মাদ্রাসার ‘সুপার’ পদ নিয়ে ২৩ বছর পর টানাটানি

মাদ্রাসার ‘সুপার’ পদ নিয়ে ২৩ বছর পর টানাটানি

চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার ২৩ বছর পর জয়পুরহাটের কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার বৈধ সুপার হিসেবে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মোঃ মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান। অপরদিকে সুপারের পদ দখলের অপচেষ্টা ও বর্তমান সুপারকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বর্তমান সুপার আয়েজ উদ্দিন।

চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার ২৩ বছর পর জয়পুরহাটের কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার বৈধ সুপার হিসেবে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মোঃ মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান। অপরদিকে সুপারের পদ দখলের অপচেষ্টা ও বর্তমান সুপারকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বর্তমান সুপার আয়েজ উদ্দিন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে মাদ্রাসার বৈধ সুপার দাবি করা মাসুদ মোস্তফা দেওয়ানের সংবাদ সম্মেলনের পর আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আয়েজ উদ্দিন।

কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মন্ডলী ও এলাকার ছাত্র-অভিভাবকদের ব্যানারে আয়োজিত আজকের সংবাদ সম্মেলনে কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি রেজাউল করিম সরকার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এসময় কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আয়েজ উদ্দিনসহ ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষক-ছাত্র অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বরখাস্ত হওয়ার ২৩ বছর মোঃ মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান নিজেকে কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার বৈধ সুপার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেসময় মো. মাসুদ মোস্তফা নিজেকে একজন মজলুম শিক্ষক হিসেবে দাবি করে বলেন, ১৯৯২ সালের ২৭ জুন কেন্দুল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে যোগদান করেছিলাম। তখন থেকেই এই পদের প্রতি দৃষ্টি পড়ে সহ-সুপার আয়েজ উদ্দিনের। তিনি মাদ্রাসার কয়েকজন বিপথগামী শিক্ষক ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীকে দিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন। ১৯৯৯ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন থানা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ৭২৩ নম্বর স্মারকে কোনো প্রকার তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই সাত দফা ভিত্তিহীন অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সহ-সুপার আয়েজ উদ্দিনকে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করা হয়। আয়েজ উদ্দিন স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সুপার বনে যান।

সেই সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে উচ্চ আদালতে রিট করেন মাসুদ মোস্তফা। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ মাদ্রাসার নামে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত ভাঙানো হয়। সুদসহ ২৫ হাজার ৮৩০ টাকার নতুন করে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) খোলা হয়। এই টাকা আত্মসাৎ দেখিয়ে মাদ্রাসার অফিস সহকারী মুর্তজা আলীকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করানো হয়। এ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০১ সালের ১২ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে নেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ এপ্রিল এ্যাডহক কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর ২০০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাকে পদত্যাগ দেখানো হয়। ২০০১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। এর পর থেকে তাকে মাদ্রাসায় যেতে দেওয়া হয়নি।

পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক প্রতিনিধি রেজাউল করিম সরকার বলেন, মোঃ মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান মাদ্রাসার সুপার পদে থাকা অবস্থায় চাকুরিবিধি লঙ্ঘন, অর্থ আত্নসাৎ করেছিলেন। তিনি একাধিকার বার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। মাদ্রাসার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) টাকা আত্নসাতের অভিযোগে ২০০১ সালের ৫ মার্চ জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ওই বছরের ১২ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে ২০০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকুরি থেকে ইস্তেফা দেন। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভায় তার ইস্তফা অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইস্তফাপত্র অনুমোদন হওয়ার পর মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান চাকুরিতে ইস্তফা দেননি এমন অভিযোগ এনে  জয়পুরহাট সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে (১৬/২০০২ নম্বর) একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ২০০২ সালের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এরপর মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান তার সুপার পদ ফিরে পেতে ২০০৩ সালের ৬ জুলাই জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে ঘটনার তদন্তের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ২০০৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে মাসুদ মোস্তফা দেওয়ানের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত সঠিক রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি মামলা চলাকালীন সময়ে তিনি সুপার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সুপার পদে তার চাকুরি ফিরে পাওয়ার যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ রয়েছে। মাসুদ মোস্তফা দেওয়ানের পদ শূন্য ঘোষনা করে সহ-সুপার আয়েজ উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ১৩ মার্চ বিধি মোতাবেক আয়েজ উদ্দিনকে সুপার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানের পর হঠাৎ করে গত ১১ সেপ্টেম্বর সাবেক সুপার মোঃ মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান ৪০-৫০ জন লোকের একটি দল নিয়ে মাদ্রাসায় আসেন। তারা মাদ্রাসার সুপারসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা  মাদ্রাসার সুপার আয়েজ উদ্দিনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে চাপ দেন। এঘটনায় জয়পুরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও সাবেক সুপার মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান সুপার পদ দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা সুপারের পদ দখলের অপচেষ্টা রুখে দিতে  স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা চাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দুল দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আয়েজ উদ্দিন বলেন, মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান ২৩ বছর আগে চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। হঠাৎ করে গত মাসে সাবেক সুপার মাদ্রাসায় এসে আমাকে পদত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করে।

মোঃ মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান বলেন, আমি সুপার পদ থেকে ইস্তফা দেইনি। আমি এখনও বৈধ সুপার। স্বৈরশাসকের দোসরা আমাকে এতোদিন মাদ্রাসায় যেতে দেননি।

চম্পক কুমার/এসএমডব্লিউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *