বাজারে ফড়িয়াদের রাজত্ব, অল্প দামে পণ্য দিতে হয় কৃষকদের

বাজারে ফড়িয়াদের রাজত্ব, অল্প দামে পণ্য দিতে হয় কৃষকদের

পটুয়াখালী পৌর নিউ মার্কেটের পূর্ব পাশে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর গড়ে ওঠা অস্থায়ী কাঁচা বাজার সেখানের সবার কাছেই পরিচিত। শহরতলীর দেশি ও তাজা শাকসবজি এনে সরাসরি কৃষকরা সেগুলো বিক্রি করেন বাজারটি বেশ জনপ্রিয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বাজারের রাজত্ব করছে ফড়িয়া অথবা মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে শাকসবজি কিনে রেখে ক্রেতাদের কাছে সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করেন তারা। এতে গ্রামীণ কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

পটুয়াখালী পৌর নিউ মার্কেটের পূর্ব পাশে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর গড়ে ওঠা অস্থায়ী কাঁচা বাজার সেখানের সবার কাছেই পরিচিত। শহরতলীর দেশি ও তাজা শাকসবজি এনে সরাসরি কৃষকরা সেগুলো বিক্রি করেন বাজারটি বেশ জনপ্রিয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বাজারের রাজত্ব করছে ফড়িয়া অথবা মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে শাকসবজি কিনে রেখে ক্রেতাদের কাছে সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করেন তারা। এতে গ্রামীণ কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর সকালে পটুয়াখালী পৌর নিউ মার্কেটের শহর রক্ষা বাঁধের ওপর (চরের রাস্তার) কাঁচা বাজারে গেলে এমন অভিযোগ তোলেন সাধারণ কৃষকরা। তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা পণ্য বিক্রি করেন ক্রয়মূল্যের দ্বিগুণ দামে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে এক হালি কাঁচা কলা ১৬ টাকা, এক আঁটি লাউ শাক ৪০ টাকা, এক আঁটি পুঁইশাক ২৫ টাকা, এক আঁটি লালশাক ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। হাত বদলে সেই এক হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, এক আঁটি লাউ শাক ৬০ টাকা, এক আঁটি পুঁইশাক ৪০ টাকা, এক আঁটি লালশাক ১৭ টাকা দরে বিক্রি করেছেন ফড়িয়ারা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বাজারে গড়ে উঠেছে একটি চক্র। যারা এ ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, মোতালেব হাওলাদার ও মো. জহির ইসলাম অন্যতম। এছাড়াও মিলন হাওলাদার, মজিবর, মিজান ও শাহ-আলমসহ অন্তত আরও ২০ জন তাদের সঙ্গে জড়িত।

সদর উপজেলার ভূরিয়া ইউনিয়ন থেকে সবজি বিক্রি করতে আসা মো. আক্কাস হাওলাদার বলেন, এই বাজারের রাজা ফড়িয়ারা। তারা আমাগো প্রজা মনে করে। ওরা যা কইবে, ওই দামেই বেচা লাগে! এক ছড়া কলা হইতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। বাজারে আনলে ফড়িয়ারা প্রতি কুড়ি কলায় ৮০ টাকা দেয়। কিন্তু তারা বিক্রি করে ৪০ টাকা হালি। গ্রাম দিয়ে আমরা শাক পাতা আনলে ওদের জন্য শান্তি পাই না। ওদের জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। বাজারে এই ফড়িয়ারা যদি না থাকে তাহলে আমরা খুচরা বিক্রি করতে পারলে লাভবান হইতাম। পাবলিকেও কম দামে খাইতে পারতো।

একই ইউনিয়নের ভায়লা গ্রামের কৃষক হালিম মুন্সি বলেন, আমরা ন্যায্য দাম পাই না। যে সবজির দাম ১০ টাকা থাকে, ওরা সেই সবজির দাম তিন টাকা বলে। ওদের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। আমরা এতো মাসের পর মাস কষ্ট কইরা যদি কেজিতে ৫ টাকা ব্যাবসা করি, ওরা খালি হাত বদল কইরা ব্যাবসা করে ১৫ টাকা।

বাজারে মিলন হাওলাদারের কাছে সবজি কিনতে আসা শামীমা আফরোজা খানম নামে এক ক্রেতা বলেন, ১৬ টাকায় এক হালি কাঁচা কলা কিনে তা ৪০ টাকা বিক্রি করবে এটা ঠিক না। তাদের উচিত ন্যায্য দামে বিক্রি করা। তারা চাইলে ২০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারতো, কিন্তু তারা সেটা করছে না। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য তারা এগুলাে করছে।

তবে অভিযোগের কথা অস্বীকার করে মিলন হাওলাদার বলেন, আমি ৪০ টাকায় কলা বিক্রি করছি না। আমি ৩০ টাকা চাইছি। আর বন্যার কারণে অধিকাংশ ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সবজির দাম বেশি। পটুয়াখালীতে বন্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এতকিছু জানি না। আমি যে দামে কিনছি সেটা আমি বিক্রি করছি।

বাজারের আরেক ফড়িয়া মো. জহির ইসলাম বলেন, আমরা কোনো সিন্ডিকেট করি না। বর্তমানে এমনি সবজি দাম বেশি। বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে যিনি আগে ১০ কেজি আনতেন, এখন তিনি আনেন দুই কেজি। আমরা যেভাবে কিনি সেভাবেই বিক্রি করি।

এ বিষয়ে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ সোয়াইব মিয়া বলেন, হাত বদলের মাধ্যমে পণ্যের যেভাবে দাম বেড়ে যাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছে। নিউমার্কেটের এই সিন্ডিকেট বন্ধে আমরা কাজ করব এবং দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

মো. রায়হান/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *