# চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম
# চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম# উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে বিসিক# চলতি বছরে চালু হবে না বন্ধ ৩৪.৫ মেগাওয়াটের রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট # গ্রিড সাব-স্টেশন নির্মাণের দাবি
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দ্বীপ জেলা ভোলার ৭ উপজেলার মানুষ। লোডশেডিংয়ে কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে বিসিকের উদ্যোক্তারা। লোডশেডিং কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছেন এ জেলার বাসিন্দারা
ভোলা জেলায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৮০ হাজার গ্রাহকের ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৩ মেগাওয়াট। অন্যদিকে জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪ লাখ ২৮ হাজার গ্রাহকদের ৮১ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭০-৭৫ থেকে মেগাওয়াট, এ ঘাটতি পূরণে দেওয়া হচ্ছে লোডশেডিং।
জানা গেছে, মেশিন বিকল হয়ে সদর উপজেলার খেয়াঘাটের গ্যাস ভিক্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। অন্যদিকে বোরহানউদ্দিনেও গ্যাস ভিক্তিক ১২৫ মেগাওয়াটের একটি প্লান্টের ২টি ট্রান্সফরমারের মধ্য সেখানেও একটি ট্রান্সফরমার বিকল। আর এতেই গত ৮ মাসের বেশি সময় ধরে বিদ্যুতের এমনই অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কবলে ভোলা।
এদিকে ওজোপাডিকো বলছে, ভোলা জেলা সদর উপজেলায় লোডশেডিং কমাতে বোরহানউদ্দিন থেকে ভোলা সদরে বিদ্যুৎ আনার জন্য বিকল্প নতুন আরেকটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হলেও বন বিভাগ গাছ না কাটায় সেই লাইনটিও চালু করতে পারছে না।
এদিকে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে বিসিক শিল্প নগরীর কারখানা পণ্য সামগ্রী উৎপাদন কার্যক্রম, ফলে কারখানার উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিসিকের উদ্যোক্তারা।
তবে লোডশেডিংয়ের সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ চিত্র ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলা। সেখানে ওজোপাডিকোর উপকেন্দ্রের ৮৫০ জন গ্রাহকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৫০০ কেভির ২টি ৬৫০ কেভির একটি ও ১ মেগাওয়াটের একটি জেনারেটর থাকলেও যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় সেখানে এখন প্রতিদিন বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে গড়ে তিন ঘণ্টা, তারমধ্যে দু-তিনবার লোডশেডিং। বিদ্যুতের এমন চিত্র কম-বেশি ভোলা সদর উপজেলাসহ সব উপজেলাতে।
মনপুরা সদর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শামিম ও আনিছুল বেপারি বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে মনপুরায় মাত্র কয়েকঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওজোপাডিকো। এর মধ্যে আবার দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হয়, এভাবেই বছরের পর বছর আমরা লোডশেডিংয়ের জালে আটকে আছি। আমাদের বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে আজও পর্যন্ত কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখিনি।
লালমোহন উপজেলার সদরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক মো. সবুজ ও মো. জাকির বলেন, প্রতিদিন আমরা ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাই না। গ্রামেও একই চিত্র।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাফি হাসান জানান, আমার জন্মের পরে এতো লোডশেডিং আর দেখছি বলে মনে পড়ে না। লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে বাসায় ঠিকমতো পড়তে পারি না।
দুটি ওয়ার্কশপের মালিক বলেন, আমাদের ব্যবসা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। কাজের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে চায়, ঠিকমতো কাজ করা যায় না। প্রতিদিন টার্গেট অনুযায়ী কাজ করতে না পারলেও কর্মচারীদের বেতন তো মিস নাই। আমরা লসে আছি।
ভোলা সদর উপজেলার বাসিন্দা ইনতেবিন ও আ. রহমান বলেন, ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস ও তিনটি গ্যাস ভিক্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকার পরও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়া আমাদের জন্য হতাশাজনক।
ভোলা বিসিক শিল্পনগরীর (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক মো. সোহাগ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিসিক শিল্পনগরীর ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জ্বালানি মূলত বিদ্যুৎ থেকেই আসে, এছাড়া আমাদের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই। লোডশেডিংয়ে উৎপাদন খাতগুলো ব্যাপক মাত্রায় বিঘ্নিত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে উৎপাদন কমায় বিসিক বর্তমানে ব্যাপক ক্ষতির মুখে রয়েছে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ বলেন, খেয়াঘাটের রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ এনে গত ১৪ বছর ধরে সদর উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছি। বর্তমানে এ প্লান্টটি বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে বিদ্যুৎ আনছি। বিদ্যুৎ সরবরাহে সেখানে যে ট্রান্সফরমার আছে সে ট্রান্সফরমারের ক্যাপাসিটি নেই, বেশিরভাগ সময় সেখানে সমস্যা হয়। যার কারণে আমরা আমাদের গ্রাহকদের চাহিদামত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি না। লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব কারিগরি ত্রুটি নেই। সঞ্চালন লাইন দূরে হওয়াতে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বোরহানউদ্দিন থেকে ভোলা সদরে বিদ্যুৎ আনার জন্য বিকল্প নতুন আরেকটি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছি, কিন্তু বন বিভাগ গাছ না কাটায় সেই লাইনটিও আমরা চালু করতে পারছি না।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ওজোপাডিকোর টেকনিক্যাল সক্ষমতা না থাকার কারণেই তারা লাইনটি চালু করতে পারছে না। একাধিকবার আমরা তাদের বলেছি কোথায় সমস্যা আমাদেরকে বলেন, গাছের ডালপালা কেটে দিচ্ছি কিন্তু তারা আমাদেরকে কিছু জানায়নি। মূল বিষয়টি হচ্ছে ওজোপাডিকো নিজেদের দোষ বন বিভাগের ওপর চাপাচ্ছে। এখানে বন বিভাগের কোনো বিষয় নেই।
খেয়াঘাটের ৩৪.৫ মেগাওয়াটের গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মেশিন বিকল হয়ে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, মেশিন বিকল হয়ে বন্ধ হওয়া আমাদের পাওয়ার প্লান্টটি এ বছরে আর চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্লান্টটি সচল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমএসএ