তথ্য সন্ত্রাস বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে ম্লান করে দেয়

তথ্য সন্ত্রাস বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে ম্লান করে দেয়

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, তথ্য সন্ত্রাস ও হলুদ সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে ম্লান করে দেয়। যেটি বিগত দেড় দশক ধরে দেশে বিরাজমান ছিল। আজ মুক্ত গণমাধ্যম ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে রাজপথে পেশাজীবীদের যে সরব অংশগ্রহণ ছিল সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী সেখানে ছিলেন অগ্রসেনানী। তিনি হলুদ সাংবাদিকদের প্রতিহত করতে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, তথ্য সন্ত্রাস ও হলুদ সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে ম্লান করে দেয়। যেটি বিগত দেড় দশক ধরে দেশে বিরাজমান ছিল। আজ মুক্ত গণমাধ্যম ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে রাজপথে পেশাজীবীদের যে সরব অংশগ্রহণ ছিল সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী সেখানে ছিলেন অগ্রসেনানী। তিনি হলুদ সাংবাদিকদের প্রতিহত করতে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

কিংবদন্তি সাংবাদিক নেতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের আপোষহীন যোদ্ধা, বিএফইউজের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী স্মরণে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার উদ্যোগে এ শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী রাজপথে থেকে সাংবাদিকদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে পথ দেখিয়ে গেছেন দেশব্যাপী সে ধারা অব্যাহত রেখে আর যেন কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। ৫ আগস্টের পর স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ তৈরি হয়েছে। এটিকে ধরে রাখতে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৬৫ জন সাংবাদিককে হত্যা, অনেককেই আহত এবং অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেদিন আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে গণতন্ত্রের মূলস্তম্ভ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের জাতির বিবেক হিসেবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ৪০টি বছর ধরে সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। একদিনের জন্যও পিছপা হননি। কখনও সাংবাদিক আবার কখনও পেশাজীবী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পূর্ব-মূহুর্তে যখন ঢাকার বাড্ডা, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিশুসহ গণহত্যার খবর আসে—এমনই এক দুঃসময়ে রুহুল আমিন গাজী পেশাজীবীদের নিয়ে ঢাকার রাজপথে নেমে আসেন। তার নেতৃত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে টিআর সেল ও মুহুর্মুহু গুলির মধ্যেই পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন, আমাদেরকে গুলি কর, আমাদের সন্তানদের হত্যা কর না। এভাবেই তিনি বন্দুকের গুলির সাননে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী সাংবাদিকতাকে মহান পেশা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা উল্লেখ করে বলেন, সাংবাদিকদের অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যেই অসীম সাহস নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু দেশের বর্তমান সাংবাদিকতা দলদাসে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকরা জাতির অতন্দ্র প্রহরীর পরিবর্তে পোষা কুকুরের ভূমিকা পালন করছে। এ কারণেই জাতির ঘাড়ে ফ্যাসিবাদ চেপে বসে। যার প্রমাণ খুলনার প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এ দেশের তথাকথিত সম্পাদকরা হাসিনাকে তেল মেরে মহা ফ্যাসিবাদে পরিণত করে।

তিনি বলেন, অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো পত্রিকা গড়ে উঠেছে। তারা চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকেই মানহানিকর সংবাদ পরিবেশন করছে। এতে মূলধারার সাংবাদিকতা ম্লান হচ্ছে। এ ছাড়া বগলদাবা সাংবাদিকতায় দেশ ভরে গেছে উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকতার সংস্কার দাবি জানান।

মুক্ত পরিবেশছাড়া মুক্ত সাংবাদিকতা করা যায় না উল্লেখ করে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, কতদিন আমরা মুক্ত থাকতে পারবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ আমাদের কোনো ভুলের কারণে আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে এলে তার দায়ভার আমাদেরকে বহন করতে হবে। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসনকে চিরতরে বিদায় করতে মিডিয়া কর্মীদের ভূমিকা রাখতে হবে।

কাদের গণি চৌধুরী ১৭ বছরের লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনামলে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধরীসহ অনেককেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাদের দুঃশাসনের পরিণতি একদিনেই প্রধানমন্ত্রীসহ ৩শ আসনের এমপিরা পালিয়ে গেছে। যা নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি ১৭ বছরে যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরসহ ঢাকার সাংবাদিক সাগর-রুনি এবং খুলনার সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন ও নিহত অন্যান্য শহীদদের স্মরণ করে বলেন শহীদদের অর্জন যেন কোনোভাবেই ম্লান না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কাদের গণি চৌধুরী সকলকে সতর্ক করে বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দেশে শিশু হত্যাকারীদের আর ফিরে আসতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি ফ্যাসিবাদকে যাদুঘরে পাঠানোর আহ্বান জানান।

নাগরিক শোক সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।

মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ২০১৭ সাল থেকে ১৯ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে বড় অপারেশনে তার একটি কিডনি ফেলে দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ থাকলেও তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। এমনকি কারাগারে তার কোনো চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। যে কারণে টিউমার হয়ে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৭ বছরে রুহুল আমিন গাজী রাজপথে ছিলেন। ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানেও বড় ভূমিকা ছিল তার। প্রচণ্ড অসুস্থতার মধ্যেও তিনি সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকায় পুলিশের গুলির সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। জাতির প্রয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ নিজের শরীরের দিকে খেয়াল করেননি। বিজয়ের স্বপ্ন তিনি অনেক আগেই দেখে ছিলেন। এই সময়ে তাকে খুব প্রয়োজন ছিল।

এমইউজে খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয় ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানার পরিচালনায় এ সময় স্বাগত বক্তৃতা দেন, ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বিএফইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন।

বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশের প্রতিটি সেক্টরে লুকিয়ে আছে। আমাদের কোনো ভুলের কারণে যদি ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসে তাহলে সাঈদ ও মুগ্ধরা কষ্ট পাবে। তিনি বিজয়কে দীর্ঘস্থায়ী করতে এবং বিপ্লবের সুফলকে দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমাদের অনেক বেশি দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা উল্লেখ করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন, খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি মো. আকরামুজ্জামান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, বিএফইউজের সাবেক সহসভাপতি মো. রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. এরশাদ আলী, কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মনিরুল হক বাবলু, প্রকৌশলী নেতা ইঞ্জি. মোল্লা আলমগীর হোসেন, ড্যাবের খুলনা মহানগরী সভাপতি ডা. মোস্তফা কামাল, দৈনিক প্রবর্তনের নির্বাহী সম্পাদক কে এম জিয়াউস সাদাত, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা জেলা সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, এমইউজের নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ নূরুজ্জামান প্রমুখ।

মোহাম্মদ মিলন/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *