শেখ পরিবারের নামে দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

শেখ পরিবারের নামে দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-চতুর্থাংথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নাম জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ও স্বয়ং শেখ হাসিনার নামেও দেশের একাধিক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-চতুর্থাংথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নাম জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ও স্বয়ং শেখ হাসিনার নামেও দেশের একাধিক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাবলিক ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ১৩টি শেখ পরিবারের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে ফজিলাতুন নেসা মুজিব ও দুইটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। এর বাইরে মেহেরপুরে আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, যা মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম অনুমোদন দিয়েছে।

তবে, সেখানকার বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, একই নাম ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। বরং এই নাম পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফয়েজ বলেন, এ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা শুনছি। উচ্চপর্যায় থেকে চিন্তা-ভাবনা চলছে। একই নাম কীভাবে এত বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। তবে, তখন আমি ছিলাম না। সে কারণে কীভাবে হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি বলতে পারছি না। নাম পরিবর্তনের যদি কোনো বিষয় আসে, সেটি অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব।

এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন অনেক জেলা রয়েছে যেখানে জেলার নামেই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ ছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকারের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই পরিবারের নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ নিয়েছিল। কারণ হিসেবে তারা জানান, নাম ব্যবহার করলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সহজতর হতো। যে কারণে অনেকেই এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। লালমনিরহাট থেকে জামালপুর এমনকি কিশোরগঞ্জ ও পিরোজপুরেও একই নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। তবে, গোপালগঞ্জে এই নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সমীচীন বলেও তারা মনে করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে যে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেগুলো হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ।

এছাড়া, রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।

ইউজিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর আইন, ২০২০ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। 

২০২২ সালের ০২ নম্বর আইনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পিরোজপুর শহরে সাময়িকভাবে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দাপ্তরিক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ঢাকায় মিরপুরে একটি লিয়াজোঁ অফিস খোলা হয়েছে। 

সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদের বিশেষ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কিশোরগঞ্জ জেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ আইন ২০২০ (২০২০ সালের ১৭ নম্বর আইন, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রণীত হয়েছিল।

আইনটি ২০২০ সালে বাংলাদেশের সংসদে পাস হয়। এ আইনের বিধান অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টি কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিশোরগঞ্জ জেলার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা ও রঘুনন্দনপুর মৌজায় ১০৩.৮৭ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হবে। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে মিঠামইন রোডের দিকে প্রায় ৮.৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে, যার কার্যক্রম চলমান বলে জানা গেছে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ৪৪তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৭ সালের ২৪ নম্বর আইন অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চায় অবস্থিত ৫০০ একর জমি অনুমোদন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মির্জা আজমের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জামালপুর জেলায় একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শেখ মুজিবুর রহমানের নামে তৈরি করা হলেও ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট জেলা বা সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যের অবদানকেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ, সরকারি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বিশেষায়িত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক সংলগ্ন এলাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ২০১৯ সালের মার্চ থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি সরকারি অর্থায়নে ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত একটি আইনসহ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায়, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন অ্যাগ্রিকালচার (আইপিএসএ) রূপান্তরিত করে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইঅজও) একটি অ্যাকাডেমিক অঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিজ্ঞান কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অ্যাকাডেমিকভাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জানায়, জেলা পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেলার নামে হওয়াই সমীচীন। যেমন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। একই নামে ওই জেলায় একাধিক কলেজ আছে। এতে নামের বিভ্রাট তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুর নামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

নামের বিষয়ে এ দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, স্ব-স্ব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংসদে ওঠার পর সেখানে নাম প্রস্তাব করা হয়। সেখান থেকেই আইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাব করা হয়। নাম পরিবর্তনের জন্যও একই পদ্ধতিতে অর্থাৎ সংসদে উত্থাপনের পর পরিবর্তন করতে হবে।

কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *