রাস্তা আটকানো নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের বিদ্যুৎমন্ত্রী এফ রডিংলিয়ানার সঙ্গে বিবাদ হয়েছিল দেশটির আধাসামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলসের।
রাস্তা আটকানো নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের বিদ্যুৎমন্ত্রী এফ রডিংলিয়ানার সঙ্গে বিবাদ হয়েছিল দেশটির আধাসামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলসের।
আর সেটির ‘প্রতিশোধ নিতে’ মিজোরামে থাকা আসাম রাইফেলসের সব দপ্তর ও শিবিরে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিলেন তিনি। মিজোরামের বিদ্যুৎমন্ত্রী এফ রডিংলিয়ানার গাড়িবহরকে আসাম রাইফেলসের সেনারা থামানো ও বিতন্ডার জেরে এই ঘটনা ঘটে।
পরে অবশ্য কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘাঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসে। রোববার (২০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈন্যরা মিজোরামের বিদ্যুৎমন্ত্রী এফ রডিংলিয়ানার কনভয়কে থামানোর পর মিজোরামজুড়ে তাদের ঘাঁটিগুলো বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখোমুখি হয়েছিল বলে আসাম রাইফেলস শনিবার জানিয়েছে। রডিংলিয়ানা শুক্রবার অভিযোগ করেছেন, তিনি চামফাই থেকে বাড়ি ফেরার সময় আইজলের উপকণ্ঠে আসাম রাইফেলসের সৈন্যরা তার কনভয়কে থামিয়েছিল।
আর এই ঘটনা মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা সহকারী কর্মকর্তাদের এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি করে।
তবে এই ঘটনার কথা জানিয়ে আসাম রাইফেলস বিবৃতি ও ভিডিও পাঠিয়ে দাবি করেছে, মন্ত্রীর দাবি সত্য নয়। তিনিই নিজে থেকে গাড়ি থামান এবং তার সহকারীরা কর্তব্যরত জওয়ানদের সঙ্গে দুর্ব্যহহার করেন। এলাকা ছাড়ার সময়ই আসাম রাইফেলসকে শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়ে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। এভাবে ব্যক্তিগত ঝগড়ার প্রতিশোধ নিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সব ঘাঁটি বিদ্যুৎহীন করে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
অন্যদিকে রডিংলিয়ানার দাবি, তিনি চামফাই থেকে ফেরার সময় আইজলের কাছে ৫৪ নম্বর জাতীয় সড়কে আসাম রাইফেলসের চেক পোস্টে তাকে আটকানো হয়। প্রথম ব্যারিকেড পার করার পরে ফের তিন জওয়ান তাদের পথ আটকান। তারা বলেন, কমান্ডারের নির্দেশে তারা রাস্তা আটকেছেন। মন্ত্রী পরিচয় দেওয়ার পরেও ছাড়া হয়নি। কর্তব্যরত অফিসার ও জওয়ানরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এই ঘটনা নিয়ে শুধু সরকারপক্ষ নয়, বিরোধীরা এবং মিজোরামের ছাত্র সংগঠনও আসাম রাইফেলসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে। এমনকি প্রতিবাদপত্র পাঠানো হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও। কিন্তু আসাম রাইফেলস দাবি করেছে, তারা আইজল-সিলিং রোডে জোখাওসাং ঘাঁটি থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মোবাইল চেক পোস্ট বসিয়েছিল। বেসামরিক যানবাহনগুলো যেখানে তল্লাশি করা হচ্ছে সেখানে কনভয়টি নিজেই থামে এবং মন্ত্রীকে যেতে দেওয়া হলেও তিনি চেক পোস্ট সরানোর নির্দেশ দেন।
ঘটনার কয়েকটি ভিডিও পাঠিয়ে আসাম রাইফেলস দাবি করেছে, মন্ত্রীর গাড়ি রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে ওই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত সচিব গাড়ি থেকে নেমে কর্তব্যরত সৈন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। অকথ্যভাষায় গালি দেন এমনকি ‘গো ব্যাক টু ইন্ডিয়া’ বলেও মন্তব্য করেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী কর্তব্যরত এক জওয়ানকে গাড়িতে উঠিয়ে পাশের গ্রামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেন।
একপর্যায়ে কমান্ডারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মন্ত্রীর সচিব জওয়ানদের বডি ক্যামেরাও কেড়ে নেন। মন্ত্রী ও তার দলবল আসাম রাইফেলসকে ‘এর ফল ভোগ করার’ হুমকি দিয়ে যাওয়ার অল্প পরেই বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় রাজ্যের আসাম রাইফেলসের সব শিবির ও দপ্তরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। অবশ্য বিদ্যুৎ ফেরে রাতে।
আসাম রাইফেলস জানায়, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত রোষের কারণে মিয়ানমার সীমান্ত-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ আসাম রাইফেলসের ঘাঁটি বিদ্যুৎহীন থাকা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি আঘাত। মিজোরামের সীমান্ত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণে এত বছরের অবদান রাখার পরে এমন ব্যবহার দেশের সবচেয়ে পুরোনো আধাসামরিক বাহিনীর প্রাপ্য নয়।
টিএম