৯ মাসের হুসাইবার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শহীদ মাহমুদুলের বাবা

৯ মাসের হুসাইবার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শহীদ মাহমুদুলের বাবা

৯ মাস বয়সী শিশু হুসাইবা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত মাওলানা মাহমুদুল হাসানের মেয়ে। বাবা বেঁচে নেই সেটা বুঝে উঠার বয়স হয়নি তার। বাবার স্নেহ থেকে আজীবনের জন্য বঞ্চিত হয়ে মায়ের স্নেহ এখন একমাত্র ভরসা। তবে এতেই যেন দুশ্চিন্তার ভাজ যেন কপাল থেকে সরছে না।  ছেলের বউ ও হুসাইবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় মাহমুদুলের বাবা আব্দুস সাত্তার।

৯ মাস বয়সী শিশু হুসাইবা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত মাওলানা মাহমুদুল হাসানের মেয়ে। বাবা বেঁচে নেই সেটা বুঝে উঠার বয়স হয়নি তার। বাবার স্নেহ থেকে আজীবনের জন্য বঞ্চিত হয়ে মায়ের স্নেহ এখন একমাত্র ভরসা। তবে এতেই যেন দুশ্চিন্তার ভাজ যেন কপাল থেকে সরছে না।  ছেলের বউ ও হুসাইবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় মাহমুদুলের বাবা আব্দুস সাত্তার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার। তবে পরিবার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন রাজধানীর উত্তরায়। মাওলানা মাহমুদুল ছিলেন আব্দুস সাত্তারের বড় ছেলে। এ ছাড়া মাহমুদুলের ছোট আরও দুই ভাই রয়েছে। তারা দুজনই ঢাকার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন।

গাজীপুরের কাপাসিয়া চাঁদপুর বাজার মসজিদের খতিব ছিলেন মাহমুদুল। বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন।

জানা যায়, শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন মাওলানা মাহমুদুল। আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বার্তা দিতেন, করতেন ভিডিও পোস্ট। গত ৫ আগস্ট স্ত্রী-সন্তানকে বাবা-মায়ের কাছে রেখে বের হন আন্দোলনে যোগ দিতে। গোলাগুলি হচ্ছে জানানোর কিছুক্ষণ পর থেকেই আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না মাহমুদুলের। ঘটনার এক দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে পরিবারের লোকজন মরদেহ শনাক্ত করে।

ছেলের মৃত্যুর শোক যেন এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছেন না মাহমুদুলের বাবা-মা। ছেলের কথা স্মরণ করে মোবাইল ফোনে ছেলের ছবি দেখে এখনো কেঁদে উঠেন মা। পরিবারে দায়িত্ব নেওয়া ছেলেটির এমন মৃত্যুতে বড় ধাক্কা পেয়েছেন বাবা আব্দুস সাত্তার।

মাহমুদুলের স্ত্রী, নয় মাস বয়সী নাতনি, মাদরাসায় পড়ুয়া দুই ছেলে ও তাদের মায়ের দায়িত্ব পুরোটাই এখন বাবা আব্দুস সাত্তারের ওপর। সংসার চালাতে ভূমিকা পালন করা ছেলের মৃত্যুতে পড়ন্ত বয়সে আবারও পুরো পরিবারের দায়িত্ব এখন তার কাঁধে।

মাহমুদুলের চাচা মো. সাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্দোলন নিয়ে মাঝেমধ্যে সে ভিডিও দিত। ৫ আগস্ট ঢাকায় বাবা-মায়ের কাছে এসে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য বের হতে বলে। পরিস্থিতি ভালো না উল্লেখ করে মা নিষেধ করেন। মা বলতে থাকেন গেলে আমাকেও নিয়ে যা। তখন সে মাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নেয়। দোয়া করতে বলে বের হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, বের হওয়ার পরও আমার ভাই ও আমার সঙ্গে মাহমুদুলের যোগাযোগ হয়। গোলাগুলি হচ্ছে বলে জানায় সে। তাকে সাবধানে থাকতে বলা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে ফোনে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত মোবাইল ফোনে চার্জ নেই অথবা নিরাপদ কোনো স্থানে চলে গেছে। ৬ আগস্ট সকালে ভাই আমাকে ফোন করে জানায় মাহমুদুল তখনো বাসায় আসেনি। এরপরই সবার চিন্তা বেড়ে যায়। উত্তরা থানা এলাকায় গিয়ে জানতে পারেন দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে মাহমুদুলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। ৭ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে তার দাফন করা হয়।

এদিকে মাহমুদুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার মামা মো. খলিল উল্লাহ বাদী হয়ে ১০১ জনকে আসামি করে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কাজের স্বার্থে মাহমুদুল হাসান সম্পর্কে জানতে সরাইল থানায় অনুসন্ধান স্লিপ আসে। সেখানে আসামি হিসেবে মাহমুদুলের স্বভাব চরিত্র যাচাই করে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। এরপরই সরাইল থানা পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের মাধ্যমে খবরটি মাহমুদুলের পরিবারের কাছে গেলে তারা চিন্তায় পড়ে যান। পরিবারের লোকজন ধারণা করেন যে, মাহমুদুলের বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করে মামলা করেছেন।

তবে জানা গেছে বিষয়টি নিছক পুলিশের লেখার ভুল। ভিকটিমের বদলে স্লিপে আসামি হিসেবে মাহমুদুল হাসানের নাম লেখা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা উত্তরা থানার এসআই সাদিকুজ্জামানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি লেখায় ভুলের বিষয়টি স্বীকার করেন। মাহমুদুলের বাবা থানায় গেলে তাকেও ভুল হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।

মুঠোফোনে মাহমুদুলের বাবা আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসিনার পতনের পরও উত্তরায় সংঘর্ষ হয়। ওই সময়ই মাহমুদুলের ওপর গুলি লাগে। গোলাগুলি চলার কথা সে জানালে একটু দূরে থাকতে বলি। কিছুক্ষণ পর থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সে মারা গেছে সেটা বুঝতে পারিনি। পরের দিন পুলিশ মারফত জানতে পেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মাহমুদুলের মরদেহ শনাক্ত করি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, মাহমুদুলের নয় মাস বয়সী সন্তান এখনো বুঝে উঠতে পারেনি তার বাবা বেঁচে নেই। মাহমুদুলের মা মোবাইল ফোনে ছেলের ছবি দেখলেই কেঁদে উঠে। তার স্ত্রীও ভেঙে পড়েছে। মাহমুদুলের স্ত্রী-সন্তানকে কীভাবে কী করব এ নিয়ে চিন্তায় আছি। একজন শহীদের স্ত্রীকে আমি মর্যাদা দিয়ে রাখতে চাই। মাহমুদুলের স্ত্রীও মাদরাসায় কিছু পড়াশোনা করেছে। সরকারকে এগিয়ে আসার বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।

মাজহারুল করিম অভি/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *