শৃঙ্খলা ফিরেছে যশোর শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। এসব সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তাদেরকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ রোভার স্কাউট যশোর শাখার স্কাউট সদস্যরা। শৃঙ্খলার সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে খুশি শহরের রিকশাচালক, ইজিবাইক চালকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। এ সময় কোথাও কাউকে কোনো চাঁদা দেওয়া লাগছে না বলে জানান চালকরা।
শৃঙ্খলা ফিরেছে যশোর শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। এসব সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তাদেরকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ রোভার স্কাউট যশোর শাখার স্কাউট সদস্যরা। শৃঙ্খলার সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে খুশি শহরের রিকশাচালক, ইজিবাইক চালকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। এ সময় কোথাও কাউকে কোনো চাঁদা দেওয়া লাগছে না বলে জানান চালকরা।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে যশোর শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরজমিনে যশোর শহরের ব্যস্ততম সড়ক মুজিব সড়ক, জজ কোর্ট মোড়, শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা মোড়, চিত্রার মোড়, মনিহার পুরাতন বাস টার্মিনাল, পালবাড়ি মোড়, হাসপাতাল মোড়, নিউমার্কেটসহ বেশকয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়।
ছাতি মাথায়, হাতে লাঠি নিয়ে বিভিন্ন রুটে যানবাহন চালকদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও স্কাউটের সদস্যরা। ফলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কে বুধবার সকাল থেকে কোনো যানজট দেখা যায়নি।
এর আগে, সোমবার শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে থমথমে ছিল গেটা যশোর শহর। শহরের সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল ছিল একেবারেই কম। অনেক দোকানপাটও ছিল বন্ধ। তবে বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্বাভাবিক প্রাণ ফিরেছে সড়কগুলোতে। নির্বিঘ্নে অফিস-আদালত ও কর্মস্থলে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ।
রোভার স্কাউটের সদস্য শান্ত ঢাকা পোস্টকে জানান, আমাদের বাংলাদেশ রোভার স্কাউটের ছেলে-মেয়েসহ প্রায় ১২ জন সদস্য শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যানবাহ চালকরা তাদের নির্দেশনা মেনে চলছে।
যশোর মুসলিম একাডেমির শিক্ষার্থী শেখ রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশটা আমাদের। দেশের এই সংকটময় সময়ে আমাদেরই কাজ করতে হবে। এজন্য আমরা স্ব স্ব উদ্যোগে যশোর শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নেমেছি।
সাইদ তাসরিফ হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আগে দেখতাম যশোরে ট্রাফিক পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশের সঙ্গে ইজিবাইকচালক, রিকশাচালকদের বাগবিতন্ডা হতো, আমরা রাস্তায় নামার পর আমাদের সঙ্গে তো কারও কোনো ঝামেলা হয়নি। বরং যানবাহন চালকরা আমাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে, আমাদের কাজকে আরও সহযোগিতা করছে।
জজকোর্ট মোড়ে কথা হয় ইজিবাইকচালক নিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ট্র্যাফিক পুলিশ আর কমিউনিটি পুলিশ আমাদের গাড়িতে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে গ্লাস ভেঙে দিত। একটু কিছু হলেই আমাদের কানে-মুখে চড় দিত। কিন্তু ছাত্ররা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে আমরা এতে খুশি। আমরা আগে এটাই চাইতাম, কিন্তু এর বদলে আমরা নির্যাতিত হয়েছি।
রেলগেট এলাকার রিকশাচালক তোতা বলেন, গত সোমবার শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত যশোরের কোনো রাস্তায় চাঁদাবাজি বা চাঁদা নিতে দেখিনি কাউকে। আগে কমিউনিটি পুলিশরা আমাদের কাছ থেকে গোপনে টাকা নিত। টাকা না দিলে রিকশার মিটার ভেঙে দিত, অন্যথায় রিকশাই চালাতে দিত না। দেশটা আমাদের, আমাদের টাকায় করা রাস্তায় আমরা চলবো স্বাধীনভাবে। এই রাস্তায় চলতে কেন আমার প্রভাবশালীদের চাঁদা দেওয়া লাগবে?
আরেক রিকশাচালক রিয়াজ বলেন, শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদার টোল পয়েন্ট বানিয়েছিল। পাতি নেতাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করতো, টাকা যেত বড় বড় নেতাদের পকেটে। হাসিনা পালানোর পরে নেতারাও পালিয়েছে, চাঁদাবাজরাও পালিয়েছে।
মোটরসাইকেলচালক নিজাম গাজী বলেন, শিক্ষার্থী অনেক সুন্দরভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। যাদের হেলমেট নেই তাদের হেলমেট পরার জন্য অনুরোধ করছে। যশোর শহরের চিত্র পাল্টে গেছে। আগে যশোরে ঢাকার মতো যানজট লেগে থাকতো। একটা অ্যাম্বুলেন্স হুইসেল দিলেও রাস্তা ফাঁকা হতো না।
শুধু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নয় বিগত দিনের দুর্বৃত্তদের নাশকতার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সড়কের বিভিন্ন আবর্জনা স্ব স্ব উদ্যোগে পরিষ্কার করছেন তারা।
এ্যান্টনি দাস অপু/এএমকে