গুলিতে ঝাঁঝরা ছিল আবু সাঈদের বুক, ৬ বার পরিবর্তন করা হয় প্রতিবেদন

গুলিতে ঝাঁঝরা ছিল আবু সাঈদের বুক, ৬ বার পরিবর্তন করা হয় প্রতিবেদন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদ হত্যাকাণ্ডের ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেছেন, শহীদ আবু সাঈদের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা ছিল। আমাকে ঢাকা থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তুমি সরকারি চাকরি করে কীভাবে সরকারের বিপক্ষে এ রিপোর্ট দিতে পারো। আমি রিপোর্ট যখন ফাইনালি দিতে যাই, তার আগে ছয়বার আমাকে রিপোর্ট চেঞ্জ করতে হয়েছিল। তারপরেও উনাদের মনের মতো হয় নাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদ হত্যাকাণ্ডের ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেছেন, শহীদ আবু সাঈদের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা ছিল। আমাকে ঢাকা থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তুমি সরকারি চাকরি করে কীভাবে সরকারের বিপক্ষে এ রিপোর্ট দিতে পারো। আমি রিপোর্ট যখন ফাইনালি দিতে যাই, তার আগে ছয়বার আমাকে রিপোর্ট চেঞ্জ করতে হয়েছিল। তারপরেও উনাদের মনের মতো হয় নাই।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজুর রহমানের অপসারণ ইস্যুতে চলমান বিক্ষোভের সময় ফরেনসিক প্রতিবেদন টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। 

ডা. রাজিবুল বলেন, উনারা (ডা. মাহফুজসহ উপস্থিত অন্যান্যরা) চেয়েছিলেন আমি যেন হেড ইনজুরি দিয়ে ইউরেজোনিক শক দেখিয়ে দেই। কিন্তু আমি তাদের চাপের কাছে মাথা নত করিনি। আমার রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে ‘দ্য ডেড ওয়াজ ডিউ টু এভোব মেনশন ইনজুরিস হুইচ ওয়াজ অ্যান্টিমন্টেম অ্যান্ড হোমিসাইডাল।’

তিনি বলেন, ওই সময় ভাইস প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান চার্জে ছিলেন, স্বাচিপের নেতারা ছিলেন। আরও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন ছিলেন। তাদের সামনে আমাকে বাধ্য হয়েই রিপোর্টে সাইন করতে হয়েছিল।

ডা. রাজিবুল বলেন, সবাই ভাবতেছেন হেড ইনজুরি হেড ইনজুরি। হেড ইনজুরি হলে সাধারণত ব্রেনে রক্তক্ষরণ থাকে। ইন্টারক্রিমিনিয়াল থাকে। স্ক্যামবোল ফ্রাকচার থাকে। সাঈদের ক্ষেত্রে কিন্তু এগুলো কোনোটাই ছিল না। আমি প্রচণ্ড চাপে ছিলাম। ওই সময়টা এমন গেছে আমাকে এটাও ভয় দেখানো হয়েছে আপনার নামে গোয়েন্দা রিপোর্ট হয়ে গেছে ঢাকায়। তারপরেও আমি মাথা নত করিনি।

এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজুর রহমান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার ঘটনায় ফরেনসিক প্রতিবেদন টেম্পারিং করার জন্য তিনি চাপ দেননি বরং সঠিক রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলেছেন। আর প্রশাসনের লোক হিসেবে শুধু প্রশাসনিক সহযোগিতা দেওয়ার থাকে। প্রতিবেদন দেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আমি শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনে কোনো প্রভাব বিস্তার করিনি। বরং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষক ডা. রাজিবুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে একটি প্রভাবশালী টেলিভিশন চ্যানেলে বক্তব্যও দিয়েছেন। ডা. রাজিবুলের ফরেনসিক প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যাপারে কলেজ প্রশাসনের নয়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চাপে ছিল। কিন্তু এখন তিনি আমাদের কথাও বলছেন।

ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, গত পাঁচ বছরে রংপুর মেডিকেল কলেজে দুজন অধ্যক্ষ নিয়োগ পেয়েছেন। সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও উপাধ্যক্ষ পদ থেকে আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আমার বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিয়েই আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, গত ৩০ জুলাই আমাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। এরপর বদলিজনিত কারণে আমি ওইদিন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করি। অথচ আমার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন একটি রাজনৈতিক দলের চিকিৎসকসহ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হয়েছে ক্যাম্পাসে। বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হয় ডা. মাহফুজুর রহমানকে। চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, তিনি শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ডা. মাহফুজুর রহমান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *