২০ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান, বছরে আয় ২৫ লাখ

২০ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান, বছরে আয় ২৫ লাখ

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই এসএসসি পাঠ চুকিয়ে নেমে পড়েন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইয়ে। প্রথমদিকে আম ও পেয়ারার ব্যাবসা দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন আতিউজ্জামান আপেল। তিনি ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মাল্টার বাগান। এ ছাড়া মাল্টা গাছের সঙ্গে মিশ্র ফলন হিসেবে লাগানো হয়েছে কমলা, বানানা ম্যাংগো, বারি-৪ ও কাজি পেয়ারা। সারি সারি মাল্টা গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রঙের মাল্টা। মাল্টার ভারে গাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই এসএসসি পাঠ চুকিয়ে নেমে পড়েন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইয়ে। প্রথমদিকে আম ও পেয়ারার ব্যাবসা দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন আতিউজ্জামান আপেল। তিনি ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মাল্টার বাগান। এ ছাড়া মাল্টা গাছের সঙ্গে মিশ্র ফলন হিসেবে লাগানো হয়েছে কমলা, বানানা ম্যাংগো, বারি-৪ ও কাজি পেয়ারা। সারি সারি মাল্টা গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রঙের মাল্টা। মাল্টার ভারে গাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে উঁচু জমিতে এই মাল্টা বাগান করা হয়েছে। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় সবুজ ও হলুদ রঙের মাল্টা ঝুলে আছে। এলাকার লোকজন মাল্টা বাগান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। বাগানে আসা লোকজন বলছেন, মাল্টা খেতে অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি।

মাল্টা চাষি আতিউজ্জামান আপেল বলেন, আমি ২০০৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিই। তারপরে সর্বপ্রথম পেয়ার ও বারি-৪ বাগান নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০১২-১৩ সালের দিকে বারি-৪ এ আমি সফলতা পাই। তারপরে ২০২০ সালে আমি ৩৫ বিঘা জমি লিজ নিই। এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করি এবং ২০ বিঘা জমিতে মাল্টার গাছ রোপণ করি। তারপর ২০২১ সালে অল্প পরিমাণে ২৫ থেকে ৩০ ক্যারেটের মতো মাল্টা পাই।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত এই প্রজেক্টে ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে এবং আশা করছি ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা পাবো। অর্থাৎ এ বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মতো আয় হবে। এ ছাড়া গত ২০২২ সালেও ২০ লাখ টাকা মতো লাভ হয়েছিল।

যারা মাল্টা চাষ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা মাল্টা চাষ করতে চান তাদেরকে সর্বপ্রথম জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিটা যেন ভালো হয় এবং মাটিটি যেন বেলে-দোঁআশ হয়। দ্বিতীয়ত চারা ভালো হওয়া লাগবে। এ ছাড়া নিয়মিত পরিচর্যা করা লাগবে। সার-বিষ নিয়মিত দিতে হবে।

ক্রেতাদের দেশি জাতীয় ফল মাল্টা কেনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশি মাল্টা বাইরের মাল্টার চেয়ে অনেক সুস্বাদু। আমরা এই মালটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, বাইরের মাল্টার প্রতি ঝুঁকে পড়েছি। আমাদের এই মাল্টায় কোনো ফরমালিন জাতীয় কিছু নাই। আপনারা নিশ্চিন্তভাবে এই ফল খেতে পারবেন। তা ছাড়া আমরা এই ফলের ঠিকভাবে বাজার মূল্য পাচ্ছি না অথচ বাইরের মাল্টা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। তাই আপনারা দেশি ফল খান এবং আমাদের পাশে থাকুন।

বাগানে মাল্টা কিনতে আসা ব্যাপারী ইব্রাহিম আলী বলেন, আমি এই বাগান থেকে মাল্টা কিনে ঢাকা-লক্ষিপুর-সিলেট-চট্রগ্রামে পাঠাই। প্রতি দিন ৪০ থেকে ৫০ ক্যারেটের মতো মাল্টা কিনি। এই বাগানের মাল্টা কালারে ভালো ও সুস্বাদু এবং মিষ্টি।

মাল্টার বাগানে কাজ করা শ্রমিক আজিজুর রহমান বলেন, আমরা ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক মাল্টার বাগানে কাজ করি। বিষ, প্যাকেটিং ও কাটিংসহ বিভিন্ন কাজ করি। দেশি মাল্টা খেতে অনেক সুস্বাদু।

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সলেহ আকরাম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল তথা নাচোল উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর মাল্টার বাগান রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই বাগানগুলো বারি-১ জাতের মাল্টার বাগান। কিছু ভিয়েতনামি ও হলুদ মাল্টা চাষ হয়। চাষীদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা মাল্টার বাগান করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়া মাল্টা ফলটি আগে বিদেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণে আমদানি করতে হতো। এখন এই দেশীয় মাল্টা চাষ করায় আমদানির চাহিদা পূরণ করছে।

তিনি আরও বলেন, নাচোল উপজেলার চাষিদেরকে বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে উন্নত জাতের চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার ও বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছি। এ ছাড়া চাষিদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি, বারি-১ মাল্টা যেটি রয়েছে সেটি যেন অক্টোবর মাসে হারভেস্ট করে। অনেক চাষি জুলাই ও আগস্ট মাসে হারভেস্ট করে তখন কিন্তু পূর্ণ মিষ্টতা আসে না। তাই চাষিদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার ফলে অনেকেই এখন অক্টোবর মাসে মাল্টা হারভেস্ট করছে। আশার কথা হচ্ছে, আমাদের নাচোলে একটি ফল বাজার গড়ে উঠেছে যার ফলে সারা দেশেই সহজে ফলগুলো পাঠানো সহজ হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা বাগান পরিদর্শন করে ফল কিনতেও পারছেন। এতে এই উপজেলার অর্থনীতিতে ব্যাপকহারে ভূমিকা রাখছে।

মো. আশিক আলী/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *