সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা

সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা

দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবলী সাদিকের নামে আরও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরের দিকে শিবলি সাদিকসহ আওয়ামী লীগের ৬৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে নবাবগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। নিজের ছেলে ও ছেলের দুই বন্ধুকে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেন তিনি।

দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবলী সাদিকের নামে আরও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরের দিকে শিবলি সাদিকসহ আওয়ামী লীগের ৬৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে নবাবগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। নিজের ছেলে ও ছেলের দুই বন্ধুকে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেন তিনি।

এর আগে, গত ৫ আগস্ট হাকিমপুর পৌর শহরে সাবেক পৌর মেয়র জামিল হোসেনের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া দুই যুবককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা, লাশ গুম ও হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগে মো. সুজন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১৯ আগস্ট সকালে হাকিমপুর থানায় মামলা করেন।

সোমবার হওয়া হত্যা মামলার বাদী রবিউল ইসলাম নবাবগঞ্জ উপজেলার উত্তর শ্যামপুর গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। এই মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন—দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজওয়ার মোহাম্মদ ফাহিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান (মানিক), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম সবুজ, দপ্তর সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা জামাল বাদশা। এই মামলায় আরও অনেককে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে নবাবগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর বিনোদনগর ইউনিয়নে কাঁচদহ সেতুর উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজ দূরে করতোয়া নদীতে ১ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ইজারা নেওয়া একটি বালুমহাল ছিল। সে সময় ওই বালুমহালের দায়িত্বে শিবলী সাদিকের অধীন মামলার আসামিদের অনেকে ছিলেন। বাদী রবিউল ইসলামের বড় ছেলে রিমন ইসলাম (২২) ওই বালুমহাল থেকে বালু তোলার ট্রাক্টরের হিসাব রাখার কাজ করতেন। আর সেখানে শ্রমিকের কাজ করতেন রিমন ইসলামের বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম (৩০) ও সাব্বির রহমান (২৩)। তারা তিনজনই ওই বালুমহালের ঘরে থাকতেন। বালু বিক্রির ট্রাক্টরের হিসাব নিয়ে রিমন ইসলাম ও তার দুই বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে মামলার ২ নম্বর আসামি শাহিনুর রহমান সবুজের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় শাহিনুর ইসলাম ওই তিনজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে বিষয়টি রিমন ইসলাম তার বাবাকে জানান।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের ৩০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বির  কাঁচদহ বালুমহাল থেকে একটি মোটরসাইকেলে নবাবগঞ্জ বান্নি মেলায় ঘুরতে যায়। মেলা শেষে রাতে ওই তিনজন বান্নি মেলা থেকে কাঁচদহ বালুমহালের উদ্দেশে মোটরসাইকেলে রওনা দেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে তারা উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নে নবাবগঞ্জ-কাঁচদহ পাকা সড়কে কৃষ্ণপুর এলাকায় পৌঁছলে শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে আসামি জিয়াউর রহমান, তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে শাহিনুর রহমান কুড়াল দিয়ে রিমনের মাথায় কোপ দেন। এ সময় কিবরিয়া চিৎকার দিলে ৩ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমান হাঁসুয়া দিয়ে কিবরিয়ার গলা ও বুকে কয়েকটি কোপ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, একপর্যায়ে মামলার আসামি তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী হাঁসুয়া, কুড়াল ও লোহার রড দিয়ে সাব্বির রহমানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকেন। রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বিরের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আসামিরা তাদের মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিহতের পরিবার ওই তিনজনের মরদেহ শনাক্ত করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ওই সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করার সাহস পাননি। সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের পরিকল্পনায় আসামিরা ওই তিনজনকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাওহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২২ সালে ৩১ মার্চ তিনজনকে হত্যার অভিযোগে রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩০ মার্চ দিবাগত রাতে রিমন ইসলাম, কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির রহমানের মৃত্যুর ঘটনাটিকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বলে চালিয়ে দেন নবাবগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের নির্দেশে নিহত তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে দাফনের জন্য তাদের পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে নিহতদের পরিবার অভিযোগ করেছেন।

ইমরান আলী সোহাগ/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *