শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, দপ্তরিকে আটকে রেখে পুলিশে দিলেন ছাত্ররা

শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, দপ্তরিকে আটকে রেখে পুলিশে দিলেন ছাত্ররা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ তুলে এর বিচার চেয়ে উপজেলায় ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা আব্দুল হাই শাফির (৪০) নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কিছু শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তোপের মুখে ওই ঘটনার পর গাঁ ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি স্কুলে যোগ দিলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটকে রেখে পুলিশে দেন।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ তুলে এর বিচার চেয়ে উপজেলায় ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা আব্দুল হাই শাফির (৪০) নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কিছু শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তোপের মুখে ওই ঘটনার পর গাঁ ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি স্কুলে যোগ দিলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটকে রেখে পুলিশে দেন।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিএনপি নেতার করা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে এদিন সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার শাফি আক্কেলপুর উপজেলার ভানুরকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি আক্কেলপুরের গোপীনাথপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদেও আছেন।

এদিকে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী রায়কালী ইউনিয়নের কালাঞ্জ গ্রামে আব্দুল হান্নানের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং গত ৪ আগস্ট বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে ৭৫ জনের নামে মামলার আবেদন করা হয়। আদালতের নির্দেশে আক্কেলপুর থানা পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে। ওই মামলায় ৩৯ নম্বর আসামি হিসেবে আব্দুল হাই শাফির নাম আছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শাফি ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তারা বিচার চেয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই ঘটনার পর এলাকার শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গাঁ ঢাকা দেন তিনি।

পরে রোববার স্কুলে যোগ দিয়ে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন খবর পেয়ে ওইদিন সকাল থেকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান নেন। ছাত্ররা তাকে আটকে রেখে খবর দিলে পুলিশ বিকেলে স্কুলে গিয়ে শাফিকে থানায় নয়ে। এরপর বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের মামলায় আব্দুল হাই সাফিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

শাফির মা শাহিদা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামার (আমার) ছলডা (ছেলে) প্রাইমারি ইশকুলত (স্কুল) দপ্তরির কাজ করে। হঠাৎ পুলিশ ইশকুলত য্যায়ে হামার ছলডাক ধরে থানাত আনিচে। হামার ছলত চোর-ডাকাত লয়। ক্যান ধরে আনল ক্যান? থানায় অ্যাসে পুলিশ কওচে হামার ছলের নামে রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমা আছে। হামার ছল বলে ২০১৮ সালত মারামারি করিচে। হামার ছল কোনো মারামারি করেনি। আমেলীগ (আওয়ামী লীগ) করোচল মানষে শত্রুতা করে মিথ্যা মামলাত নাম দিচে। সরকার কচে মামলাত নাম থাকলেই ধরবে না, আগে বলে খোঁজ (তদন্ত) লিবে। পুলিশ খোঁজ না লিয়ে মোর ছলক ধরল ক্যা? একন মোর ছলের সংসার ক্যাংকা করে চলবে।’

শিক্ষার্থী রাহাদ হোসেন বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাফি শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি রোবিবার স্কুলে আসায় আমরা থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেছে।

ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরিয়ম খাতুন বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর স্কুলের বাইরে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী শাফি মারধরের শিকার হয়েছিলেন। তবে কী কারণে তিনি মারধরের শিকার হয়েছিল তা জানি না। ওই ঘটনার পর আর তিনি স্কুলে আসেননি। এরপর রোববার এলে এদিন বিকেলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি পুলিশকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে বলেছিলাম। তারা বলেছিল হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া হবে, কিন্তু তা আর দেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুরে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন শাফি। এ ঘটনায় ছাত্ররা তার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা জানতে পারি শাফি স্বেচ্ছাসেবক লীগ হওয়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন। এলাকার কিছু ছেলেদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বও ছিল এবং তার নামে থানায় মামলা ছিল। কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর রোববার ভানুকান্দাতে স্কুলে এলে ছাত্ররা তাকে আটকে রেখেছিলেন। পরে আমাদের খবর দেওয়া হলে আমরা তাকে থানায় নিয়ে আসি। তার নামে যে মামলা ছিল, ওই মামলাতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাফিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চম্পক কুমার/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *