন হোসেন (২৪), শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ (৩০), হেদায়েত মোল্লা (৩৭), টগর মোল্লা (৩৯), আল আবীর বাপ্পী (২৩),  কুটু (৩০), রাকিবুল ইসলাম রাকিব (৩৮), এজাজ মোহাম্মদ অনি (৩৫), রাকিব (৩৫), এটিএম রুহুল আজম (৩৮), অন্তর (৩০), নাসির উদ্দীন (৩৫), সুরঞ্জন ঘোষ (৪০), সালমান শাহরিয়ার রাজু (৩৮), এফ. সি. রিপন (৩৫), অজয় সুরেখা, তপন (২৯), জাহিদুজ্জামান জাহিদ (৫০), জাহাঙ্গীর খাঁন (৫০), রায়হানুল হক,  ইয়াসির আরাফাত তুষার (৩৫), রবিউল ইসলাম (৪৮),  আতিকুজ্জামান ছন্দ (৩৬), পপি জামান (২৬), জান্নাতুল ফেরদৌস (২৮), আব্দুর আলীম (হালিম) (৪৭), রনি খান (৪৫), নান্টু (৪৫), তরিকুল ইসলাম টরিক (১৬), শাকিল (১৯), জেবুন্নেসা সবুজ (৪৫), আলী মোর্তজা খসরু (৪০), অমি (৩৬), সালাম (৩২),  বাবুল (৩৮), বাবু (৩৮), নুরুজ্জামান জনি (৪০), জয়নাল (৩০), শশী (৩৫), আপন আহমেদ বাঁধন, মীর অভি (২৭), মানজিয়ার চঞ্চল (৪৭), আদলু বিশ্বাস (৪৫),  আক্তার হোসেন (৪০), সুজন আলী (৩০), মাহাবুবুর রহমান টিপু (৫০), জিয়াউল হক জিয়া, আকলী (৪২), শাহিন কমিশনার (৪২), তুহিন কান্তি চাকী (২৭), উজ্জল শেখ (৪২) ও আরিফ বিল্লা অন্নম (২৭)।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, তামিম হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

রাজু আহমেদ/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *