অন্য ফেডারেশনের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অধিভুক্ত ক্রীড়া সংস্থা। যদিও বিগত অনেক সময়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করত না বিসিবি। আজ (শুক্রবার) ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়নে খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি ও সংগঠকদের মতবিনিময় সভায় অবশ্য বিসিবির অংশগ্রহণ ছিল।
অন্য ফেডারেশনের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অধিভুক্ত ক্রীড়া সংস্থা। যদিও বিগত অনেক সময়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করত না বিসিবি। আজ (শুক্রবার) ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়নে খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি ও সংগঠকদের মতবিনিময় সভায় অবশ্য বিসিবির অংশগ্রহণ ছিল।
বিসিবির নতুন পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম আজকের সভায় এসেছিলেন। ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আসলেও বিশিষ্ট এই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থে সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন। ক্রিকেটার হলেও দেশের সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনের চিত্র তার ভালোই জানা। সেই উপলব্ধি থেকে ফাহিম বলেছেন, ‘ফেডারেশন-ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে এই সময়ে একবার জেতার পর কর্মকর্তারা পুনরায় জেতার ছক করেন। এতে অনেক সংগঠক মাঠমুখিই হতে পারেননি। ফলে ২-৩ প্রজন্মের সংগঠক হারিয়ে গেছে।’
ফাহিমের এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই ছিল বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপনের কণ্ঠে। ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতিকরণের মাত্রা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দলীয় বিবেচনায় পরবর্তীতে এই আমলে আমি কোনো নির্বাহী কমিটি তো দূরের কথা, কাউন্সিলর পর্যন্ত হতে পারিনি।’
ফুটবল ফেডারেশন বাদে দেশের সকল ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রথমে কাউন্সিলর হতে হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান শোনালের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা, ‘ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরশিপ ছিনতাইয়ের অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছিল।’
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জোর দাবি উঠেছে। যারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তারা এখন ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করছেন। সেটা চিহ্নিত করে রেদোয়ান বলেন, ‘আমরা ক্রীড়াঙ্গনে নিপীড়িত ছিলাম। যারা এতদিন ছিল তারা এখন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করছে, আর আমাদের দলীয় বানানোর চেষ্টা করছে। আমরা চর দখলের মতো ফেডারেশন দখল চাই না। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হোক। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই কমিটিতে আসতে চাই।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফেডারেশনগুলোর সংস্কারে অ্যাডহক কমিটি করবে। সেই কমিটিতে প্রকৃত সংগঠকদের স্থান দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘সংগঠক একটি সৃষ্টিশীল কাজ। যারা সৃষ্টিশীল তাদেরই এখানে আসা উচিৎ, তথাকথিত ধান্দাবাজ নয়।’
ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়নে মতবিনিময় সভা হলেও বক্তব্য প্রদান করা অনেকেই ফেডারেশন কর্তাদের প্রতি অভিযোগ তুলেছেন, কখনও আবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেও বঞ্ছনার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম কয়েকবারই সংক্ষিপ্ত আকারে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য প্রত্যাশার কথা বললেও খুব একটা লাভ হয়নি। অপ্রয়োজনীয় ও একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি হয়েছে কয়েকবারই।
আজকের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তারই মূলত সুনির্দিষ্ট আকারে একটি বিষয়ের উত্থাপন করেছেন। অনেক খেলায় ৪০ বছরের বেশি হলে খেলা যায় না। দাবা, ব্রিজ এমন খেলা যেখানে অনেক বয়স পর্যন্ত খেলা যায়। দাবা খেলোয়াড় থাকাবস্থায় ফেডারেশনের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে একটি বাধা রয়েছে। সেই বাধা নিরসন চান গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত, ‘দাবা ফেডারেশনের কমিটিতে দাবার জ্ঞানসম্পন্ন লোক প্রয়োজন। দাবা খেলোয়াড় যদি আসতে পারেন সেক্ষেত্রে খুব ভালো হয়। দাবা ও ব্রিজের মতো খেলায় খেলোয়াড়দের কমিটিতে আসার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম দরকার। কারণ এই দুই খেলা মৃত্যুর আগপর্যন্তই খেলা যায়।’
রাগবি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মওসুম আলী মন্ত্রণালয়ের তথ্য-ফলাফল নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বছর তথ্য প্রকাশ করে কোন জাতের চালের উৎপাদন কত। আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কখনও এটি করেনি, এক বছরে কতজন খেলোয়াড় মাঠে নামল এবং কোন ফেডারেশনের কী অর্জন।’
বাংলাদেশে সর্বমোট ফেডারেশন ৫৫টি। সকল ফেডারেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক হওয়া উচিৎ নয়। এই প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘অনেক খেলার লক্ষ্য থাকবে পদক অর্জনের, আবার কিছু খেলায় অংশগ্রহণের। যে খেলায় পদক অর্জন সম্ভব নয়, সেই খেলাকে আমাদের অগ্রাহ্য করলে চলবে না। সেই খেলার অংশগ্রহণকেও গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি উপদেষ্টাকে আরেকটি দিক আকর্ষণ করে বলেন, ‘খেলাধুলায় ক্রীড়া সামগ্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের শীর্ষ খেলোয়াড়রাই মূলত সেরা সামগ্রী ব্যবহার করে। নিচের স্তরের খেলোয়াড়দেরও ভালো উন্নত মানের সামগ্রী প্রয়োজন। বিদেশ থেকে সব সময় অধিক মূল্যের সামগ্রী আনা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশেই ক্রীড়া সামগ্রী তৈরি হলে সেটা অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।’
ভলিবল, কুস্তি, দাবা, আরচ্যারি, জিমন্যাস্টিক্স, ভারোত্তোলন, খো খো, তায়কোয়ান্দো, প্যারা অলিম্পিকের সাধারণ সম্পাদক এসেছিলেন। সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে থেকে শুধু প্যারা অলিম্পিকের মাকসুদই বক্তব্য রেখেছেন। ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণী সভা হলেও অনেকে শুধু একটি খেলার উন্নয়ন-সীমাবদ্ধতা নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। ভলিবল থেকে তিনজন বক্তব্য রাখলেও অন্য ফেডারেশন/খেলার অনেকে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেও পায়নি। পুরো অনুষ্ঠানে একমাত্র বিদেশি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার।
এজেড/এএইচএস