অলিম্পিক স্বর্ণজয়ীর কারিগর বাংলাদেশি কোচ!

অলিম্পিক স্বর্ণজয়ীর কারিগর বাংলাদেশি কোচ!

আর কয়েক ঘন্টা পর সারা বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনের চোখ থাকছে ফ্রান্সের রোলা গেরোর দিকে। প্যারিস অলিম্পিকের টেনিসে পুরুষ এককে স্বর্ণের লড়াইয়ে নামবেন সার্বিয়ান নোভাক জোকোভিচ ও স্পেনিশ আলকারেজ। গতকাল নারী এককে ক্রোয়েশিয়ান দোনা ভেকিককে ৬-২, ৬-৩ সেটে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেন চীনের ঝেং।

আর কয়েক ঘন্টা পর সারা বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনের চোখ থাকছে ফ্রান্সের রোলা গেরোর দিকে। প্যারিস অলিম্পিকের টেনিসে পুরুষ এককে স্বর্ণের লড়াইয়ে নামবেন সার্বিয়ান নোভাক জোকোভিচ ও স্পেনিশ আলকারেজ। গতকাল নারী এককে ক্রোয়েশিয়ান দোনা ভেকিককে ৬-২, ৬-৩ সেটে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেন চীনের ঝেং।

চীন অলিম্পিকের পদকে শীর্ষের লড়াইয়ে থাকলেও টেনিস নারী এককে কোনা চাইনিজের এটাই প্রথম স্বর্ণ জয়ের কৃত্তিত্ব। শুধু চাইনিজ নয়, এশিয়ান কোনো নারী অলিম্পিকে টেনিস একক স্বর্ণ জিততে পারেননি ইতোপূর্বে। তাই ঝেং-য়ের স্বর্ণ জয় সারা বিশ্বব্যাপী আলোচিত।

অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী চাইনিজ ঝেং-য়ের বাল্যগুরু বাংলাদেশি কোচ আক্তার হোসেন। বাংলাদেশের সাবেক টেনিস খেলোয়াড় আক্তার বেইজিং টেনিস একাডেমীতে কোচিং শেখান। সেই একাডেমীতে হাতেখড়ি ঝেং-য়ের। ভালো মানের টেনিস একাডেমীতে একজন খেলোয়াড় সুনির্দিষ্ট একজন কোচের অধীনে থাকেন। ঝেং তার ১১-১৬ বছর বয়স পর্যন্ত আক্তারের অধীনেই ছিল। ২০১৩-১৮ এই সময়কালে ঝেং অনুশীলন, চীনের বাইরে কোন টুর্নামেন্ট খেলার সিদ্ধান্ত ও তার সফরসঙ্গীও ছিলেন একমাত্র আক্তারই।

সময়ের ব্যবধানে ঝেং এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড়। বছর তিনেক আগে উইমলন্ডনে সেমিফাইনালে উঠে প্রথম তাক লাগিয়েছিলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আক্তারের শিষ্যকে। ২০২৩ সালে এশিয়ান গেমসে টেনিস এককে স্বর্ণ, ইউএস ওপেনে নারী এককে রানার আপের পর এবার অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতলেন।

আক্তারের এক সময়ের শিষ্য এখন অলিম্পিকের স্বর্ণজয়ী। তাই সুদূর বেইজিং থেকে বেশ উচ্ছ্বাস ঝরল আক্তারের কন্ঠে, ‘অলিম্পিক ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ মঞ্চ। একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি যেমন অলিম্পিকে স্বর্ণ তেমনি একজন কোচেরও। অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদ আমার স্টুডেন্ট ছিল। কোচ হিসেবে এর চেয়ে বড় অর্জন ও প্রাপ্তি কিছুই হতে পারে না।’

টেনিস খেলোয়াড়রা সময় ও পারফরম্যান্সের সঙ্গে কোচ পরিবর্তন করেন। বছর ছয়েকের বেশি ঝেং অন্য কোচদের নিয়ে কাজ করেছেন। তবে এখনো আক্তারের ঝেং ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, ‘ঝেং-য়ের ব্যস্ততা এখন অনেক বেড়েছে। ওর সঙ্গে কথা কমই হয়। তবে ওর পরিবারে সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রয়েছে। অল্প বয়সে ও যখন অস্ট্রেলিয়া আরো অনেক দেশে টেনিস খেলতে গেছে। আমিই ছিলাম ওর কোচ ও সফরসঙ্গী। তাই ওর বাবা-মা এখনো আমাকে স্মরণ করে প্রায়ই।’

ঝেং এখন টেনিস বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা। সুপারস্টার হয়েও নিজের শুরুর দিনের কথা ভুলে যান না। চাইনিজ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার উত্থান ও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বাংলাদেশি কোচ আক্তারের কথা বলেন ঝেং।

টেনিস বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় খেলা হলেও বাংলাদেশে তেমন প্রচার-প্রসার নেই। টেনিস এখনো বাংলাদেশে পেশা হিসেবে নেয়ার মতো পরিস্থিতিতে আসেনি। তাই অনেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে চীনে আসেন। বাংলাদেশের চেয়ে চীনে বাংলাদেশি টেনিস কোচের সংখ্যা বেশি। আগে অনেকে একাডেমীতে কাজ করতেন, এখন চীনে বাংলাদেশি সাবেক টেনিস খেলোয়াড়,কোচেরই নিজস্ব একাডেমী রয়েছে। তবে চীনে টেনিসে বিশেষ অবস্থান করেছেন আক্তার। তাই তাকে নিয়ে গর্ব প্রকাশ করলেন সাংহাই থেকে আরেক কোচ মিজানুর রহমান, ‘আক্তার অসাধারণ কাজ করছে। আগামীতে ঝেং-য়ের মতো আরো কয়েকজন বিশ্বতারকা উপহার দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তার। অলিম্পিক স্বর্ণজয়ীর কারিগর একজন বাংলাদেশি এতে আমরা গর্বিত।’

প্যারিস অলিম্পিকে আমেরিকার পুরুষ জিমন্যাস্টিক্স দল ২০০৮ সালের পর ব্রোঞ্জ জিতেছে। সেই দলের সহকারী কোচ বাংলাদেশের সাইক সিজার। টেনিসে নারী এককে স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদের বাল্যগুরু বাংলাদেশের একজন কোচ। বাংলাদেশ এখনো অলিম্পিকে পদক না জিতলেও অন্য দেশের পদক জয়ীদের নেপথ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদরা।

এজেড/এইচজেএস 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *