বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। স্থিতিশীলতা ফেরানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট কাটানো ও সংস্কারের দাবি মেটানোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। স্থিতিশীলতা ফেরানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট কাটানো ও সংস্কারের দাবি মেটানোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সরকারকে শীঘ্রই কিছু অগ্রগতি দেখাতে হবে।
বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে গত পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তার সরকারেরও পতন হয়। কোটা সংস্কারের দাবি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফায় পরিণত হয়েছিল। আর তাতে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ৬০০ মানুষের, যাদের একটি বড় অংশ শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক।
তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ হলেও রাজপথ শান্ত হয়নি। বরং ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই নানা ইস্যুতে রাজপথ দখল হচ্ছে।কখনো রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে সমাবেশ করছে, কখনো সংখ্যালঘুরা তাদের অধিকারের দাবিতে রাজপথ দখলে নিচ্ছেন, কখনো শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছেন৷ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও আন্দোলন করছেন৷ পুলিশ বা সরকারের তরফ থেকে এসব কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার কোনো ঘটনা দেখা যায়নি।
সর্বশেষ হঠাৎ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে বিক্ষোভ দেখা গেছে ঢাকার রাজপথে। তাদের দাবি, আগাম সতর্ক না করেই বাঁধ খুলে দেওয়ার মাধ্যমে ভারত এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে নতুনদিল্লি এক বিবৃতিতে তা অস্বীকার করেছে।
স্থিতিশীলতা ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে কিছুক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখাতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের দিকে তাদের মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড.আলী রীয়াজ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ যেটা, সেটা হচ্ছে দেশে এক ধরনের স্থিতিশীলতা তৈরি করা৷ চ্যালেঞ্জটা দাঁড়িয়েছে দুটো কারণে। এক নম্বর কারণ হচ্ছে গত ১৫ বছর ধরে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষোভ, দাবি-দাওয়া, প্রত্যাশা, আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে। তারা সকলেই চাইছেন যেন এখনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগুলো বিবেচনায় নেন এবং তারা সেগুলোর সমাধান চান৷ তাতে করে যেটা হচ্ছে যে, সকলেই এক ধরনের চাপ দিচ্ছে। সেই চাপটার এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, যা স্থিতিশীলতার জন্য খুব ইতিবাচক নয়।’’
প্রফেসর রীয়াজ বলেন, ‘‘আপনাকে বুঝতে হবে যে, আকাঙ্খাগুলো আছে৷ কারণ হচ্ছে, তারা চাইতে পারছেন৷ এটুকু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে- সেটা ইতিবাচক। কিন্তু চাপগুলোর ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমও খানিকটা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে৷ এটা হচ্ছে একটা কারণ।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদও আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকে নতুন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘এখনো পুরোপুরি সেটা সামাল দেয়া হয়নি৷ সেটা আমার মনে হয় একটা বড় বিষয় হয়ে থাকবে। দ্বিতীয়টি কোনো সন্দেহ নেই মূদ্রাস্ফীতি কত তাড়াতাড়ি কমানো যায়।এবং অর্থনীতির কাঠামো কত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে- সেটা আমার কাছে মনে হয় একটা বড় বিষয়।”
‘‘এর সঙ্গে দ্বিতীয় যেটা বিষয় সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ কত তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট করতে পারবে। কারণ প্রথম দুটোর সঙ্গে জড়িত তৃতীয়টা,” যোগ করেন তিনি।
পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে চায় সরকার
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি গত বছর মে মাসে বিকল্প বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরার সময় বলেছিল যে, ৫০ বছরে দেশ থেকে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। সে হিসেবে গড়ে বছরে অন্তত ২৪ হাজার কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। আর ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি (জিএফআই)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ২০০৯-২০১৫ সময়কালে মোট অন্তত ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৯১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে এবং বিনিয়োগের পথ সৃষ্টির পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গত বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ড. ইউনূস পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা চান।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পুনর্গঠনের কাজে লাগাতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রফেসর ইমতিয়াজ এই বিষয়টির দিকে আলোকপাত করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অর্থপাচারের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন যে, ব্রিটেন থেকে কীভাবে এই টাকাটা আনা যায়। এবং গতকালকেই একটা অনুষ্ঠানে আমার সাথে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের কথা হচ্ছিল; তিনি বলছিলেন অত্যন্ত জটিল।তখন আমি বললাম যে টাকাটা ঢুকতে সহজ, বের হতে যদি জটিল হয় তাহলেতো মানুষের মধ্যে ভিন্ন ধারনা শুরু হবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকেও নানাভাবে দুর্বল করে দেয়া বিগত বছরগুলোতে। ফলে অর্থনীতির সংস্কার নানাভাবে দরকার বলে মত তাদের৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, অচিরেই সুদের হার বাড়ানো হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আরো তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু ২০ আগস্ট একদিনেই প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
প্রফেসর রীয়াজ বলেন, ‘‘ব্যাংকিং সেক্টরটার দিকে যদি দেখেন কিংবা ধরুন জ্বালানি খাতের দিকে যদি দেখেন, সর্বত্রই সুবিধাভোগীদের সুবিধা দেয়ার ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত এক ধরনের ভেঙ্গেই পড়েছে৷ এটা দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে৷ সেগুলো পুনর্গঠন করা অর্থনৈতিকক্ষেত্রে৷ প্রশাসনিকক্ষেত্রে পুর্নগঠন করতে হবে, কোথাও কোথাও সংস্কার করতে হবে৷”
সুষ্ঠু নির্বাচনের আগে সংস্কারে মনোযোগী প্রফেসর ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছেন যে, সবকিছু সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে৷
ঢাকার একটি হোটেলে কূটনীতিকদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা৷ তবে এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে৷”
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে৷ এই দেশের পুনর্নির্মাণের জন্য আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি৷’’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে তার প্রতি জনসমর্থন রয়েছে৷ ফলে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল আগাম নির্বাচন চাইলেও তা গুরুত্ব পাবে না৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় বড় আকারের সংস্কার দরকার৷ যেটা দেখা দরকার সেটা হচ্ছে আমি মানুষের প্রতিনিধিত্বটা আনতে পারছি কিনা৷ এবং পৃথিবীতে আমার মনে হয় প্রচুর মডেল আছে, বিভিন্ন ধরনের মডেল আছে সেগুলো দেখা দরকার৷ তবে আমি মনে করি যে বড় ধরনের যদি সংস্কার না হয়, ঐ একইভাবে যদি আমরা নির্বাচনে যাই, তাহলে দেখা যাবে যে আমরা ঘুরেফিরে ঐ মনোনয়ন বাণিজ্যের দিকে চলে যাচ্ছি৷ ঐ ব্যবসায়ীরাই রীতিমত রাজনীতি করছেন৷ রাজনীতিবিদ যাদেরকে বলা যায়, সেই রাজনীতিবিদের হাতে তখন রাজনীতি থাকছে না৷”
‘‘তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে যদি সংস্কারের ট্রেন্ডটা শুরু করা যেতে পারে যে এই এই বিষয়ে সংড. ইউনঅন্তর্ভর্তীস্কার উচিত এবং সংস্কার শুরু হয়েছে, চিন্তাভাবনা, পেপার তৈরি হয়েছে, আলোচনা শুরু হচ্ছে৷ তিন থেকে ছয়মাসের মধ্যে কাজটা যদি শুরু করা যায় বড় আকারে এবং সিরিয়াসলি, তাহলে আমি মনে করি জনগণও আরো সময় দিতে চাইবে,” যোগ করেন তিনি৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রীয়াজও একই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যে ব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্র তৈরি করেছিল সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়াতো আর যাবে না৷ অন্ততপক্ষে সেটা কাঙ্খিত নয়৷ তাহলে আপনি সেটা মোকাবিলা করবেন কীভাবে? কী সংশোধন করবেন? কী সংযোজন করবেন? কী পরিবর্তন করবেন?”
তিনি আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সংবিধান যেভাবে আছে, এই সংবিধান অক্ষুন্ন রেখে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে না। তো এটা কীভাবে অগ্রসর হবে সরকার, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তাদের দিক থেকে একটা রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা আসার দরকার। সেটা আমি অনুমান করছি তারা তৈরি করার চেষ্টা করছেন৷ আমি কমিটমেন্টটা দেখতে পাই এখন পর্যন্ত।’’
গণমাধ্যমের উপর হামলা, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর একাধিক গণমাধ্যমের উপর হামলা এবং সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাব জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘‘বিশ্বের যেকোনো স্থানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মঙ্গল যেকোনো দেশের জন্য, বিশেষ করে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করা দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেওয়াসহ যারা তাঁদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করে, তাদের জবাবদিহি করাটা গুরুত্বপূর্ণ।”
একাত্তর টেলিভিশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপাকে গ্রেপ্তারে উদ্বেগ জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এই দুই সাংবাদিক যেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, সে জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
প্রফেসর রীয়াজ এই বিষয় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গণমাধ্যমের উপর হামলা যে-কোনো সময়, যে-কোনো পরিস্থিতিতে অগ্রহণযোগ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধুমাত্র গণমাধ্যমের উপরে কি হামলা হয়েছে না অন্যত্রও হয়েছে? অন্যত্রও হয়েছে৷ সেগুলোর কারণ বোঝার চেষ্টা করতে হবে৷ এগুলো দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে গণমাধ্যমের কথা আপনি বলছেন, সেই গণমাধ্যমগুলো কি গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন করেছিল? আমি হামলাটা জাস্টিফাই করছি না৷ কোনো হামলা আমি গ্রহণযোগ্য মনে করি না। কিন্তু এটার এই পরিস্থিতি তৈরি করার ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত ১৫ বছরে বিশেষ বিশেষ গণমাধ্যমের কিন্তু ভূমিকা আছে৷ সাংবাদিকরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন সব ভূমিকা পালন করেছে যেগুলো সাংবাদিকের ভূমিকা নয়৷ এটা ক্ষতি করেছে।’’
‘‘ওনারা নিজেরাই যে ক্ষতিটা করলেন, সেটা খুব ভয়াবহ আর কি। তো আমি আশা করি এই সমস্ত ব্যাপার হামলা দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। এগুলোর জন্য সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের মালিকানার ধরন থেকে তার কাঠামোগত জবাবদিহিতার যে ব্যবস্থাগুলো সেগুলো তৈরি করতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর হামলাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ উল্লেখ করে প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেটা নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে, সেটাতে দেখা যাচ্ছে যে আমরা আবারও আগের জায়গায় ফিরে গেলাম। যারা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের আমার মনে হয় একটা বড় দায়িত্ব পড়বে এখানে কীভাবে সংস্কার করা যায় বা কী করলে সমাধান হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সন্দেহ নেই কতগুলো ঘটনা ঘঠেছে, হতে পারে হয়ত তারা কোনো দলের সাথে জড়িত, সেটা তো হতেই পারে যে কোনো একটা দলকে সে সমর্থন করছে। কিন্তু সমর্থনের কারণে যদি অবৈধ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে হয়ত তাকে তলব করা যেতে পারে৷ বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু এমনিতে যেটা এখন হচ্ছে, সেটা আমি মনে করি দুর্ভাগ্যজনক।’’
এসএমডব্লিউ