চবির উপাচার্য নিয়োগে কলকাঠি নাড়ছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা!

চবির উপাচার্য নিয়োগে কলকাঠি নাড়ছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা!

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, উপ-উপাচার্য  (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, সকল হল প্রভোস্ট ও পুরো প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদ উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একটি বড় অংশ নানান উপায়ে কলকাঠি নাড়ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, উপ-উপাচার্য  (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, সকল হল প্রভোস্ট ও পুরো প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদ উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একটি বড় অংশ নানান উপায়ে কলকাঠি নাড়ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৫ জুলাই চবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তবে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে উল্টো ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে মৌনসমর্থন দিতে দেখা যায় প্রশাসনকে। এমনকি ছাত্রীদের রাতের আঁধারে জোরপূর্বক হল থেকে বের করে দিলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঠিকই হলে থাকতে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। তাই শিক্ষার্থীরা চান আন্দোলনকালে তাদের পাশে থাকা শিক্ষকদের মধ্য থেকে যোগ্য ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকই যেন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

এদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সমাজ হলুদ দলের আহ্বায়ক আবুল হোসাইনের নামও শোনা যাচ্ছিল উপাচার্য হওয়ার তালিকায়। শক্ত লবিংয়ের মাধ্যমে কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হলেও পুরোপুরি আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হওয়ায় তার উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহেরের নিয়োগের সময়ও ছিলেন উপাচার্য প্রার্থী। সেই সময় তিনি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সখ্যতায় উপাচার্য হতে বিভিন্ন দপ্তরে লবিং করার খবর পাওয়া যায়।

এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহও চেষ্টা চালাচ্ছেন উপাচার্য হওয়ার। শোনা যাচ্ছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একটি বড় অংশ অধ্যাপক আমির নসরুল্লাহকে উপাচার্যের পদে বসাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। গুঞ্জন রয়েছে সাদা দল থেকে সিন্ডিকেট সদস্য হওয়া অধ্যাপক ড. শামিম উদ্দিন খানকে উপাচার্য হিসেবে সুপারিশ করায় সাদা দলের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সহায়তায় উপাচার্য হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের এ অধ্যাপক।

এ ছাড়া আলোচনায় আসতে নিজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে অধ্যাপক নসরুল্লাহ দেওয়াচ্ছেন পোস্ট। এ কাজে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নীরব ভূমিকা পালনসহ নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের তালিকা থেকে নিজের নাম কাটানোর ফলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এই অধ্যাপককে উপাচার্য পদে দেখতে চান না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেমন উপাচার্য চান প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব ও নিরপেক্ষ ভিসি যাই। যিনি আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেশনজটমুক্ত করবেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবেন, ক্লাসে যাবেন। কোনো দলের হয়ে কাজ না করে দেশ ও শিক্ষার জন্য কাজ করবেন।

এদিকে ছাত্র আন্দোলনে সরব থাকায় শিক্ষার্থীরা যাদেরকে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান এ তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম।

এর মধ্যে নানা কারণে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন চবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। এ ছাড়া তিনি চবি নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ তাকে উপাচার্য হিসেবে চান। চবি অধ্যাপকদের ভোটে নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত। উপাচার্য হওয়ার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে অধ্যাপক শামীম জ্যেষ্ঠ।

উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে চবির জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের তৃতীয় সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং, এখানে বিদেশি ডিগ্রির পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতা, ছাত্রদের হ্যান্ডেল করবার কৌশল এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিদের প্রশাসনের দায়িত্ব দিলে ভালো হবে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সকল শিক্ষক ছাত্রদের পাশে ছিলেন না, থাকবার ন্যূনতম আগ্রহ দেখাননি এবং গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তারাও যদি এখন শুধু বিদেশি ডিগ্রি দেখিয়ে ভিসি হতে চায় তাহলে এটা হবে সবচেয়ে বড় দুঃখজনক ও বিব্রতকর। আমরা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক ঐক্য গঠন করেছিলাম এবং ওই আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব শিক্ষক অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের থেকে সিনিয়র-জুনিয়রের ভিত্তিতে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *