সাবেক এমপি বাহারের সঙ্গে জেলা বিএনপি নেতার ছবি নিয়ে তোলপাড়

সাবেক এমপি বাহারের সঙ্গে জেলা বিএনপি নেতার ছবি নিয়ে তোলপাড়

কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহারের সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসীম উদ্দিনের কয়েকটি ছবি নিয়ে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুধু বাহারের সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গেও এই বিএনপি নেতার সখ্যতার বেশ কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে গেল কয়েকদিনে। 

কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহারের সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসীম উদ্দিনের কয়েকটি ছবি নিয়ে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুধু বাহারের সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গেও এই বিএনপি নেতার সখ্যতার বেশ কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে গেল কয়েকদিনে। 

সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার ভারত পালানোর গুঞ্জন রটার পর থেকে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতা জসীমের বিভিন্ন সময়ের তোলা ছবিগুলো ভাইরাল হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 

বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা যে সীমান্ত দিয়ে পালানোর গুঞ্জন রটেছে। বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিনের নির্বাচনী আসন ওই সীমান্ত এলাকায়। 

নেটিজেনরা ছবিগুলো ভাইরাল করে প্রশ্ন তুলছেন—তবে কি বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিনও বাহার-সূচনাকে ভারতে পালাতে সহায়তা করেছিলেন?

এমন কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ উদ্দিন সবুজ। বিশদ লেখার ওই পোস্টে তিনি বাহার-সূচনাকে ভারত পালাতে জসীম উদ্দিন সহায়তা করেছেন বলে দাবি করেছেন। যার স্ক্রিনশট ঢাকা পোস্টের সংরক্ষণে আছে। পরে ঢাকা পোস্টকে ওই ফেসবুক পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদল নেতা সবুজ।

অপরদিকে এসব বিষয় নিয়ে কুমিল্লার স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। কুমিল্লার প্রাচীন পত্রিকা সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় ‘বিএনপি নেতাদের সহায়তায় পালালেন ওরা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হলে মহানগরের এক বিএনপি নেতা পত্রিকার সম্পাদকসহ তিন সাংবাদিকের নামে মামলা করেন। 

ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর একটিতে বাহাউদ্দীন বাহার ও বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিনসহ কয়েকজনকে একটি নদীর ওপর নৌকার মতো কিছু একটাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছবিতে বিএনপি নেতা জসীম ও বাহাউদ্দীন বাহারকে অট্টহাসিতে মেতে থাকতে দেখা গেছে। বিএনপি নেতা জসীম থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, হলুদ টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ ও চোখে কালো সানগ্লাস পরে থাকতে দেখা গেছে। বাহাউদ্দীন বাহারকে নরমাল ফুল প্যান্ট, হাফ শার্ট পরে থাকতে দেখা গেছে। ছবিটি দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, তারা কোনো ট্যুরে যাচ্ছেন। তবে ছবিটি ঠিক কবে তোলা হয়েছিল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভাইরাল হওয়া অপর একটি ছবি গত ৯ মার্চ কুমিল্লা ক্লাবের সামনের। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হওয়ার পর বিকেলে কুমিল্লা ক্লাবের সামনে যান তাহসিন বাহার সূচনা। এ সময় খুশিতে বাবা বাহাউদ্দীনকে জড়িয়ে ধরেন।  এ সময় কেউ একজন সে ছবিটি ধারণ করেন। বাবা-মেয়ের আলিঙ্গনের ওই ছবিটিতে দেখা যায় পেছনে একটু দূরেই (কুমিল্লা ক্লাবের দরজার সামনে) দাঁড়িয়ে আছেন বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিন। তার পরনে সাদা ফুলহাতা শার্ট, কালো প্যান্ট ও চোখে চশমা ছিল। এই ছবিটি তখনই কেউ কেউ পোস্ট করেছিলেন তাদের ফেসবুকে। 

এ ছাড়াও ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায়, কোনোটিতে কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ জাহেরকে মিষ্টি খাওয়ানোর, কোনোটিতে আবার বুড়িচং উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান আখলাক হায়দারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার। 

ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেন সারা দেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। 

কুমিল্লার সর্ব মহলে গুঞ্জন চলছে, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা অবৈধভাবে ভারতে পালিয়েছেন। গত ২৯ আগস্ট বুড়িচং উপজেলার চড়ানল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যান বাহারকন্যা সূচনা। তার ১০ দিন আগেই এই সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছিলেন সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার। ধাপে ধাপে বাহারের শতাধিক নেতাকর্মীও পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। গুঞ্জন রটেছে, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তারা ভারতে পাড়ি জমান। আর এর নেপথ্যে সহযোগিতায় কুমিল্লা বিএনপির জনৈক নেতার যোগসাজশ রয়েছে বলে মুখে মুখে আলোচনা চলছে। তবে বিএনপির সেই নেতাদের নাম জানা যায়নি। 

হাজি জসীম উদ্দিন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনে বিএনপি থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। জসীম উদ্দিনের বাড়ি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকায়। 

বিএনপির নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মে মাসে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিতে হাজি জসীম উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়। এখন পর্যন্ত সেই পদে বহাল আছেন তিনি। বিএনপির একটি পক্ষের নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপির জেলা কমিটির এত বড় পদ পাওয়ার পর জসীম উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীদের সঙ্গে দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় হাজি জসীম উদ্দিন ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার বাইরে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের একজন সাধারণ কর্মীকে মামলা-হামলায় জর্জরিত করলেও জসীম উদ্দিন ছিলেন সেসব থেকে একেবারেই নিরাপদ। 

সূত্রটি আরও বলছে, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহেরের সঙ্গেও ছিল এই বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠতা। সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহেরকে মিষ্টি খাইয়ে দেওয়ার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। 

এ ছাড়াও, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান আখলাক হায়দারের সঙ্গে দারুণ সখ্যতা ছিল বিএনপি নেতা জসীমের। এ দুজনের বিভিন্ন সময়ের ঘনিষ্ঠতার কয়েকটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সভায়ও আওয়ামী লীগ নেতা আখলাক হায়দারের পাশাপাশি মঞ্চে বসে হাস্যরসে মেতে থাকার কয়েকটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। 

সাবেক আইনমন্ত্রী, কুমিল্লা-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর সঙ্গেও গোপন আঁতাত ছিল জসীম উদ্দিনের। দুজনের একসঙ্গের কয়েকটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। 

ভাইরাল সেসব ছবির বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজি জসীম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কুমিল্লা ক্লাবের একজন সদস্য। বাহার (সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার) সাহেবও একজন সদস্য। কুমিল্লা ক্লাব থেকে আমাদের একটা ট্যুর ছিল থাইল্যান্ডে। আমার ছবিটি ভাইরাল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেই ছবিটি থাইল্যান্ডে তোলা। উনি (সাবেক সংসদ সদস্য বাহার) একজন পলিটিশিয়ান, আমিও একজন পলিটিশিয়ান। আমাদের মধ্যে তো ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। আমি ২৮ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছি। আমার প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আরেকটি ছবিও কুমিল্লা ক্লাবের সামনের। আমি ক্লাবের ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখি বাহার সাহেব ও সূচনা আলিঙ্গন করছেন। এ সময় কেউ একজন ছবিটি তুলেছেন। 

সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহেরকে মিষ্টিমুখের ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাহের সাহেব প্রথমবার যখন স্বতন্ত্র থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি আমার বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসে আমাকে খাইয়েছিলেন। ছবিটি তখনকার। 

এ ছাড়া বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অন্য নেতাদের সঙ্গে ভাইরাল ছবি নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে সেখানে গিয়েছেন তিনি। তার ছবিগুলো সেসব অনুষ্ঠানে তোলা।

জসীম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমি ২৮ বছর বিএনপির রাজনীতি করছি। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করতে করতে আজ একটি পর্যায়ে এসেছি। এই ২৮ বছরে এক দিনও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ ছিল না। এখনও আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র বন্ধ নেই। আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি। দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় রাজনীতি করি। 

এ বিষয়ে বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করি না। ফেসবুকে আমার কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নেই। আপনি যে ছবিগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলো আমি দেখিনি। তবে ছবিগুলো যদি আমাদের নজরে আসে তাহলে অবশ্যই আমরা সাংগঠনিকভাবে তার (জসীম উদ্দিনের) কাছ থেকে এসব বিষয়ে জানতে চাইব। 

আরিফ আজগর/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *