তোফাজ্জলের চুরির বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলেন ভাবি

তোফাজ্জলের চুরির বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলেন ভাবি

মা-বাবা ও ভাইকে হারানোর পর মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের ভাবি শরীফা আক্তারই ছিলেন তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। তবে সেই ভাবিই তোফাজ্জলের সঙ্গে করেছেন ‘কুকুর-বিড়াল’র মতো আচরণ। এ ছাড়াও তোফাজ্জল সুস্থ থাকুক সেটা কখনই চাননি তিনি। এমনকি মোবাইল চুরির অপবাদের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলেন শরীফা—এমন সব অভিযোগ লিখে নিহত তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া তার নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

মা-বাবা ও ভাইকে হারানোর পর মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের ভাবি শরীফা আক্তারই ছিলেন তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। তবে সেই ভাবিই তোফাজ্জলের সঙ্গে করেছেন ‘কুকুর-বিড়াল’র মতো আচরণ। এ ছাড়াও তোফাজ্জল সুস্থ থাকুক সেটা কখনই চাননি তিনি। এমনকি মোবাইল চুরির অপবাদের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলেন শরীফা—এমন সব অভিযোগ লিখে নিহত তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া তার নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

তোফাজ্জলকে মর্মান্তিকভাবে পিটিয়ে হত্যার পর এসব তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পাড়লে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় নানান আলোচনা-সমালোচনা। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) তানিয়া তালুকদার নামের ফেসবুক প্রোফাইলে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া।

তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘তোফাজ্জেল আমার ফুফাতো ভাই + দুধ ভাই (আমরা একই মায়ের দুধ পান করে বড় হইছি)। তোফাজ্জেলকে যারা মেরে ফেলেছে তারা তো অবশ্যই খুনি!! কিন্তু আমার মতে তোফাজ্জেলের আরও দুজন খুনি অপরাধীর নামের খাতা থেকে বাদ পরে গেছে, সেই দুইজন হলো ওর (একমাত্র ভাবি এবং ভাইয়ের শাশুড়ি)। তোফাজ্জেলের পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল ছিল ওর একমাত্র ভাবি, যে কিনা ওর সাথে কুকুর-বিড়ালে মতো আচরণ করতো!! তোফাজ্জেল সুস্থ হোক সে সেটা কখনোই চায় নাই, কেন চায় নাই জানেন? কারণ তোফাজ্জেল সুস্থ হলে সমস্ত সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে!!’

তানিয়া লেখেন, ‘তোফাজ্জেলকে যখন ফজলুল হক হলের ছাত্ররা অত্যাচার করতে ছিলো, তখন অভাগাটা, নিরুপায় হয়ে ভাবিকেই কল দিতে বলেছিলো, হয়তোবা ও ভেবেছিলো ভাবির মনটা আমার জন্য একটু হলেও কাঁদবে। ওর ভাবি ফোন পেয়ে কি করেছিলো জানেন? সে মোবাইল চোরের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলো এবং এটাও বলেছিলো যে, তাকে যেন এ ব্যাপারে আর ফোন দেয়া না হয়। এই বলে রাতে ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেছিলো!!!’

ওই স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘তোফাজ্জেলের মৃত্যুর পরে একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছে ওর একমাত্র ভাবি!! সে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছে, কান্নার অভিনয় করছে, সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা সে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে। আমার একটাই প্রশ্ন, সে কোন অধিকারে নিচ্ছে? যে তোফাজ্জেল জীবিত অবস্থায় তার থেকে একটু ভালোবাসা পায় নাই, এখন আসছে গার্ডিয়ান হিসেবে। কেন একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছে জানেন? সে এখন তোফাজ্জেল মৃত্যুর বড় একটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে পারে!! ভাবি এইটুকু মাথায় রাখেন, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না, তোফাজ্জেলের এই অবস্থা পিছনে আপনিও দায়ী।’

আসমা আক্তার তানিয়ার স্ট্যাটাস দেওয়া এমন অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে নিহত তোফাজ্জলের ভাবি শরীফা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, তোফাজ্জল বেঁচে থাকলে বলতে পারতো কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। তোফাজ্জল প্রায় তিন-চার বছর আমার কাছেই ছিল। যখন কিছুটা সুস্থ ছিল তখন সে বিভিন্ন থানায় রাইটিংয়ের কাজ করেছে। পারিবারিকভাবে তোফাজ্জলের সঙ্গে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল তা মামাতো বোন দূরে বসে কীভাবে দেখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে তোফাজ্জলের বিচার করতে বলেছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ওই শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে টাকা দাবি করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন তারা। এ সময় আমি তাদেরকে বলি তোফাজ্জল মানসিক রোগী, সে কোনো চোর না, তাকে ছেড়ে দিন। এ ছাড়াও তাদেরকে বলি, যদি সে কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে আপনার আইনের আশ্রয় নেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে কয়েক দফায় তাকে মারধর করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন।

মো. আব্দুল আলীম/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *