বোনাসের দাবিতে দার্জিলিংয়ে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট

বোনাসের দাবিতে দার্জিলিংয়ে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট

গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং পাহাড় এবং ডুয়ার্সের চা শ্রমিকেরা। কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং পাহাড় এবং ডুয়ার্সের চা শ্রমিকেরা। কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই।

মালিকপক্ষ এবং ইউনিয়নের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হলেও জট কাটেনি। শেষ পর্যন্ত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে ১৬ শতাংশ বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এরপর ডুয়ার্সের চা বাগানগুলোর কর্মবিরতি উঠলেও পাহাড়ের প্রায় ১৫টি চা বাগানে এখনো ধর্মঘট চলছে। তাদের দাবি, ২০ শতাংশ বোনাস না পাওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।

দার্জিলিং চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গৌতম মণ্ডল জানিয়েছেন, “পাহাড়ের বেশ কয়েকটি বাগানে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলাদা করে বৈঠক হয়েছে। সেখানে কোনো কোনো বাগান সরকারের বেঁধে দেওয়া ১৬ শতাংশ বোনাসের বেশিই শ্রমিকদের দেওয়ার কথা বলেছেন। যে কারণে আপস মীমাংসার মাধ্যমে ধর্মঘট উঠেছে। কিন্তু বেশ কিছু বাগানে এখনো জট কাটেনি। আলোচনা চলছে।”

পাহাড়ে চা বাগানের আন্দোলনরত ইউনিয়নগুলোর অন্যতম নেতা বিএম রাই জানিয়েছেন, “২০ শতাংশ বোনাস না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকেরা কাজে ফিরবেন না। এটা তাদের অধিকার।”

বস্তুত, উৎসবের মৌসুমে বোনাস দেওয়ার রীতি আছে চা বাগানগুলোতে। এবছর সেই বোনাস নিয়েই মালিকপক্ষের সঙ্গে বিতর্ক শুরু হয় শ্রমিকদের। তার জেরেই শুরু হয় আন্দোলন।

দার্জিলিং এবং ডুয়ার্স অঞ্চলের চা বাগান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যা চলছে। মাঝে বহু চা বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত দেড় বছরে বেশ কিছু চা বাগান নতুন করে খুলেছে। কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, হাত বদল হয়ে চা বাগান খুললেও তাদের পুরোনো বকেয়া এখনো পুরোপুরি মেটানো হয়নি।

বহু শ্রমিক তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটির টাকা পাননি। অভিযোগ রয়েচে, মৃত্যুর পরেও তাদের ব্যাংকে সেই টাকা ঢোকেনি। এনিয়ে একাধিকবার আন্দোলনে নেমেছেন চা শ্রমিকেরা।

শুধু তা-ই নয়, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নিয়েও অসন্তোষ আছে। বছরদুয়েক আগে সরকার শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির কথা বললেও তা যথেষ্ট নয় বলেই শ্রমিকদের দাবি।

উত্তরবঙ্গের বাগানে এখন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয় ২৫০ টাকা। কোনো বাগান এর চেয়ে বেশি মজুরি দেয়। চা শ্রমিকদের বক্তব্য, অন্যান্য ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম অর্থ দেওয়া হয় চা তাদের।

যদিও মালিকপক্ষের দাবি, যেহেতু চা শ্রমিকদের থাকার ঘর, স্কুল এবং মেডিক্যাল সুবিধা দেওয়া হয়, তা-ই অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সঙ্গে চা শ্রমিকদের গুলিয়ে ফেললে চলবে না। চলতি বছরে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়েও একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও আছেন।

চা মালিকদের অভিযোগ, এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চায়ের উৎপাদন ভালো হয়নি। বস্তুত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও চায়ের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে তাদের দাবি। এবং সে কারণেই ২০ শতাংশ বোনাস তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন চা মালিকেরা।

অবশ্য সকলেই চেষ্টা করছেন, শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে আপস মীমাংসার রাস্তায় যেতে।

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *