ফের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়, আতঙ্কে উপকূলবাসী

ফের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়, আতঙ্কে উপকূলবাসী

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে, আর এতেই আতঙ্ক নেমেছে উপকূলজুড়ে। ‘দানা’ নামের এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলের ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার মানুষ।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে, আর এতেই আতঙ্ক নেমেছে উপকূলজুড়ে। ‘দানা’ নামের এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলের ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার মানুষ।

পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর কিছুটা প্রভাব ইতোমধ্যে উপকূলে পড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পুরো আকাশ মেঘলা, বইছে হালকা বাতাস এবং শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে উদ্বিগ্ন উপকূলের মানুষ ও কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল ঘূর্ণিঝরটি। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি. মি.-এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি. মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলবাসী বিগত বছরগুলোর দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। উপকূলের অধিকাংশ দুর্বল এবং কাজ চলমান বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। অধিকাংশ এলাকায় বহু আগে নির্মাণ করা এখানকার বেড়িবাঁধগুলো আর পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। তবে এসব বাঁধ এখন আর সামাল দিতে পারছে না ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা। জিও ব্যাগের বালুর বস্তা আর রিং বাঁধ দিয়ে কোনোরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো।

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উপকূলীয় এলাকাগুলো মধ্য কলাপাড়া উপজেলা একটি। দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে এসব এলাকা খুবই ভয়াবহ অবস্থা হয় ঘূর্ণিঝড়ের সময়।

উপকূলে বসবাস করা মানুষেরা ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে দিন পার করছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার। দুর্যোগে সাগর এবং নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে। দুর্বল বেড়িবাঁধ তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কলাপাড়ার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার দলনেতা মো. শফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরবর্তী সময়ে আমাদের সিপিপি টিমগুলো মাঠে সর্বদা কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে উপকূলের সাধারণ মানুষদের সচেতন থাকতে আমরা মাইকিংয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছি।

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে সেটি ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

কলাপারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে এমন সংবাদের পরপরই আমরা জরুরি সভা ডেকেছি। এই সভায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তবে আগের কয়েকটি দুর্যোগে অগ্রিম প্রস্তুতি থাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো গেছে। এবারও আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি।

এসএম আলমাস/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *