নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেই পরিচালক-মহাপরিচালকসহ চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই আতঙ্কে কর্মস্থলে আসছেন না। মুঠোফোনে একাধিক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, জীবন নিয়ে তারা ভয়ে আছেন। হাসপাতালে এলে হামলার শিকার হতে পারেন ভেবে তারা ঘরবন্দি হয়ে আছেন।
নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেই পরিচালক-মহাপরিচালকসহ চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই আতঙ্কে কর্মস্থলে আসছেন না। মুঠোফোনে একাধিক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, জীবন নিয়ে তারা ভয়ে আছেন। হাসপাতালে এলে হামলার শিকার হতে পারেন ভেবে তারা ঘরবন্দি হয়ে আছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) সরেজমিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক সরকারি হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য থেকে শুরু করে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ, পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকসহ সিনিয়র চিকিৎসকদের বেশির ভাগই আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) অনুসারী। চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় ও শাখার নেতৃস্থানীয়রাও গা ঢাকা দিয়েছেন।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রশাসনিক ভবনের চতুর্দিকেই যেন শুনশান নীরবতা। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকসহ উপ-উপাচার্যদের কেউই হাসপাতালে আসেনি। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা কখনো কোনো সরকারের দালালি করিনি, আমরা সবসময় মিডিয়া রিলেটেড কাজ করি। কিন্তু আমরাও এখন আতঙ্কে আছি, কখন কী হয়। আমরা অবিলম্বে অফিসে ফিরতে চাই। যারা এতোদিন রাজনীতি নিয়ে পড়েছিল, যারা সরকারের দালালি করেছে তাদের যা হয় হোক কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা তো এর ফল ভোগ করব না।
তিনি আরও বলেন, উপাচার্য স্যারসহ প্রশাসনিক ভবনে কেউই ঢুকতে পারেনি, সবার রুম তালাবদ্ধ। অনেকে ভয়েই আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ভেঙে পড়বে, চিকিৎসকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এদিকে দেশের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অধিদপ্তরের সিডিসির লাইন ডিরেক্টর, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালকসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখা গেছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) সহ এই দপ্তরের বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের সেবাদান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে রাজধানীর ছয়টি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে সেখানে একজন পরিচালককেও দেখা যায়নি। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালেও সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। এই হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকেও পাওয়া যায়নি। কর্তব্যরত জানান, পরিচালক হাসপাতালে আসেননি।
এদিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন, অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বাবু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজল কুমার কর্মকার, অধ্যাপক ডা. আতাউল হক, সহযোগী অধ্যাপক আশ্রাফুল হক সিয়ামসহ একাধিক চিকিৎসকের কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়।
জনস্বাস্থ্যবিদরা অভিযোগ করছেন, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশব্যাপী চলা সংঘর্ষে অসংখ্য আহত মানুষ এবং বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্তরা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তাদের বিশেষজ্ঞ ও উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু দেশের ক্রান্তিলগ্নে হাসপাতালগুলোর একচেটিয়া চেয়ার দখলকারী চিকিৎসকরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
এসব প্রসঙ্গে জানতে সদ্য শেখ হাসিনা সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব হাসপাতালেই এখন একই অবস্থা। আমি নিজেও তো এখন মন্ত্রীতে নাই। দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সামনে কী হবে কিছুই এখন বলা যাচ্ছে না। সবার মধ্যেই একটা ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে, আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করণীয় নেই।
টিআই/এমএ