লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে বন্যার পানি, বৃষ্টিও থামছে না

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে বন্যার পানি, বৃষ্টিও থামছে না

নোয়াখালী থেকে বন্যার পানি ঢুকে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আবার অনেকের গন্তব্য উজানে স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন। কোমড় পানিতে যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

নোয়াখালী থেকে বন্যার পানি ঢুকে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আবার অনেকের গন্তব্য উজানে স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন। কোমড় পানিতে যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

রোববার (২৫ আগস্ট) দিনব্যাপী বন্যা কবলিত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়ন ও বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে এসব জানা যায়। গবাধিপশু নিয়েও বিপাকে রয়েছে গৃহস্থরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে শুরু করে। শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল থেকে পানির চাপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে শনিবার রাত থেকে লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, উত্তর জয়পুর, বাঙ্গাখাঁ, মান্দারী, তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন, শাকচর ও চররুহিতা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৪-৫ ফুট পানিতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। 

একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমতখালী খালসহ ওয়াপদা খালগুলোতে পানি উপচে পড়ছে। এতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ, লামচরী, মধ্য বাঞ্চানগর, শিশু পার্ক এলাকা ও লাহারকান্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এসব এলাকার ১২ হাজার ৭৫০ জন মানুষ আশ্রয়ণকেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অধিকাংশ মানুষ নিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। আবার অনেকেুই নিজের ঘরে ছকি বা খাটের ওপর রান্না-বান্না করছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা পানিতে নোয়াখালী ও ফেনীতে যখন বন্যা তখন লক্ষ্মীপুরে প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। এ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বহু মানুষ প্রায় ১ মাসজুড়ে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। সদর, রায়পুর, রামগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল মানুষ। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ে। এতে লক্ষ্মীপুরও এখন বন্যা কবলিত। এর মধ্যে শনিবার রাতেই প্রায় ৩ ফুট পানি বেড়ে গেছে বন্যাকবলিত এলাকায়। রহমতখালী খাল হয়ে মেঘনা নদীতে যেন বানের পানি নেমে যেতে পারে সেজন্য মজুচৌধুরীরহাটের দুটি স্লুইস গেট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপরও কোথাও যেন পানি কমছে না। উল্টো সময়ে সাথে সাথে বানের পানি বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র। এতে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ৫টি উপজেলায় ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া পৃথক দুটি চিঠিতে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেন। বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া ও উত্তর দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা তোফায়েল, ইমরান হোসেনসহ কয়েকজন জানান, গত ৭ দিন ধরে তাদের বাড়িঘরে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। ওই পানি না নামতেই গত ৩ দিন ধরে হঠাৎ করে পানি বাড়তে থাকে। শনিবার সারাদিন বৃষ্টি না হলেও রাতে বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টির পাশাপাশি নোয়াখালীর বন্যার পানি এদিকে চাপ দেয়। এখন প্রত্যেকটি বাড়ি ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। ঘর-বাড়িতে থাকার কোনো পরিস্থিতি নেই। যাদের ঘরের ভিটা উঁচু তারাই শুধু বাড়িঘরে থেকে গেছে। আর অন্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়েছে। এজন্য পানি বেড়ে গেছে। প্রায় ৮ হাজার মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে শুকনো খাবার দিয়েছি। একই সঙ্গে খিচুড়ি রান্না করেও আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদেরকে পরিবেশন করা হচ্ছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *