হজরত আদম ও মুসা আ.-এর মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছিল

হজরত আদম ও মুসা আ.-এর মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছিল

মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম আ. ও বনী ইসরাঈলের নবী হজরত মুসা আ.-এর মাঝে কথোপকথন বা বাদানুবাদের বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে। হাদিসের বিখ্যাত কিতাব বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে—

মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম আ. ও বনী ইসরাঈলের নবী হজরত মুসা আ.-এর মাঝে কথোপকথন বা বাদানুবাদের বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে। হাদিসের বিখ্যাত কিতাব বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে—

মুসলিম শরিফে ইসহাক ইবনু মূসা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মূসা, ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আনসারী রহ. সূত্রে বর্ণিত … আবূ হুরায়রা রা. বলেন,

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম আলাইহিস সালাম ও মূসা আলাইহিস সালাম তাঁদের প্রতিপালকের কাছে তর্কে অবতীর্ণ হলেন। আদম আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালাম-এর উপর বিজয়ী হলেন।

মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি তো সেই আদম আলাইহিস সালাম যাকে আল্লাহ তায়ালা আপন হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মাঝে তিনি তাঁর রুহ ফুঁকে দিয়েছেন, তিনি তাঁর ফিরিশতাদের মাধ্যমে আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং তাঁর জান্নাতে আপনাকে বসবাস করতে দিয়েছেন। এরপর আপনি আপনার ভুলের কারণে মানুষকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছেন।

আদম আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি তো সেই মূসা আলাইহিস সালাম যাকে আল্লাহ তায়ালা রিসালাতের দায়িত্ব ও তার কালামসহ বিশেষ মর্যাদায় মনোনীত করেছেন এবং আপনাকে দান করেছেন ফলকসমূহ (তাওরাত কিতাব), যাতে সব কিছুর বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে এবং একান্তে কথোপকথনের জন্য অন্যান্যকে নৈকট্য দান করেছেন। আচ্ছা আমার সৃষ্টির কত বছর আগে আল্লাহ তায়ালা তাওরাত লিপিবদ্ধ করেছেন বলে আপনি দেখতে পেয়েছেন? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, চল্লিশ বছর আগে। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি তাতে একথা পেয়েছেন, আদম তাঁর প্রতিপালকের নির্দেশ অমান্য করেছে এবং পথ হারা হয়েছে। (মুসা) বললেন, হ্যাঁ।

আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর আপনি আমাকে আমার এমন কাজের জন্য কেন তিরস্কার করছেন যা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগে আল্লাহ তায়ালা আমার উপর নির্ধারণ করে রেখেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর বিজয়ী হলেন। (মুসলিম, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস : ৬৫০৩ )

হাদিসের মূল কথা হলো, হজরত মুসা আ. আদি পিতা আদম আ.-কে তার নিজেকে ও আদম সন্তানকে জান্নাত থেকে বের করার জন্য দোষারোপ করেছিলেন। তার দোষারোপের জবাবে আদম আ. তাকে বলেছেন—

আমি আপনাদের জান্নাত থেকে বের করিনি। বরং সেই মহান সত্ত্বাই (আল্লাহ তায়ালা) জান্নাত থেকে বের করেছেন, যিনি একটি গাছের ফল খাওয়ার সঙ্গে আমার বহিষ্কার সংশ্লিষ্ট ও নির্ধারিত করে রেখেছিলেন। আর যিনি তা সংশিষ্ট করে রেখেছিলেন তিনি তা আমার সৃষ্টির আগেই লিপিবদ্ধ ও নির্ধারণ করে রেখেছেন, তাই আপনি আমাকে এমন কাজের জন্য দোষারোপ করছেন যার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এতটুকু বলা যায় যে, আমাকে সেই গাছের ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু আমি তা খেয়ে ফেলেছিলাম। এরসঙ্গে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া আমার কাজ নয়। তাই আপনাদেরকে ও আমার নিজেকে জান্নাত থেকে আমি বের করিনি। তা ছিল সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালার কুদরতের লীলাখেলা। এতে আল্লাহ তায়ালার হেকমত রয়েছে। এমন জবাবের মাধ্যমে আদম আ. মুসা আ.-এর ওপর বিজয়ী হয়েছিলেন।

মুসা আ.-এর ওপর আদম আ.-এই জয় লাভের কারণ কয়েকটি হতে পারে। প্রথমত আদম আ. মুসা আ.-এর থেকে বয়োজেষ্ঠ ও প্রবীণ। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর কারণ হলো আদম আ. হলেন তাঁর আদি পিতা। কেউ আবার বলেছেন, তাদের দুজনের শরীয়ত ছিল ভিন্ন ভিন্ন।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *