ক্ষমতার পালাবদল : সবচেয়ে নাজুক বাফুফে, বিসিবিসহ অন্যরা কি অবস্থায়

ক্ষমতার পালাবদল : সবচেয়ে নাজুক বাফুফে, বিসিবিসহ অন্যরা কি অবস্থায়

ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। আজই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিচ্ছে। রাজনৈতিক পালাবদলের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। অনেক ফেডারেশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের খোঁজ নেই। ফলে ক্রীড়াঙ্গন বড় সংকটে পড়েছে।

ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। আজই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিচ্ছে। রাজনৈতিক পালাবদলের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। অনেক ফেডারেশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের খোঁজ নেই। ফলে ক্রীড়াঙ্গন বড় সংকটে পড়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ফেডারেশন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। শুধু এমপিই নন, তিনি সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজনও ছিলেন, ফলে জানুয়ারিতে গঠিত মন্ত্রীসভায় তার কাঁধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেওয়া হয়। তাই পট পরিবর্তনের পর পাপন অনেকটা আত্মগোপনে! তিনি কোথায় আছেন ক্রিকেট বোর্ডের কেউ জানেন না। 

গত এক দশকে ক্রিকেট বোর্ডে পাপনের পরই প্রভাবশালী ছিলেন অন্যতম পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক। পাপনের মতো চলমান পরিস্থিতিতে মল্লিকও আছেন গভীর সংকটে। গত এক দশকে কাউন্সিলরশিপ, জুনিয়র লিগে পাতানো খেলাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে মল্লিকের ওপর ক্ষোভ অনেকের।

এ ছাড়া বিসিবির শফিউল আলম নাদেল, নাইমুর রহমান দুর্জয়, আ জ ম নাসির সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জালাল ইউনুস, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, কাজী ইনাম আহমেদ, তানভীর আহমেদ টিটো সরাসরি রাজনীতি না করলেও, তারা আওয়ামীমনা হিসেবেই স্বীকৃত। তাদের কারও ভাই, বাবা কিংবা দুলাভাই আওয়ামী লীগের বড় নেতা।

আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী সমর্থিত ব্যক্তিরা গণ আক্রোশের স্বীকার হচ্ছেন। ক্রিকেট বোর্ডের অনেক পরিচালকও সেই শঙ্কায় রয়েছেন। বাস্তবিক অর্থে ক্রিকেটের তেমন উন্নয়ন না হলেও, ঠিকই আকড়ে আছেন পদ। তাই সমর্থকদেরও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাই ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বোর্ডে আসা বেশ কঠিনই। 

ফুটবল ফেডারেশনের পরিস্থিতি ক্রিকেটের চেয়েও বেশি নাজুক। পাপনের সুনির্দিষ্ট খোঁজ না থাকলেও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দেশেই রয়েছেন। তিনি শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও সরাসরি রাজনীতি করেননি। ফেডারেশন সভাপতি হিসেবে সমালোচনা-আক্রোশ থাকলেও, রাজনৈতিকভাবে তার পরিস্থিতি তেমনটা নয়।

বাফুফেতে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং তিন সহ-সভাপতি রয়েছেন বিপাকে। সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ আওয়ামী লীগের কয়েকবারের এমপি। আরেক সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নেতা। আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ব্যবসায়ী হলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। শুধু ইমরুল হাসান ছাড়া বাকি সকল সহ-সভাপতিই গভীর বিপদে রয়েছেন। বাফুফের চেকে স্বাক্ষর করেন সালাউদ্দিন, সালাম ও নাবিলের মধ্যে দুই জন। পট পরিবর্তনের ফলে সালাম-নাবিলকে পাওয়া কঠিন। ফলে ফেডারেশন একটা সংকটের দিকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে নির্বাচিত ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটির মেয়াদ চার বছর। ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩ অক্টোবর। ফিফার অনুমতি নিয়ে তিন সপ্তাহ পর ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ২৬ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্ন সাপেক্ষ। বাফুফে এক দফায় ফিফার কাছ থেকে নির্বাচনের সময় পিছিয়েছে। আরেকবার পেছানোর অনুমতি মিলবে কি না সেটাও বিষয়। নির্বাচন পূর্বনির্ধারিত ২৬ অক্টোবর হলে বর্তমান কমিটির অনেকে সংকটে পড়বেন। দেশের বিদ্যমান অবস্থায় তাদের বাফুফের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কঠিনই।

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ যুবলীগ থেকে বহিষ্কার হলেও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না হকি সংশ্লিষ্টরা। হকি ফেডারেশনের দুই নির্বাহী সদস্য রয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর। তারাও অনেকটা নিখোঁজ। হকি ফেডারেশনের আরও কয়েকজন আছেন গা ঢাকা দিয়ে।

বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন পল্টন-মতিঝিল এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা। তাই অন্য অনেকের মতো তারও কোনো হদিস নেই। তিনি আবার ভিক্টোরিয়া ক্লাবেরও সাধারণ সম্পাদক। ফেডারেশনের পাশাপাশি ক্লাবও নেতৃত্বহীনের পথে।

জাতীয় খেলা কাবাডি। গত কয়েক বছরে কাবাডি ফেডারেশনে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য। একটি ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক। সেই সাধারণ সম্পাদক পদেই ছিলেন সদ্য সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। যুগ্ম সম্পাদকও একজন পুলিশ কর্মকর্তা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই বদলি হয়েছেন ও পারিপার্শ্বিক চাপে রয়েছেন। সেই চাপের প্রভাব পড়ছে কাবাডিতেও।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগেই আলোচনায় ছিলেন দাবা ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। বিভিন্ন মাধ্যমের সংবাদ তিনি বিদেশে রয়েছেন। অন্য ফেডারেশনের মতো দাবা ফেডারেশনেও রয়েছেন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কয়েকজন।

ভলিবল ফেডারেশনও পড়েছে বিপাকে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। এই ফেডারেশনের সভাপতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুই জনই দুঃসময়ে রয়েছেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে।

ফুটবল ‍ও ক্রিকেটের বাইরে বাকি ফেডারেশনগুলোর সভাপতি সরকার মনোনীত। এতে অধিকাংশ ফেডারেশনের সভাপতিই বিপাকে আছেন। রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সাবেক মূখ্য সচিব ও সদ্য বিলুপ্ত সংসদের সংসদ সদস্য; সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কবির বিন আনোয়ার, উশু ফেডারেশনের সভাপতি আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুস সোবহান গোলাপ, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সভাপতি মোর্শেদ কামাল মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন, টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন। বর্তমান সময়ে সমালোচিত ব্যক্তি জুনায়েদ আহমেদ পলক ছিলেন ক্যারম ফেডারেশনের সভাপতি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই সভাপতিদের ফেডারেশনের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই বাস্তবিক অর্থে।

পট পরিবর্তন হলেও কয়েকটি ফেডারেশনের তেমন বিড়ম্বনা নেই। জিমন্যাস্টিক্স, আরচ্যারি, হ্যান্ডবলসহ আরও কয়েকটি। ওই সকল ফেডারেশনে রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট বা সরাসরি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নেই বললেই চলে।

ক্ষমতার পালাবদল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলের মতো ফেডারেশন-ক্লাবও দখলের চেষ্টা চলে। ইতোমধ্যে আবাহনী ও শেখ জামাল ক্লাবে ভাংচুর হয়েছে। শ্যুটিং ফেডারেশনেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। দখলের পায়তারা চলছে আরও অনেক ফেডারেশন।

নির্বাচনের আগে কমিটি রদবদল করার এখতিয়ার রয়েছে শুধু মাত্র জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠনের এষতিয়ার রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অনেক ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। অথবা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতি বা পদত্যাগের ঘটনা ঘটলে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দিয়ে কিছুদিন পরিচালনা করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা হতে পারে।

দেশের সকল ক্রীড়া স্থাপনা ও ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। মন্ত্রীসভা না থাকায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান নেই। সচিব দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রীড়া স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দিকেই আমাদের এখন সম্পূর্ণ মনোযোগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থাপনা ব্যবহারকারী ফেডারেশনগুলোকেও আইনশৃঙ্খলা সহায়তাকারীদের নাম্বার দেওয়া হয়েছে যোগাযোগের জন্য।’

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙা হচ্ছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপত্তা বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের ওপর অন্য রঙ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *