রংচটা পাঁচিলে অপেশাদার হাতের ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আর আর্টে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ফ্লাইওভারের পিলার, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে স্থান পাচ্ছে বিভিন্ন চিত্র-দৃশ্য।
রংচটা পাঁচিলে অপেশাদার হাতের ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আর আর্টে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ফ্লাইওভারের পিলার, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে স্থান পাচ্ছে বিভিন্ন চিত্র-দৃশ্য।
শুধু তাই নয় শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে পরিষ্কার করছেন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যবসায়ীদের লাগানো পোস্টারও। কিছু জায়গায় পরিচালনা করা হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। আর এসব কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট শিক্ষার্থীরাও।
গত কয়েকদিনে রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বসুন্ধরা, নর্দা এবং ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেয়ালকর্ম এবং গ্রাফিতিতে স্মরণ করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের। তবে অধিকাংশ জায়গায় স্থান পেয়েছে ঢাকার শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ এবং রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ। ‘পানি লাগবে, পানি?’, ‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, আমার সোনার বাংলাদেশ’, ‘হামার ব্যাটাক মারলু ক্যানে’, ‘আমার দেশের ছাত্র-ছাত্রী পারমাণবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালী’, ‘দেশটা কারোর বাপের না’, ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’, ‘৩৬শে জুলাই’, ‘বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা’, ‘বিকল্প কে? ছাত্র’, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘এবার সভ্যতা আনব’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনবো’, ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’, ‘নতুন স্বাধীনতা ২০২৪’ সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়েছে দেয়ালগুলোতে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা শহরের সৌন্দর্য নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন স্থানে অযাচিতভাবে পোস্টার লাগানো। এই পোস্টারগুলো সাধারণত রাজনৈতিক, সামাজিক বা ব্যবসায়িক প্রচারের উদ্দেশ্যে লাগানো হয়। এগুলো শহরের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের দেয়াল, সড়কের পাশের ফুটপাত, ওভারব্রিজ ইত্যাদি জায়গায় লাগানো হয়। যা শহরের নান্দনিকতা ও পরিপাটি ভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বসুন্ধরা এলাকায় দেয়াল চিত্র অঙ্কন করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমায়রা নাজনীন সুপ্তি বলেন, উন্নত বা আধুনিক বিশ্বে এই পোস্টার সংস্কৃতি নেই। বাংলাদেশেই এটির ব্যাপক প্রচলন। তাছাড়া পোস্টারগুলো অনেক সময় পুরোনো হয়ে গেলে ময়লা-আবর্জনা তৈরি করে। শহরের পরিচ্ছন্নতাকে বিঘ্নিত করে। আবার পোস্টার লাগানোর সময় দেয়াল বা অন্যান্য অবকাঠামোতে আঠা বা রঙের দাগ পড়ে যায়। যা স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব পোস্টার অপসারণ করতে না পারলে ঢাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব পোস্টার শহরের নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। যাতে ঢাকার সৌন্দর্য রক্ষা করা যায়।
নাসরীন জাহান নামে আরেক কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, শহরের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা শিক্ষার্থীদের একটি সৃজনশীল এবং প্রতিবাদী কর্মকাণ্ড। এতে সমাজের নানা সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা, রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রতিবাদ যেমনি সামনে আসছে তেমনি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং শিল্পীসত্তার প্রকাশও হচ্ছে। আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই। সেজন্য সবার আগে পরিবেশ সুন্দর করা প্রয়োজন। তাই আমরা সবার জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছি।
এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানও পরিচালনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কে পড়ে থাকা ইট এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন তারা। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের পরিষ্কার কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন তারা।
আরএইচটি/এমজে