শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে নেত্রকোণা শহরের রাজুর বাজার এলাকায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এ দাবি জানানো হয়।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে নেত্রকোণা শহরের রাজুর বাজার এলাকায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এ দাবি জানানো হয়।
এর আগে বুধবার তারা রং তুলি দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মুছে দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের প্রস্তাবিত নাম ‘নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে স্থাপন করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদের কাছে তাদের ১১ দফা দাবি উপস্থাপন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আন্দোলনটা যেহেতু বৈষম্যবিরোধী সেহেতু আমরা চাই না কোথাও বৈষম্য থাকুক। আজকে বাংলাদেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি চলছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্ররা দেশটা সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে এবং তাদের কাছে আমাদের আস্থা আকাশচুম্বী। আমি বিশ্বাস করি ছাত্ররা যে স্মারকলিপি দিয়েছে এটা অবশ্যই ছাত্রদের ভালোর জন্যই। যে দাবিগুলো এসেছে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখব।
তিনি বলেন, তাদের দাবিগুলো আমি গ্রহণ করেছি। সেগুলো কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করব। যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করার চেষ্টা করব। আর নাম পরিবর্তনের যে বিষয়টি আছে, সেটি জাতীয় সংসদ থেকে সংশোধন হয়ে আসার একটা বিষয় আছে। সেটা সংসদ থেকে সংশোধন হয়ে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে-
১. শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. ক্যাম্পাসে দলভিত্তিক ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ছাত্র সংসদ গঠন করার লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. হলের সিট বর্ধন, অবৈধ আবাসিকদের বিতাড়িত, হল পরিচালনা নীতিমালা শতভাগ অনুসরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলের নাম কমরেড মণি সিংহ হল বা বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ হল এবং মেয়েদের হল কুমুদিনী হজং হল নামকরণ করতে হবে। পাশাপাশি হলে ডাইনিং ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে।
৪. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যেসব কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে অপমান এবং হেনস্তামূলক কথাবার্তা বলেছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে, হত্যার স্বপক্ষে মিছিল করে হুমকি দিয়েছে এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র ও লাঠি ধারণ করে নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, অনতিবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এদের মদদদাতা যারা ছিল তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
৫. সকল প্রকার বাজেট প্রস্তাবনা প্রকল্প ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত প্রমাণ পাওয়া গেলে শিক্ষক ছাত্র ও কর্মকর্তা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্থানান্তরিত করতে হবে এবং ক্যান্টিন সুবিধা দিতে হবে এক বছরের মধ্যে দুটি হল একাডেমিক ভবন এবং লাইব্রেরী ভবন নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সহকারী প্রক্টরকে এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত পালন করায় দুটি হলের সহকারী প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের পদত্যাগ করতে হবে।
৮. ডিপার্টমেন্টগুলো থেকে প্রেরিত চাহিদাপত্র অনুযায়ী চার মাস সময়ের মতো শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাসসমূহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
৯. প্রাক্তন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার মুখের কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ একর জমি মেডিকেল কলেজকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইঞ্চি জায়গা ও জমি কোথাও দেওয়া যাবে না বিবৃতির মাধ্যমে এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে
১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে অনতিবিলম্বে নিম্নোক্ত সুবিধা সমূহ ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন, পরিবহন চলাচলের সিডিউল বৃদ্ধি করতে হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সকল রোডে বাস চলাচল নির্দিষ্ট সময়সূচির মতো নিশ্চিত করতে হবে।
১১. বিভিন্ন বর্ষে ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অস্থায়ী হল শহরের মধ্যে আনা, মেধা বৃদ্ধির পরিমাণ বৃদ্ধি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ, ব্যক্তিগত বা অন্য কোনো কারণে শিক্ষার্থীদের ভাইবা বা কোথাও হয়রানি করা যাবে না, পর্দা বা যে কোনো ধর্মীয় মতাদর্শের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ কর্তৃক সকল ধরনের ক্লাব একটিভিটিস দ্রুততম সময় চালু এবং সক্রিয় রাখার যত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, এক মাসের মধ্যে অস্থায়ী হলগুলোতে ডাইনিং চালু এবং নতুন আইডি কার্ড ও রিডিং রুম চালু করতে হবে ও শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সুবিধা দিতে হবে।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/আরএআর