পঞ্চগড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ নৌকা ডুবিতে ৭২ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় পরিবারগুলোর এখনো শোক কাটেনি। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে ঘটে সেই ভয়াবহ ঘটনা। আগামী ২ অক্টোবরের মহালয়া উৎসব উদযাপন উপলক্ষ্যে এবার আগাম সতর্কতা হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পঞ্চগড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ নৌকা ডুবিতে ৭২ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় পরিবারগুলোর এখনো শোক কাটেনি। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে ঘটে সেই ভয়াবহ ঘটনা। আগামী ২ অক্টোবরের মহালয়া উৎসব উদযাপন উপলক্ষ্যে এবার আগাম সতর্কতা হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বোদা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রস্তুতিমূলক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার আগে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা আউলিয়া ঘাট পরিদর্শন করেন। সভায় জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, পঞ্চগড় সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন জিহান, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বক্কর ছিদ্দিক, উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুল বাসেত, বদেশ্বরী মন্দিরের প্রধান সেবক মুকুল বকসী, পূজা উৎসব কমিটির আহ্বায়ক পরেশ চন্দ্র বর্মণ, বড়শশী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমসহ নৌকা ডুবির ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
মহালয়া উৎসবকে জাঁকজমকভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, মন্দির কমিটি ও ছাত্র সংগঠন আলোর পথে বাংলাদেশ থেকে ১০০ জন করে স্বেচ্ছাসেবী নিযুক্ত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিরলস দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মহালয়া উৎসবটি পালিত হবে।
জানা যায়, প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক একটি বোদেশ্বরী মন্দির। এটি বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর ওপারে বড়শশী ইউনিয়নে অবস্থিত। ইংরেজ আমলে কোচ বিহারের এক রাজা ৩৫ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট মন্দিরটি নির্মাণ করেন। হিন্দু পুরাণের স্কন্দ অনুযায়ী, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাতে দেবী দুর্গার দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়েছিল। যেখানে যেখানে দেবী দুর্গার শরীরের খণ্ড পড়েছিল, সেই জায়গাকে পীঠ বলা হয়। মন্দিরের দেয়ালে ঝুলানো একটি চার্টে ৫১টি পীঠ স্থানের উল্লেখ রয়েছে। বদেশ্বরীর এই পীঠে এখনো সংরক্ষিত আছে দেবী দুর্গার গোড়ালি। মহাপীঠ মন্দিরটি এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করায় প্রতি বছর মহালয়া উৎসব ঘিরে বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নে হাজারো পুর্ণ্যার্থী যোগ দিয়ে থাকেন।
২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বোদার মাড়েয়া ইউনিয়নে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নদী পার হতে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে পূজা অর্চনা করতে যাচ্ছিলেন শতাধিকের বেশি যাত্রী। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, নদীর স্রোত এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে নৌকাটি মাঝপথে ডুবে যায়। এ ঘটনায় অনেককে উদ্ধার করা গেলেও প্রাণহানি ঘটে ৭২ জনের। বিগত সরকারের আমলে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক রেলমন্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে ওই ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন। পরের বছর ব্রিজের কাজের উদ্বোধন হয়। বর্তমানে সেটির কাজ চলমান রয়েছে।
প্রস্তুতিমূলক সভায় নিহত পরিবারগুলো এখনো তাদের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে জানায়। তারা জানায়, নৌকাডুবির ঘটনায় অনেকের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।
এসকে দোয়েল/কেএ