শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির। আজ আদালতে সোপর্দ করে তার রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির। আজ আদালতে সোপর্দ করে তার রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও বিতর্কিত শাহরিয়ার কবির একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রতিষ্ঠার ১৯৯২ সাল থেকেই। ১৯৯৪ সালে জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর শাহরিয়ার কবির একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি হন। 

খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের নভেম্বরে শাহরিয়ার ক‌বির গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি গ্রেপ্তার হন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ না নিলেও গত ১৫ বছরে বীর মু‌ক্তিযোদ্ধা‌দের চে‌য়েও তিনি বে‌শি মু‌ক্তিযোদ্ধা সাজতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর।

অভিযোগ রয়েছে, শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা, ইসলামী রাজনীতির বিরোধিতা, জঙ্গিবাদের নামে ইসলামী রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার ভোকাল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তিনি জা‌তিকে বিভক্ত করার কাজটিও করেছেন। জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা মানলেও তিনি চেতনায় পাকিস্তানি ছিলেন বলে প্রচার করেন। আওয়ামী মতাদর্শের না হলেই মু‌ক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা ও জাতীয়তাবাদীদের ঢালাওভাবে পাকিস্তানপ্রেমি বলে প্রচার করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ মু‌ক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সরকারের সব ধরনের অপকর্মকে বৈধতা দেওয়ার কারিগরও ছিলেন শাহ‌রিয়ার ক‌বির।

শাপলা চত্বরে গণহত্যায় সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত শাহরিয়ার কবির

২০১৩ সালের ২০ আগস্ট শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গুলি চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগ দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাহিত্যিক মুনতাসির মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনকে আসামি করে এ অভিযোগ দাখিল করা হয়। সেই মামলায় অন্যতম আসামি শাহরিয়ার কবির। ধানমন্ডির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কার্যালয়ে আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম এ অভিযোগ দাখিল করেন। গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলার আসামি তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা

আন্দোলনে যখন তুঙ্গে তখন ৭১ টিভির এক টকশোতে শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রথমে শুনলাম ৩৯ জন, পরবর্তী সময়ে শুনলাম ৬৪ জন সমন্বয়ক। কিন্তু তাদের চেহারা আমরা দেখিনি। সংলাপ তবে কার সঙ্গে করবে সরকার? সরকার তো সংলাপ করতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা আছে। ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন। তাহলে সংলাপ করবে না মানে কী? তারা যৌক্তিক সমাধান চায় নাকি ন্যায়সংগত আন্দোলনের নামে সংঘাত চায়?

ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে পরামর্শ

আওয়ামী লীগের পুরো আমলে জামায়াত-শিবিরসহ ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন শাহরিয়ার কবির। সর্বশেষ সরকার পতনের আগে সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন উল্লেখ করে। তাতে সুরে মিলিয়ে তিনি বিবৃতি দেন। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানান। ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের পর জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে শাহরিয়ার কবিরকে বিভিন্ন টকশোতে সাফাই ও যুক্তি তুলে ধরতে দেখা যায়। পরে ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। যদিও সরকার পতনের পর সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান শাহরিয়ার কবির

নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারির পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমরা ৩৩ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে বলছি। দেরিতে হলেও আজকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত এসেছে, তাকে সাধুবাদ জানাই।

সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ বাক্যের বিরোধিতা

ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা করেছেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বরাবর মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে সরব ছিলেন।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসলামের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। হুদাইবিয়ার সন্ধিকে সামনে এনে তিনি বলেন, চুক্তি লিখেছিলেন হযরত আলী। চুক্তিতে বিসমিল্লাহ লেখা হয়েছিল। তখন কুরাইশরা আপত্তি করেছিল। বলা হয়েছিল আমরা তো মুহাম্মদকে নবী হিসেবে মানিই না। পরে হযরত ওমর তরবারি বের করে বলেন, এটা মানতে হবে। মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশ দেন কাটতে। আলী নিজে কাটতে অস্বীকার করেন। তখন মুহাম্মদ নিজে কাটেন। সেটি ছিল রাজনৈতিক চুক্তি। বঙ্গবন্ধুও যদি সংবিধানে বিসমিল্লাহ লাগাতেন, তাহলে বিরোধিতা করতাম।

মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে শাহরিয়ার

কয়েক বছর আগে এক টকশোতে শ্রোতার প্রশ্ন ছিল শাহরিয়ার কবিরকে-আপনাকে কেন মুরগি সাপ্লায়ার বলা হয়? এ ব্যাপারে শাহরিয়ার কবির বলেন, কাদের সিদ্দিকী একজন মুক্তিযোদ্ধা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি তো এখন জামায়াতের ডিফেন্ডার হয়েছেন। স্বাধীনতার দলিলপত্র দেখেন, তাহলে আমার অবস্থান জানবেন। আমি নগণ্য মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমি কাদের সিদ্দিকীর মতো বীর বিক্রম, বীর উত্তম ছিলাম না। 

মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না শাহরিয়ার কবির : প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আরেক টকশোতে বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যারা বেশি কথা বলছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এই শাহরিয়ার কবির তো মুক্তিযুদ্ধ করেননি। জেনেশুনে বলছি। তার জীবন রক্ষা হয়েছিল সাহাদাত চৌধুরীর কারণে। তিনি তো ভগ্নিপতি ছিলেন।

‘মুরগি কবির’ নামের উৎপত্তি নিয়ে যা জানা যায়

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত নারীনেত্রী ও শব্দসৈনিক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ এপ্রিল তার স্বামী চিকিৎসক মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানুল হক আনসারীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন বেগম মুশতারী।

চট্টগ্রামে নারী অধিকার আদায় ও সুরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন কাজ করা মুশতারী শফী বাংলাদেশ ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক। তার লেখা ‘চিঠি’, ‘জাহানারা ইমামকে’ নামক বইয়ে শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের ক্যাম্পে মুরগি সরবরাহকারী বলে উল্লেখ করা হয়।

মুশতারী শফীর গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, শাহরিয়ার কবির ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীকে মুরগি সরবরাহ করতেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে মুরগি সাপ্লাই করতেন শাহরিয়ার কবির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাহরিয়ার কবির মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। মুক্তিযোদ্ধা হলে তো আমি জানতাম। তাকে তো আমি দেখিনি।

‘মুরগি কবির’ কেন বলা হয় শাহরিয়ার কবিরকে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খোঁজ নেন। খুঁজলেই পাবেন। পারলে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে খোঁজ নেন, পাবেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বয়স এখন ৭৯ বছর। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের কোনো মূল্য নেই। মূল্য আছে যারা, দু’কলম লিখতে পারে, চাপাবাজি করতে পারে। জাহানারা ইমামের নিজের লেখা বই পড়েন। তিনি নিজেই লিখেছেন কী কী করেছেন। তার জামাই কী করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত মানুষ। তার ভাই ইকবাল। তাদের মা একটা বই লিখেছেন। সেটিও পড়ে দেখবেন, জানবেন অনেক কিছু।

জেইউ/কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *