মেহমানকে সম্মান করা মুসলমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসূল সা. মেহমানের সম্মানকে মুমিনের অন্যতম গুণ বলে উল্লেখ করেছেন। এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন—
মেহমানকে সম্মান করা মুসলমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসূল সা. মেহমানের সম্মানকে মুমিনের অন্যতম গুণ বলে উল্লেখ করেছেন। এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন—
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ করে থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৯৩)
সাহাবিরা মনেপ্রাণে মহানবী সা.-এর কথা শুনতেন। আনুগত্যের শ্রেষ্ঠ নজির স্থাপন করতেন।
একদিন এক আনসারি সাহাবির বিস্ময়কর মেহমানদারিতে মহান আল্লাহ খুশি হয়েছেন। কোরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে রাসুল (সা.)-কে তাঁর ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর খেদমতে এলো।
তিনি খাদ্যদ্রব্য কিছু আছে কি না তা জানার জন্য তাঁর সহধর্মিণীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া অন্য কিছুই নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কে আছে যে এই (ক্ষুধার্ত) ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সঙ্গে খাওয়াতে পারো? তখন জনৈক আনসারি সাহাবি (আবু তালহা) বলেন, আমি পারব। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে বাড়িতে গেলেন। এবং স্ত্রীকে বলেন, রাসুল (সা.)-এর মেহমানের সম্মান করো।
স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের আহার ছাড়া ঘরে অন্য কিছু নেই। আনসারি বলেন, তুমি আহার প্রস্তুত করো এবং বাতি জ্বালাও। এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও।
(স্বামীর কথামতো) সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদের ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা উপস্থিত করল। (তারপর মেহমানসহ খেতে বসলেন) বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তাঁরা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মতো শব্দ করতে লাগলেন। এবং মেহমানকে বোঝাতে লাগলেন যে তাঁরাও সঙ্গে খাচ্ছেন।
তাঁরা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন, তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপ দেখে খুশি হয়েছেন এবং এ আয়াত নাজিল করেছেন—
وَ الَّذِیۡنَ تَبَوَّؤُ الدَّارَ وَ الۡاِیۡمَانَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ یُحِبُّوۡنَ مَنۡ هَاجَرَ اِلَیۡهِمۡ وَ لَا یَجِدُوۡنَ فِیۡ صُدُوۡرِهِمۡ حَاجَۃً مِّمَّاۤ اُوۡتُوۡا وَ یُؤۡثِرُوۡنَ عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ وَ لَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَۃٌ ؕ۟ وَ مَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ۚ﴿۹﴾
আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালবাসে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোন ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং (আনসারদের অন্যতম গুণ হলো এই) নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর, আয়াত : ৯; সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫২৬)