২০০ গরুকে লাম্পি স্কিন রোগের টিকা দিলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

২০০ গরুকে লাম্পি স্কিন রোগের টিকা দিলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ শতাধিক খামারি কৃষককে গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, লাম্পি স্কিন রোগের টিকাদান, উন্নতজাতের ঘাসের বীজ বিতরণ এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পিএইচডি শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২০০ গরুকে লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিতরণ করে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হয়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ শতাধিক খামারি কৃষককে গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, লাম্পি স্কিন রোগের টিকাদান, উন্নতজাতের ঘাসের বীজ বিতরণ এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পিএইচডি শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২০০ গরুকে লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিতরণ করে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হয়।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল গ্রামে বন্যা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত পশুচিকিৎসা সহায়তা ও টেকসই খাদ্য কর্মসূচি’ শীর্ষক এ কর্মসূচি গ্রহণ করে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

দিনব্যাপী এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাকশীমূল গ্রামের প্রায় ২০০ খামারিকে উন্নত জাতের অস্ট্রেলিয়ান সুইট জাম্বু হাইব্রিড ঘাসের বীজ ও পাকচুং ঘাসের কাটিং সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ২০০টি গরুকে লাম্পি স্কিন রোগের টিকা দেওয়া হয়। অভিজ্ঞ প্রাণী চিকিৎসকরা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করেন।

ক্যাম্পেইনে বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের মাছ চাষ, পশুপালন ও ঘাস চাষ নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক লিফলেট প্রদান করেন। বাকৃবির পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ১১ সদস্যের টিমের পরিচালনায় এ ক্যাম্পেইন সম্পন্ন হয়।

ক্যাম্পেইনে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– বিকন বাংলাদেশ, আজিমুর রোকিয়া রহমান ট্রাস্ট, ব্রাদারস অব ল্যাব ’৯৫, এগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বিডি এবং বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. বিমল চন্দ্র কর্মকার বলেন, আমরা দেখেছি যে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই উপজেলায় বন্যা-পরবর্তী সেবা দেওয়ার জন্য অনেকেই এসেছেন। কিন্তু গবাদিপশুর ক্ষতি যে পরিমাণ হয়েছে সেগুলোর সেবা প্রদান কার্যক্রম ছিল খুবই অপ্রতুল। সেই লক্ষ্যেই আমরা ও কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে এই অবলা প্রাণীদের সেবা প্রদানের জন্য এ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছি। যাতে করে এ এলাকার গবাদিপশুগুলো সুস্থ থাকে এবং এ এলাকার মানুষদের নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক-১ কৃষিবিদ মো. মাহমুদুন্নবী মিঠু বলেন, বুড়িচং উপজেলায় যে বন্যাটি হয় সেটি ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানির ঢলের কারণে। এ পানিতে মাছের ছত্রাকজনিত জীবাণু থাকতে পারে। শীতকালে যখন তাপমাত্রা কমে যাবে তখন পুকুরে মাছের ক্ষতরোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে। এ রোগের প্রতিরোধের জন্য শীত আসার আগেই পুকুরে শতক প্রতি ৩০০ গ্রাম লবণ ও ২৫০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষি অর্থনীতিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়াবার লক্ষ্যে গবাদিপশু, মৎস্য খামার, ফসলসহ লাভজনক উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশসম্মত জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে হবে।

ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ অমিত কুমার বসুনিয়া বলেন, ক্যাম্পেইনে আমরা গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদনের জন্য যে উন্নতজাতের হাইব্রিড ঘাসটি খামারি কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করছি এ ঘাসটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি একবার রোপণ করলে ৪-৫ বছর পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রতি প্যাকেটে ১ কেজি করে ঘাসের বীজ রয়েছে যা দিয়ে ৩ বিঘা পতিত জমিতে চারা উৎপাদন করা যাবে।

ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ মো. মোর্শেদ হাসান মোস্তফা বলেন, এটি একটি ভিন্ন ধরনের সেবামূলক ক্যাম্পেইন কর্মসূচি। অন্যান্য ক্যাম্পেইনে যেটা হয় যে ত্রাণ দেওয়া বা কর্মসূচির পর সেটির আর কোনো খোঁজ-খবর রাখার সুযোগ হয় না। কিন্তু আমাদের এই কর্মসূচিতে যেসব খামারি কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের সবার তালিকা রয়েছে যাতে পরবর্তীতে যেকোনো পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হয়।

কর্মসূচিতে ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোর্শেদ হাসান মোস্তফার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক মো. মাহমুদুন্নবী মিঠুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার, বুড়িচং উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিকুর রহমান এবং বাকশীমূল আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মফিদুল ইসলাম।

কর্মসূচিতে ১১টি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব পরিবারের মধ্যে ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিতরণ করা হয়। বাকশীমূল গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘ছাগল পাইয়া আমি অনেক খুশি। স্যারদের আল্লাহ ভালো করুক। উনারা আমাদের জন্য একটা সিঁড়ি তৈরি করে দিয়ে গেল, যাতে এই ছাগল পালার মাধ্যমে আমরা ওই সিঁড়ি বাইয়্যা উঠবার পারি।’

কর্মসূচিতে অংশ নেন বাকৃবির পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক-২ ডা. শংকর বিশ্বাস, সদস্য ডা. শাহিদা আখতার, সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম এবং কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ।

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *