মেহেরপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু, দেড়মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৫০ রোগী

মেহেরপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু, দেড়মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৫০ রোগী

পৌরসভা থেকে মশক নিধন স্প্রে না করা, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আগাম প্রস্তুতি না নেওয়া এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকায় মেহেরপুরে আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাড়াও ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

পৌরসভা থেকে মশক নিধন স্প্রে না করা, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আগাম প্রস্তুতি না নেওয়া এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকায় মেহেরপুরে আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাড়াও ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কীট, আলাদা ওয়ার্ডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবখানে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন, যাতে সবাই ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেস্বর) সকাল পর্যন্ত মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৯ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

বর্তমানে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬ জন, মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২৫ ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত আগস্ট মাসে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৮০, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৬ ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জনসহ মোট ১৫১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসের গতকাল ২২ তারিখ পর্যন্ত মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১২৪ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৭ জন ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জনসহ ২১১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

জানা গেছে, আবহাওয়াজনিত কারণে সর্দি-কাশি ও জ্বর দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। পরে অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে আসছেন। এখানে রক্ত পরীক্ষা করলেই মিলছে ডেঙ্গুর জীবাণু। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬১ জন। এ মাসে আরও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের। এতে সাধারণ রোগীরাও রয়েছেন চরম ঝুঁকির মধ্যে।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের এক সঙ্গে রাখা হয়েছে। তবে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।

সূত্র মতে জানা গেছে, মেহেরপুর পৌরসভা ও গাংনী পৌরসভার পক্ষ থেকে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন স্প্রে করার কথা থাকলেও বিগত কয়েক বছর মশক নিধনে পৌরসভা দুটি থেকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন ও স্প্রে করার পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এতে এই দুই পৌরসভার মেয়র এই খাতের সমস্ত টাকায় আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকাতে বা সতর্কতামূলক প্রচারণার পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদ গুলোও কোনো প্রচারণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় শহর কিংবা গ্রাম, সবখানেই ঝোপ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এসব স্থান মশার প্রজননকেন্দ্র হিসেবে ধরা যায়। পৌর কর্তৃপক্ষ আজও কোনও প্রচারণা চালাচ্ছেন না। এদিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণেও রাস্তার খানাখন্দে জমে থাকা পানিতে গাংনী পৌরসভা এলাকায় বেড়েছে এডিশ মশা।

গাংনী উপজেলা শহরে রাস্তার দুপাশে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পারছে। সেখান থেকে উৎপাদিত এডিশ মশা এখন সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত গাংনী পৌর এলাকার বাজার পাড়ার আজিজুল হক রানি, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ এর গাংনীর এরিয়া অফিসের সমন্বয়ক হেলাল উদ্দিন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত নার্স শাকিলা বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হঠাৎ ১০৩-১০৪ জ্বর দেখা দেয়। জ্বর কমে গেলেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রয়ে যায়। শুরু হয় পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, মাথা ঘোরা, পাতলা পায়খানা ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। 

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগ নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ডা,আদিলা আজহার বলেন, আমরা আমাদের। সাধ্যমত চেষ্টা করছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এজন্য মানুষের মধ্যে সচেতনত সৃষ্টি করার জন্য প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) চিকিৎসক আব্দুল আল মারুফ বলেন, অনেকে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা করার। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতার কথাও বলা হচ্ছে। মশারি ব্যবহার করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।

রোগীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হোক আর হেমোরেজিক হোক, এই সময় জ্বর হলেই পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ নেওয়া উচিত। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই জ্বর হলেই সতর্ক থাকতে হবে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার বলেন, ‘এ পর্যন্ত গত এক মাস বাইশ দিনে জেলায় ৩৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কীট, আলাদা ওয়ার্ডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবখানে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন যাতে সবাই ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক হন। সেক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও নর্দমায় নোংরা পানি বা জলাবদ্ধতা না থাকে, তার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আকতারুজ্জামান/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *