হাত ঘুরলেই দাম বাড়ে ইলিশের

হাত ঘুরলেই দাম বাড়ে ইলিশের

বরিশালের কালাবদর নদীতে জাল ফেলে মোট ছয়টি ইলিশ পেয়েছেন মাঝবয়সী জসীম। পাঁচটি জাটকা সাইজের হলেও একটি কেজি ওজনের বেশি। আনন্দে মন ভরে গেল তার। দেরি না করে জলদি বৈঠা ফেলে ঘাটে ফিরে আসেন। ততক্ষণে সূর্য উঠে গেছে। কয়েকজন পাইকারও হাজির বাজারে। মাছগুলো এনে বড় থালায় ঢেলে দিলেন। পোর্ট রোড বাজারের মনির বড় মাছটি নিয়ে পাশের একটি দোকানে মেপে দেখলেন এক কেজি চারশ গ্রামের কিছু বেশি। খুব দরদাম করে ১৮০০ টাকায় মাছটি মনিরকে দিতে রাজি হন জসীম।

বরিশালের কালাবদর নদীতে জাল ফেলে মোট ছয়টি ইলিশ পেয়েছেন মাঝবয়সী জসীম। পাঁচটি জাটকা সাইজের হলেও একটি কেজি ওজনের বেশি। আনন্দে মন ভরে গেল তার। দেরি না করে জলদি বৈঠা ফেলে ঘাটে ফিরে আসেন। ততক্ষণে সূর্য উঠে গেছে। কয়েকজন পাইকারও হাজির বাজারে। মাছগুলো এনে বড় থালায় ঢেলে দিলেন। পোর্ট রোড বাজারের মনির বড় মাছটি নিয়ে পাশের একটি দোকানে মেপে দেখলেন এক কেজি চারশ গ্রামের কিছু বেশি। খুব দরদাম করে ১৮০০ টাকায় মাছটি মনিরকে দিতে রাজি হন জসীম।

গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) এভাবেই দিনের শুরু বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাটে নৌকার বহরে বসবাসকারী মান্তা সম্প্রদায়ের জসীম উদ্দিনের। এই প্রতিবেদককে বিড়বিড় করে তিনি বলেন, ‘আরও দুই-একশ টাকা পাইতে পারতাম। তাহলে পাইকারে ব্যবসা করবে কী?’  

এদিকে ঘণ্টাখানেক অন্যান্য জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনে ১০টার মধ্যে পোর্ট রোড ফিরে আসেন মনির। সব কিছু প্রস্তুত করে খুচরা বিক্রি শুরু করেন বেলা ১১টার দিকে। অল্পক্ষণের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় সেই বড় মাছটি। মনির এবার প্রতিবেদকের কাছে দাম জানাতে অসম্মতি জানান। তবে মনিরের কাছ থেকে মাছটি কিনেছেন নগরীর বসুন্ধরা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মামুন। তিনি জানালেন ৩২০০ টাকায় কিনেছেন। মামুন বলেন, ২২৫০ টাকা দরে কিনেছি। দেড় কেজির কাছাকাছি আর নদীর মাছ। এজন্য দাম একটু বেশি পড়েছে।

শুধু একদিনই নয় প্রতিদিনই আহরণকারীদের কাছ থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয় ইলিশের। প্রতি ধাপেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হয় দাম। খাজনা, পরিবহন খরচ, শ্রমিকের মজুরি আর লাভের কথা মুখে বললেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

জেলেদের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চারটি হাত ঘুরে একজন ক্রেতার হাতে ইলিশ যায় বলে জানালেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের দালাল বাজার মাঝিরচরের বাসিন্দা আল আমিন। তিনি বিভিন্ন চরের জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে স্পিডবোট বরিশাল জেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।

তিনি জানান, এলসি সাইজের (৭০০-৮০০ গ্রাম) প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি করেছেন ৬৬ হাজার টাকা। কেজি হিসেবে যা দাঁড়ায় ১৬৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি করেছেন ৭৪ হাজার টাকা। কেজিতে যা দাঁড়ায় ১৮৫০ টাকা। ১২০০ গ্রাম ওজনের প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি করেছেন ৭৮ হাজার টাকা। কেজিতে যা দাঁড়ায় ১৯৫০ টাকা। দেড় কেজি ওজনের ইলিশের প্রতিমণ বিক্রি করেছেন ৯০ হাজার টাকায়। কেজিতে যা দাঁড়ায় ২২৫০ টাকা।

আড়ত থেকে মাছ কিনে খুচরা বিক্রি করছেন কবির খান। তিনি জানান, এলসি সাইজের (৭০০-৮০০ গ্রাম) প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি করছেন ১৮৫০ টাকায়। প্রতিমণ যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। এক কেজি ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি করছেন ১৯০০ টাকা। মণ হিসেবে যা দাঁড়ায় ৭৬ হাজার টাকা। ১২০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি করছেন ২১০০ টাকায়। মণ হিসেবে যা দাঁড়ায় ৮৪ হাজার টাকা। দেড় কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি করছেন ২৫০০ টাকা। যা মণ হিসেবে দাঁড়ায় ১ লাখ টাকায়।

তবে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নে চর বাংলার বাসিন্দা মোতালেব মাঝি জানিয়েছেন, কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। যা মণ হিসেবে হয় ৪৮ হাজার টাকা। ১২০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, যা মণ হিসেবে দাঁড়ায় ৫৬ হাজার টাকা। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা, যা মণ হিসেবে দাঁড়ায় ৬৪ হাজার টাকা। এসব মাছ কখনো সড়ক পথে ঢাকায় পাঠান, তবে অধিকাংশ সময় ভোলার ব্যবসায়ীরা ট্রলার থেকে কিনে নিয়ে আসেন।

এদিকে একাধিক আড়তদারের সঙ্গে আলাপ করলেও তারা কত টাকায় প্রতিমণ মাছ কিনে কত টাকায় বিক্রি করছেন তা জানাতে রাজি হননি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শারমিন সুলতানা বলেন, থিওরেটিক্যাল যে বাজার ব্যবস্থা আছে আমাদের দেশে সেই পলিসির বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধরনের একটি বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর কারণ এখানকার ব্যবসায়ীরা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্যবসা করছেন। বাজার পলিসি সর্ম্পকে তাদের ধারণা নেই। ব্যবসায়ীরা যে পণ্যের চাহিদা বেশি সেটি মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অল্পতে লাভবান হন।

তিনি বলেন, ইলিশ সকল শ্রেণি-পেশার কাছে সমাদৃত। এই কারণে অনৈতিকভাবে এর মার্কেটিং চেইন ভেঙে উচ্চমূল্য আদায় করতে বিভিন্ন পলিসি ব্যবহার করা হয়। ফলে ইলিশের বাজারে সব সময়ে অস্থিরতা বিরাজ করে। এমন অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর নয় বলে মনে করেন শারমিন সুলতানা।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাজারে নদীর মাছ আসছে। আবহাওয়া ক্ষণে ক্ষণে খারাপ হওয়ায় জেলেরা সাগরে থাকতে পারছেন না। তারা সাগরের মাছ ধরতে না পারায় বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবারহ কম আছে। এজন্য দাম কিছুটা বেশি। সাগরের মাছ আসতে শুরু করলে ইলিশের দাম কমে আসবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে আবার ক্রেতা চাহিদাও বাড়ছে।

আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *