শেরপুরে খোলা আকাশের নিচে হাজারো পরিবার 

শেরপুরে খোলা আকাশের নিচে হাজারো পরিবার 

টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের পাঁচটি উপজেলায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নালিতাবাড়ী এবং ঝিনাইগাতীতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই দুই উপজেলায় প্রায় সাত হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে অনেক পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নির্ঘুম রাত্রিযাপন করছে। মানবেতর দিন পার করছে এই দুই উপজেলার হাজার হাজার পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে অর্থ বরাদ্দ ও টিনের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের পাঁচটি উপজেলায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নালিতাবাড়ী এবং ঝিনাইগাতীতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই দুই উপজেলায় প্রায় সাত হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে অনেক পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নির্ঘুম রাত্রিযাপন করছে। মানবেতর দিন পার করছে এই দুই উপজেলার হাজার হাজার পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে অর্থ বরাদ্দ ও টিনের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের পূর্ব সূর্য নগর গ্রামের সজন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আমার ঘরবাড়ি ভেঙেচুরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে কোনোরকম দিন পার করছি।

একই অবস্থা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বাসিন্দা রাশেদা বেগমের। তিনি বলেন  ‘ঢলে আমার ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। কইদিন ধইরা না ঘুমাইয়া বইয়া থাহি। আমি অসহায় মানুষ। এহন কেমনে এই ঘর বানামু, পাহাড়ি ঢল আমার যেখানে ঘর ছিল ওইখানে নদী বানাই ফেলছে। নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁইডাও নাই আর আমার। কই দিন ধইরা কেমনে থাকতাছি আল্লাহ ভালো জানেন। সাত মাসের সন্তান পেটে রেখে ২৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার সন্তানকে আমি কষ্ট করে পড়ালেখা করাইছি, কোনো চাকরি হয় নাই। ঘর তো নেই, বর্গা একটু জমি চাষ করতাম ওই জমির ফসলগুলোও পাহাড়ি ঢলে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার মতো অসহায় এই এলাকায় কেউ নেই।’

তাদের মতো একই অবস্থা শেরপুরের আরও অনেকের। ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের আশ্রয়স্থল ঘরবাড়ি।

স্থানীয়রা বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল দেখেছে শেরপুরবাসী। গেল ৩৫ বছরের মধ্যে এরকম বন্যা আমরা দেখি নাই। নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১৯৮৮ সালেও এত বড় বন্যাকবলিত হয়নি আমরা। প্রত্যেক বছর বর্ষাতেই শেরপুরের সীমান্ত এলাকাগুলোতে দুই থেকে তিনবার পাহাড়ি ঢলে ভাসলেও এবারের মতো তাণ্ডবলীলা কেউ দেখেনি আগে। নদীপাড়ের মানুষ কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই সব লন্ডভন্ড করে দেয় ঢল। পানি কমতে থাকায় দুই উপজেলায় ভেসে উঠছে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তাণ্ডবলীলার চিত্র। এ বন্যায় জেলার ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত সাত হাজার কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কত ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব নেই। ঢলের স্রোতের সামনে যা যা পড়েছে সব মিশিয়ে দিয়েছে মাটির সঙ্গে, নয়ত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সব হারিয়ে দিশেহারা এসব পরিবার। পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়ি ফিরেছে মানুষ। ঘর না থাকায় খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান তাদের।’

এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা।

তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ ও পুনর্বাসন করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে শেরপুরের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুচি রাণী সাহার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেনি।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাদের ঘর ভেঙে গেছে  তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তালিকা করছেন। আমাদের ত্রাণ শাখায় ডে ফরম নামে একটি ফরম আছে, সেই ফরম পূরণের মাধ্যমে সঠিক তালিকা হচ্ছে। তালিকার কাজ শেষ হলে আমরা সরকারের কাছে পাঠাব। ইতোমধ্যে আমরা সরকারের কাছে ঘর নির্মাণে টিন এবং নগদ টাকার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। ওইটা প্রসেস হচ্ছে, খুব শিগগিরই আমরা একটা বরাদ্দ পাব। বরাদ্দ পেলে যাদের ঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এমজেইউ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *