রিয়াজউদ্দিন বাজারের সেই চোরাই কারবারি এবার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার

রিয়াজউদ্দিন বাজারের সেই চোরাই কারবারি এবার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে ৩ জনকে ইয়াবাসহ আটক করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে থানার অক্সিজেন মোড় এলাকার একটি ভবন থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় বায়েজিদ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে ৩ জনকে ইয়াবাসহ আটক করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে থানার অক্সিজেন মোড় এলাকার একটি ভবন থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় বায়েজিদ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আটকরা হলেন- চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আবদুল শুক্কুরের ছেলে মো. রাশেদ (৩২), নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার এনামুল হকের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন ওরফে আরমান (২৮) এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার শামসুল আলমের ছেলে মো. মহিউদ্দিন (৩৪)।

অভিযানে থাকা শিক্ষার্থীদের একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এক প্রতারককে খুঁজতে গিয়ে এই ফ্ল্যাট বাসাটির সন্ধান পাই। সেখানে গিয়ে আমরা অভিযুক্ত তিনজনকে ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় পাই। তাদের এখানে ৪ জন নারীও ছিল। মূলত এটি ছিল পতিতালয়। পরে নারীদের মোবাইল নিয়ে ছেড়ে দিলে অভিযুক্ত ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইয়াবাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ (সোমবার) তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটক ৩ জনের মধ্যে মো. রাশেদ নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের চোরাই মোবাইলের ব্যবসার অন্যতম মূল হোতা। একসময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন তিনি। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে চাকরি নেন একটি দোকানে। বিক্রয়কর্মী হিসেবে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও তার সঙ্গে চোরাচালানে জড়িত লোকজনের সখ্য গড়ে ওঠে।

একপর্যায়ে নিজেই জড়িয়ে যান চোরাচালানে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের মধ্যেই অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যান তিনি। সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নে গড়ে তোলেন সুরম্য দালান-কোঠা। অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে তার চলাফেরায়।

রাশেদের মোবাইল চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার ব্যাগ তল্লাশি করে ২২টি দামি মোবাইল, চার লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ১৭ পিস শাড়ি, ১৭ পিস থ্রিপিস এবং ৪০ পিস টি-শার্ট জব্দ করা হয়। তার সঙ্গে ছিল (B00311540) নম্বরের পাসপোর্ট। ঘটনার সময় তিনি প্রথমে কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যান। এরপর মাঠে এসে আর্মড পুলিশের হাতে আটক হন। তার ব্যাগে সন্দেহজনক মালামাল থাকায় তাকে পুনরায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মালামালগুলো জব্দ করেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র ভৌমিক। তিনি নিজে সই করে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন।

সেই জব্দ তালিকার মন্তব্য অংশে লেখা হয়— ‘যাত্রী (রাশেদ) ব্যাগেজ ঘোষণা প্রদান করেননি। তিনি বারবার যাতায়াত করেন। যাত্রী বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ও বাণিজ্যিক পরিমাণে পণ্য আনয়ন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই পণ্যগুলো শিফট ইনচার্জের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী আইনানুগ নিষ্পত্তির জন্য সাময়িকভাবে আটক করা হলো এবং ডিএম কপিটি বিচার শাখায় প্রেরণ করার জন্য সুপারিশ করা হলো।’

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসে কয়েকবার রাশেদ ভারতে আসা-যাওয়া করেন। পাশাপাশি দুবাইয়েও নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে তার। দুটি দেশে রাশেদের ঘন ঘন সফরের বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, মূলত ভারতে চুরি যাওয়া এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইল দেশে নিয়ে আসেন তিনি। এক্ষেত্রে নিজে কিছু নিয়ে আসেন। বাকিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এসব অবৈধ মোবাইল বিক্রির জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজারে মোহাম্মদীয়া প্লাজায় ‘মিশমা টেলিকম’ নামে একটি দোকান দেন রাশেদ। ওই দোকানে বসেন রাশেদের ভাই কায়সার। সেখান থেকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন দোকানে এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দোকানগুলোতে চোরাই মোবাইল সাপ্লাই দেওয়া হয়। আবার, একই দোকানে সংগ্রহ করা হয় বাংলাদেশে চুরি যাওয়া এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইল। এসব মোবাইল কায়সার নিয়ে যান দুবাই। সেখান থেকে মোবাইলগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে যায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চোরাই মোবাইল বাংলাদেশে পাচারকালে কয়েকমাস আগে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাশেদ। ভারতীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ের মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় তাকে কলকাতা অংশের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এমআর/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *