ভূঞাপুরে ভেঙে পড়ল নির্মাণাধীন ব্রিজ

ভূঞাপুরে ভেঙে পড়ল নির্মাণাধীন ব্রিজ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নির্মাণাধীন ব্রিজের ঢালাই দেওয়ার সময় ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রাতের মধ্যেই সব সরিয়ে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপরই নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় সওজ কর্তৃপক্ষ।  

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নির্মাণাধীন ব্রিজের ঢালাই দেওয়ার সময় ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রাতের মধ্যেই সব সরিয়ে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপরই নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় সওজ কর্তৃপক্ষ।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূঞাপুর লৌহজং নদীর অংশের বীরহাটি এলাকার ওই খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। ব্রিজটি দুইভাগ করে সাটারিং তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি একপাশের অংশে ঢালাই দেওয়ার পরই ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার আগেই ভাঙা অংশগুলো নদী থেকে তোলা হয় রাতব্যাপী। ভূঞাপুর লিংক সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজের ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীন ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাইপাস সড়কের কাজ শুরু করেছে। এই সড়কের ভূঞাপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন বীরহাটি এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এটির নির্মাণকাজ করছে ইসমাইল কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ জুলাই ব্রিজের একপাশে সওজের প্রকৌশলে ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। এ সময় হঠাৎ সাটারিংসহ ঢালাই অংশ নদীতে পড়ে যায়। পরে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতে পড়া ভেঙে পড়া ঢালাইসহ মালামাল সরিয়ে ফেলে।

জেলা সওজ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ভূঞাপুর লিংক সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ভূঞাপুর-তারাকান্দি জেলা মহাসড়কের বাহাদীপুর লেভেল ক্রসিং থেকে এলেঙ্গা-ভূঞাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বিরহাটি লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত ১.৮০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৭৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৬৯ মিটার দীর্ঘ একটি পিসি গার্ডার সেতু এবং ১২ মিটার দীর্ঘ একটি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১ দশমিক ৬১ লাখ ঘনমিটার মাটি ভরাটের কাজ করা হবে। প্রকল্পটি টেকসই করার লক্ষে ১৫০ মিটার কংক্রিট স্লোপ প্রটেকশন উইথ জিও টেক্সটাইল, ১৩০ মিটার আরসিসি ওয়াল এবং ১২৫ মিটার আরসিসি প্যালাসাইডিংয়ের কাজ করা হবে। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পে ২০টি ট্রাফিক সাইন, ৩০টি সাইন পোস্ট, ৪০০টি কংক্রিট গাইড পোস্ট, দুটি কংক্রিট কিলোমিটার পোস্ট নির্মাণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সড়ক ও ব্রিজের কাজ মূল ঠিকাদার করছে না। প্রভাবশালীরা কাজ কিনে এনে তাদের মতো করে কাজ করছে। ঢালাই ভেঙে যাওয়ার দিন সওজের প্রকৌশলী উপস্থিত ছিল। তার উপস্থিতিতে ব্রিজের ঢালাই কাজ হওয়ার সময়ই ভেঙে পড়েছে। তাৎক্ষণিক রাতের মধ্যেই সেগুলো সরিয়ে ফেলেছে। এ ছাড়া ওই ব্রিজসহ সড়কের কাজ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে।

সড়ক ও ব্রিজের কাজে দায়িত্বরত নাইট গার্ড কাজিম উদ্দিন বলেন, পানি আসার আগেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য সাটারিং করা হয়। পরে পানি আসে নদীতে। এতে নদীতে পানির স্রোত ছিল। ফলে ঢালাই করার পরই সাটারিংসহ ঢালাই নদীতে পড়ে যায়। এরপর কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় সওজের প্রকৌশলী।

ব্রিজ নির্মাণকাজের ঠিকাদার আব্দুল আজিজ বলেন, বন্যার আগে পানির উপর সাটারিং করা হয়েছিল। ঢালাই কাজের জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সওজ কর্তৃপক্ষ কাজ করতে দেয়নি। ফলে সাটারিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমেরি বলেন, পানি আসার আগেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য সাটারিং করেছিল ঠিকাদার। বর্তমান প্রেক্ষিতে ওই সাটারিংয়ে ঢালাইয়ে ঝুঁকি থাকায় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে স্টিল, লোহার তৈরি সাটারিং তৈরি করতে বলা হয়েছে। ওই সড়ক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়নি। আগামী ২০২৫ সালে জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রয়েছে। 

অভ‌িজিৎ ঘোষ/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *