স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যা : সাবেক এমপি লাবুসহ ৭৭ জনের নামে মামলা

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যা : সাবেক এমপি লাবুসহ ৭৭ জনের নামে মামলা

২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর বিএনপির ডাকা হরতালের সময় ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার মিনার গ্রামের বাসিন্দা মারুফ মাতুব্বর (২২)। এ ঘটনার দীর্ঘ ১১ বছর পর মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মারুফের মা ছালেহা বেগম (৬৪) বাদী হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭নং আমলি আদালত ফরিদপুরে মামলা দায়ের করেছেন।

২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর বিএনপির ডাকা হরতালের সময় ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার মিনার গ্রামের বাসিন্দা মারুফ মাতুব্বর (২২)। এ ঘটনার দীর্ঘ ১১ বছর পর মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মারুফের মা ছালেহা বেগম (৬৪) বাদী হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭নং আমলি আদালত ফরিদপুরে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক মারুফ সরকার। আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির ফরিদপুরের এক উপপরিদর্শক।

তিনি বলেন, আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আদালতের কাগজ হাতে পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

এ মামলায় ৭৭ জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবুকে। অন্য উল্লেখযোগ্য আসামির মধ্যে রয়েছেন- নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নগরকান্দা উপজেলা সদরে অবস্থিত সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন মিয়া, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া ও তার ভাই তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিয়া, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির হোসেন মিয়া, ফুলসুতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আরিফ হোসেন, নগরকান্দা পৌর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিঠু, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ফকির, নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজামান বাবুল কাজী ও সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর, নগরকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর আলামিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরান হোসেন প্রমুখ।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, তৎকালীন সময়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেন আসামিরা। এ সময় মারুফ শেখের বুকে ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহাদাব আকবরের হুকুমে কাটা রাইফেল দিয়ে  দিয়ে মারুফের বুকে গুলি করেন নগরকান্দা পৌর যুবলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিঠু। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মারুফ। হামলায় সাইফ মুন্সি নামে আরও একজন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন।

মামলার এজাহারে আসামিদের কর্মকাণ্ডের বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, মামলার আসামি ফুলসুতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আরিফ হোসেন তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে এ মামলার সাক্ষী সামাদ মুন্সীর বুকে গুলি করেন। এ ছাড়া নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও নগরকান্দা মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির বর্তমান প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন মিয়া তার হাতে থাকা কাটা রাইফেল দিয়ে এ মামলার অপর সাক্ষী সাইফ মুন্সীকে গুলি করেন। গুলিতে তার বাম হাতের বাহুর একপাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এ কারণে বর্তমানে সাইফ মুন্সী ও সামাদ মুন্সী পঙ্গু হয়ে আছেন।

ছালেহা বেগম মামলার এজাহারে আরও বলেন, ছেলের হত্যার পর থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি এবং পুলিশ জানায় এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে আর কোনো মামলা হবে না। এরপর অনেকবার থানায় মামলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি।

এ মামলার আইনজীবী একেএম হাবিুবুর রহমান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭নং আমলি আদালত ফরিদপুরে এ মামলার আবেদন করা হলে বিকেল ৪টার দিকে আদালতের বিচারক মারুফ সরকার মামলাটি গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে আত্মগোপনে থাকায় সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয়েছে তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, মামলার অন্য আসামিদের ভূমিকার ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে পিস্তল দিয়ে গুলি করেছি, বাস্তবতা হলো ওইদিন আমি সেখানে উপস্থিতই ছিলাম না।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। মিথ্যা বিবরণ দিয়ে মামলা করে এভাবে ফাঁসানোর কোনো মানে হয় না।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা নগরকান্দা পৌর এলাকার জুঙ্গুরদী মোড়ে জড়ো হন। তারা গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ পিকেটারদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে পিকেটাররা তিন দিক থেকে পুলিশের সদস্যদের ঘেরাও করেন। তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নগরকান্দা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মারুফ মাতুব্বর ঘটনাস্থলেই মারা যান।

জহির হোসেন/এমজেইউ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *