নেশায় ভাগ না দেওয়ায় ভাঙা কাঁচের বোতল দিয়ে ভাইকে হত্যা

নেশায় ভাগ না দেওয়ায় ভাঙা কাঁচের বোতল দিয়ে ভাইকে হত্যা

গাজীপুর সদরে আবু বক্কর (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ মহাসড়কের ডিভাইডারের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার সৎ ভাই হালিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হালিম নেশায় ভাগ না পেয়ে ক্ষোভে কাঁচের বোতল ভেঙে ছোট ভাইকে হত্যা করেছেন বলে জানায় পুলিশ।

গাজীপুর সদরে আবু বক্কর (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ মহাসড়কের ডিভাইডারের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার সৎ ভাই হালিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হালিম নেশায় ভাগ না পেয়ে ক্ষোভে কাঁচের বোতল ভেঙে ছোট ভাইকে হত্যা করেছেন বলে জানায় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জয়দেবপুর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ওসি বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জয়দেবপুর থানার বাঘের বাজার এলাকায় মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের মধ্যে আবু বক্করের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। 

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারে, নিহত আবু বক্কর ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার গরজা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি বাঘের বাজার এলাকায় তার সৎ ভাই হালিমের সঙ্গে থাকত। হালিম ভিক্ষাবৃত্তি করত ও আবু বক্কর টোকাই ছিল। রাতে দুই ভাই মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজের ওপর ঘুমাতো।

ওসি আরও জানান, আবু বক্করের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে জয়দেবপুর থানার পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ শুরু করে। পুলিশ প্রথমে বাঘের বাজার এলাকায় সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ দেখতে পায়, ঘটনার দিন রাত ৩টা ২২মিনিটের দিকে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে আইল্যান্ডের ভেতরে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে সে রাত ৩টা ৩৩ মিনিটের দিকে বের হয়ে ফুটওভার ব্রিজের দিকে চলে যায়।

ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফের মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে ঘটনাস্থলে কিছু সময় অবস্থান করে। পুলিশ সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবু বক্করকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই হালিমকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে বাঘের বাজার এলাকা থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে হালিমকে গ্রেপ্তার করে। হালিম পুলিশের কাছে অপরাধ স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে হালিম জানান, তার সৎ ভাই আবু বক্কর বোতল বিক্রি করতো। আবু বক্কর জুয়া ও নেশা আসক্ত ছিল। মাঝে মধ্যে হালিমের কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যেত। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বর তারা দুই ভাই ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর আসে। ওই দিন রাত ৮টার দিকে হালিম বাঘের বাজার ওভারব্রিজের ওপরে ভিক্ষা করার সময় আবু বক্কর মাদক কেনার জন্য তার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে চলে যায়। দীর্ঘ সময় পরও আবু বক্কর ফিরে না আসায় হালিম ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে তাকে খুঁজতে বের হয়ে দেখে, আবু বক্কর মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড নামের কারখানার সামনে মহাসড়কের আইল্যান্ডের ওপর বসে জুতার আঠা দিয়ে নেশা করছে। হালিম কাছে এগিয়ে গেলে তার কাছে আরও টাকা চায় আবু বক্কর। টাকা দিতে না চাইলে হালিমকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারে। এর একটু পরেই আবু বক্কর নেশার ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে হালিম পাশে পড়ে থাকা কাঁচের বোতল আইল্যান্ডের লোহার রেলিংয়ে ভেঙে ধারালো অংশ দিয়ে আবু বক্করের বুকের বাম পাশে ও বুকের ডান পাশে এলোপাথারি আঘাত করে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে বাঘেরবাজারের ফুটওভার ব্রিজের ওপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল ৬টার ঘটনাস্থলে দিকে আবু বক্করকে মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

ওসি বলেন, মামলার তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, আসামি হালিম নেশার জন্য কেনা ট্যাবলেটের ভাগ না পেয়ে রাগে ক্ষোভে পাশে থাকা কাঁচের ধারালো বোতল দিয়ে আঘাত করে আবু বক্করকে হত্যা করে। 

শিহাব খান/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *