সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন উপলক্ষে প্রায় ১০ বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ‘জমাট বেঁধে থাকা বরফ’ ভাঙার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।
সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন উপলক্ষে প্রায় ১০ বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ‘জমাট বেঁধে থাকা বরফ’ ভাঙার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।
মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনের বিরতিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে এ কথা বলেছেন তিনি। ওই দিন ছিল সম্মেলনের প্রথম দিন। ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্করসহ অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরা আগের দিন সোমবার ইসলামাবাদে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আজ ১৬ অক্টোবর শেষ হবে সম্মেলন।
এর আগে পাকিস্তানে ভারতের কোনো মন্ত্রীর সর্বশেষ সফর হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফর ছিল সেটি। সেই সফরের গত প্রায় ১০ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখলেন ভারতের কোনো মন্ত্রী।
সফরের কয়েক দিন আগে অবশ্য এক সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে এ সফরে শুধু এসসিওর সম্মেলনেই মনযোগ দেবেন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কোনো বৈঠক হবে না।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এ প্রসঙ্গে আতাউল্লাহ তারার বলেন, “ইসলামাবাদ কিংবা নয়াদিল্লি— কোনো পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য পরস্পরের প্রতি অনুরোধ জানায়নি…কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে তার (জয়শঙ্কর) সফর দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে জমাট বেঁধে থাকা বরফ ভাঙার একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। গতকাল যখন সব সদস্যরাষ্ট্রের নেতাদের আমরা স্বাগত জানালাম এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেললালেন— আমি মনে করি যে এটি বিশ্বকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।”
মঙ্গলবার ইসলামাবাদে পৌঁছানোর পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জয়শঙ্কর। ওই দিন অতিথিদের সম্মানে শেহবাজ শরিফের দেওয়া নৈশভোজেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
উপমহাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই বৈরী। তবে এই সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলোয়ামায় ভারতীয় সেনা সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার হামলার পর থেকে। সেই হামলায় অন্তত ৪০ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন।
সেই হামলার পর প্রথমে পাকিস্তানের বালাকোটে ঝটিকা অভিযান চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। তারপর ওই বছরই আগস্টে জম্মু-কাশ্মিরের সাংবিধানিক স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা বাতিল করে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল পাকিস্তান; কিন্তু ভারত তা আমলে নেয়নি।
আবার ভারতও গত বেশ কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, কিন্তু সবসময়েই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইসলামাবাদ। ফলে, পারস্পরিক্ত তিক্ততা ও অবিশ্বাসের জেরে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে গত কয়েক বছরে।
প্রসঙ্গত, এসসিও বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা। মোট ৯টি দেশ এই জোটের সদস্য। এই সদস্যরাষ্ট্রগুলো হলো রাশিয়া, চীন, ভারত,পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই জোট।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ