সেনাবাহিনীর যে বার্তা পেয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা

সেনাবাহিনীর যে বার্তা পেয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে জারি করা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় বিপুলসংখ্যক জনতার নেমে আসার ঘটনায় প্রাণহানি এড়ানোর কৌশল নেয় সেনাবাহিনী। এমনকি বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে গিয়ে সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে জানান, তিনি দেশজুড়ে যে কারফিউ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে সৈন্যরা অপারগ।

তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, সামরিক বাহিনী আর তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে আর সমর্থন দিতে পারবে না সেনাবাহিনী। সে সময়েই শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় সেনাপ্রধানের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন বিমান ও নৌবাহিনীর দুই প্রধান এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। সেই বৈঠকে কর্মকর্তারা সেনাপ্রধানকে জানান, বর্তমানে বিক্ষোভ যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে সেনাবাহিনীর পক্ষে তা থামানো একপ্রকার অসম্ভব।

পরের দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী জনতার। মিছিল শুরু হওয়ার একঘণ্টা আগে গণভবনে আসেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক। শেখ হাসিনাকে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীকে জনবিক্ষোভ প্রতিরোধ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, তা পালনে তার সেনারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে; কারণ পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করার পরামর্শও দেন তিনি।

সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্রথমদিকে এই পরামর্শ মানতে একেবারেই নারাজ ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তার ছোটবোন শেখ রেহানাকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে বলেন সেনাপ্রধান এবং শেখ হাসিনাকে বোঝানোর অনুরোধ জানান।

কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হওয়ার পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেনাপ্রধান। জয়ের সঙ্গে কথা বলার পর দেশত্যাগে সম্মত হন শেখ হাসিনা। সেসময় নিরাপদে গণভবন থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের হাতে সময় ছিল এক ঘণ্টারও কম।

রোববার সন্ধ্যায় যখন সেনাবাহিনীর অনলাইন বৈঠক চলছিল, সে সময় কারফিউ জারি ছিল দেশজুড়ে। বৈঠকে জ্যেষ্ঠ সেনাকর্মকর্তারা জানান, সেনারা সাধারণ জনসাধারণের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পরের দিন গণভবনের বৈঠকে সামরিক বাহিনীর এই বার্তাটিই শেখ হাসিনাকে দেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

অনলাইন বৈঠকের প্রসঙ্গে আর কোনো তথ্য জানাননি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী। তবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শাখাওয়াত হোসেন রয়টার্সকে বলেছেন, সেনাদের মাঝে ব্যাপক অস্বস্তি ছিল।  সম্ভবত এজন্যই চিফ অব আর্মি স্টাফের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। কারণ, সেনারা ব্যারাকের বাইরে এবং তারা দেখতে পাচ্ছিলেন কী ঘটছে। 

সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, কারফিউ জারির আগে সেনাবাহিনীর এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যদের জনজীবন রক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, কর্মকর্তাদেরকে ধৈর্য প্রদর্শন করতে বলা হয়। এতে প্রথমেই যে ইঙ্গিত মেলে তা হলো সেনাবাহিনী সহিংস প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে শক্তিপ্রয়োগ করবে না।

ফলে তখন থেকেই শেখ হাসিনা ঝুঁকিতে পড়েছিলেন। সোমবার কারফিউ অমান্য করে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানের মতো জ্যেষ্ঠ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রাজপথে নেমে পড়েন। তিনি বলেন, আমাদেরকে থামায়নি সেনাবাহিনী। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেনাবাহিনী সেটাই করেছে।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ/এসএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *