সন্তানের শোক আর ঋণের বোঝা নিয়ে দিশেহারা মা সুফিয়া

সন্তানের শোক আর ঋণের বোঝা নিয়ে দিশেহারা মা সুফিয়া

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর এলাকার আবুজর শেখ (২৩)। অল্প কিছু টাকা নিজেদের থাকলেও চিকিৎসার বেশিরভাগ টাকা ঋণ করে খরচ করতে হয়েছে। একদিকে আবুজর শেখের মৃত্যুর শোক, অন্যদিকে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখন দিশাহারা আবুজর শেখের পরিবার। ১৯ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত আবুজর শেখকে চিকিৎসা করাতে ১২ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর এলাকার আবুজর শেখ (২৩)। অল্প কিছু টাকা নিজেদের থাকলেও চিকিৎসার বেশিরভাগ টাকা ঋণ করে খরচ করতে হয়েছে। একদিকে আবুজর শেখের মৃত্যুর শোক, অন্যদিকে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখন দিশাহারা আবুজর শেখের পরিবার। ১৯ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত আবুজর শেখকে চিকিৎসা করাতে ১২ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মেলান্দহ পৌরসভার পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামের প্রয়াত তারা মিয়ার ছেলে আবুজর শেখ। ছয় বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর দুই ভাই আর বিধবা মায়ের অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দিতে আবুজর ঢাকায় পাড়ি জমান জীবিকার সন্ধানে। ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় একজনের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। দুই ভাইয়ের সংসারে স্ত্রী সন্তান থাকলেও বিধবা মা সুফিয়া বেগমের ভরন পোষণের দায়িত্ব পড়ে অবিবাহিত ছোট ছেলে আবুজর শেখের উপর। বাড়িতে দুই ভাইয়ের ঘর তুলার ফলে জায়গা কমে গেলে অন্য দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় বাড়ির পাশে ঘর তোলার জন্য জায়গা ক্রয় করা হয় আবুজর শেখের নামে। সেখানে ঘর তোলার জন্য ইটও কেনা হয়, আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সব শেষ। চলতি বছরের ১৯ জুলাই হঠাৎ মোবাইলের মাধ্যমে পরিবার খবর পায় আন্দোলনে গিয়ে আবুজর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। খবর শুনেই শঙ্কা হারিয়ে ফেলেন আবুজর শেখের বিধবা মা সুফিয়া বেগম। কারফিউ চলমান আর সব ধরনের গণ-পরিবহন বন্ধ থাকায় উপজেলা থেকে ঢাকায় পৌছা অসাধ্য হয়ে পড়ে আবুজর শেখের পরিবারের। তবে বিদেশগামী একজন প্রবাসীর গাড়ি করে ঢাকায় পৌঁছান আবুজর শেখের মা বিধবা সুফিয়া বেগম ও ভাই শহিদুল ইসলামকে।

কান্না জড়িত কণ্ঠে সুফিয়া বেগম বলেন, হাসপাতালে আমার ছেলে বলছে মা আমারে বাঁচাও, যত টাকা লাগে আমারে বাঁচাও, সব টাকা আমি পরিশোধ করবো, আমারে বাঁচাও। ঋণ করে আমার অন্য দুই ছেলে চিকিৎসা করছে। তাও আমার বাবা দুনিয়া ছাইড়ে গেলোগা। 

ছেলে হত্যার বিচার সুষ্ঠু বিচার চান বিধবা সুফিয়া বেগম। আবুজরের দুই ভাই চিকিৎসার জন্য ঋণ করে ১২লক্ষ টাকা খরচ করেছেন বলেও জানান তিনি।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আবুজর শেখকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে। চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিলে রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে আবুজরের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতির দিকে গেলে চিকিৎসকেরা অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেট্রোপলিটন হাসপাতালে আবারও অস্ত্রোপচার করা হলে আবুজরের শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে ২৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে মারা যান। 

পরে মরদেহ বাড়িতে এনে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আবুজর শেখকে চিকিৎসা করানো জন্য ১২ লক্ষ টাকাও বেশি খরচ হয়েছে দাবি পরিবারের। এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় তার পরিবারকে। একটি রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নগদ ২ লক্ষ টাকা ও অন্য আরেকটি রাজনৈতিক সংগঠন থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

আবুজর শেখের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আমার আর মায়ের হাত ধরে আবুজর বলেছে ভাই যত টাকা লাগে আমাকে বাঁচাও। ভাইয়ের কথা শুনে আমাদের আর কোনও দিশা ছিলো না। বিভিন্ন মানুষের হাতে পায়ে ধরে ঋণ করে টাকা নিয়ে ভাইয়েরে চিকিৎসা করছি। কিন্ত আল্লাহ তারে রাখে নাই। ঋণের যে টাকাগুলা, সেই সময় কত টাকা ঋণ হইতেছে সে চিন্তা করিনাই, ভাইরে চিকিৎসা করাইতে হবে এই চিন্তা ছিলো মাথার মধ্যে। মানুষের কাছে থেকে কান্নাকাটি করে হোক, যেমনে হোক হাতে পায়ে ধরে টাকা নিছি। ভাই মারা যাওয়ার পর দাফন করে হিসাব করে দেখি অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। 

সঞ্চয়ের কিছু টাকা হাতে ছিলো, গরু ছিলো, আবু জরের ঘর তোলার জন্য ইট কেনা ছিলো সব কিছু বিক্রি করার পরও ৯ লক্ষ টাকা ঋণ আছে। এর মধ্যে একজনই আমাদের কাছে ৫ লক্ষ টাকা পায়। আরও অনেকেই টাকা পায় তারা ফোন করে, বাড়িতে আসে, টাকার জন্য চাপ দেয়। আমাদের আশা ছিলও সরকার আমাদেরকে হেল্প করবে। এর জন্য পাওনাদারদের থামায়ে রাখছি। আর যদি সরকার না দেয় তাহলে আমাদের বাড়িঘর বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ভাই মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করায় সংসার চালানো অনেক কষ্ট হয়ে গেছে।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম আলমগীর বলেন, আবুজর শেখের পরিবারকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। তার মা সুফিয়া বেগমকে বিধবা ভাতার কার্ডের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনও সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেলে তাদের দেওয়া হবে।

মুত্তাছিম বিল্লাহ/এমএসএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *