বেকারত্ব দূরীকরণে বৈদেশিক বিনিয়োগ কি একমাত্র উপায়?

বেকারত্ব দূরীকরণে বৈদেশিক বিনিয়োগ কি একমাত্র উপায়?

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ বেশকিছু বিষয়ে অভিযোগ ছিল এবং সেগুলোর সুরাহা করতে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তবে, অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেকারত্বের তীব্রতা নিরসনে ব্যর্থতা।

করোনা পরবর্তী কয়েকটা বছর অনেকগুলো অন্তঃস্থ নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচক মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। যেমন—বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, ডলারের সংকট ও দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের পতন, রেমিট্যান্স প্রবাহে হ্রাস, আন্তর্জাতিক লেনদেনে অস্থিতিশীলতা, ক্রেডিট রেটিং-এ অবনমন, রাজস্ব আহরণে ঘাটতি, ঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ইত্যাদি।

অধিকন্তু, বহিঃস্থ সমস্যা যেমন রাশিয়া-ইউক্রেনে আগ্রাসন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চলমান যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ায় অর্থনীতি দাঁড়ায় প্রায় ভঙ্গুর অবস্থায়।

এরই মাঝে ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী কোটা প্রথা বাতিলের আন্দোলনের সফলতায় ৫ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকারের পতন ঘটে। পরবর্তীতে ৮ আগস্ট ২০২৪ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। ফলে, সাধারণ জনগণ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে; নতুন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্নে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ বেশকিছু বিষয়ে অভিযোগ ছিল এবং সেগুলোর সুরাহা করতে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তবে, অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেকারত্বের তীব্রতা নিরসনে ব্যর্থতা। আর এ কারণে অনেকে মনে করেন যে, একদিকে যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস, আবার অন্যদিকে বেকারত্বের হতাশা এ দ্বৈত উদ্দীপকের চাপ সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের তাদের জীবন বাজি রেখে সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেছিল।

কাজেই এ অভিজ্ঞতার আলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে বিদ্যমান অন্যান্য নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে দেশ থেকে বেকারত্বের তীব্রতা হ্রাস করা। বিশেষ করে বিশাল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের আশু ব্যবস্থা করা। দেশের বিদ্যমান কাঠামোতে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তি কাজ না পেলে তাকে বেকার বলা হয়। বেকারত্ব আমাদের দেশে একটি সামাজিক সংকট হিসেবে বিবেচিত।

দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে একজন বেকারের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। তখন কেউ হতাশা ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে; নিজেকে অসামাজিক ও খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলে। ফলে, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে পরিবার ও দেশের ওপর। আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা ও কাঙ্ক্ষিত শিল্পায়নের অভাবে ক্রমাগত বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার। যা তার আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ তিনমাসের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার জন। যদিও আইএলও-এর ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটির মতো উল্লেখ করা হয়ে ছিল।

লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের হিসাবে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই শিক্ষিত বেকার। বিবিএস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। তাদের ১৩-১৪ লাখের বিভিন্ন খাতে দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয়। অল্প কিছু বিদেশেও যায়।

তারপরেও বাকি এত বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর অর্থনীতির উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক কর্মযজ্ঞের অর্থাৎ শিল্পায়নের। আর বেকারত্ব দূরীকরণের দ্রুত উপায় হচ্ছে একদিকে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নতুন চাকরির ব্যবস্থা করা।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ বেশকিছু বিষয়ে অভিযোগ ছিল এবং সেগুলোর সুরাহা করতে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তবে, অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেকারত্বের তীব্রতা নিরসনে ব্যর্থতা।

প্রথমত, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর স্বকর্মে নিয়োজিত করার মাধ্যমে অতি সহজেই বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাজারভিত্তিক কারিগরি দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব। তাছাড়া, করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যেসব শিক্ষিত যুবক নিজেরা ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বকর্মসংস্থানে যুক্ত ছিলেন, ওই সময়ে তারাও বেকার হয়ে পড়েন।

আর যখন ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের আমানতকারীরাই টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে; তখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় জামানতবিহীন ঋণ পাওয়া সত্যি কঠিন ব্যাপার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, আর্থিক অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে দেশে কমপক্ষে ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে এবং এদের মধ্যে ৬টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের অনেক শাখায় লেনদেন করার মতো নগদ অর্থ নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলো সবল ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে তারল্য ঘাটতি মেটানোর একটা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বেকারত্ব কমাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো জরুরি হলেও বিগত সরকারের তৈরি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর তেমন কোনো দিক নির্দেশনা নেই। তাছাড়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকট চলমান থাকায় সরকারি খরচে কৃচ্ছ্রতা সাধন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কাজেই নিয়মিত নিয়োগের বাহিরে সরকারি খাতে কতটুকু অতিরিক্ত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তা ভাবনার বিষয়।

তৃতীয়ত, বর্তমানে বেসরকারি দেশীয় বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৩.৫ শতাংশ যা অত্যন্ত কম। কয়েক বছর যাবৎ দেশীয় বিনিয়োগ প্রায় স্থিতিশীল রয়েছে। সহসা বেসরকারি দেশীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেননা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট ছাড়াও ডলারের উচ্চমূল্য ও এর অপ্রতুলতা এখনো বর্তমান।

তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের ফলে চলছে অস্থিতিশীলতা। নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ফলে বাড়বে সব ধরনের ঋণের উপর সুদের হার। তাছাড়া, বিদ্যমান ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকট কোনোটাই বেসরকারি দেশীয় বিনিয়োগের উপযোগী নয়।

চতুর্থত, কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি খাতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের কারণে একদিকে যেমন দেশে মূলধন আসে, শিল্পায়ন হয়, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন বাড়ে অর্থাৎ জিডিপির আকার বড় হয়।

আবার অন্যদিকে রপ্তানি বাড়ে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়, ফলে বৈদেশিক মুদ্রা মজুতও বৃদ্ধি পায়। আর, নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধি পায়, জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে। তাছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগ শুধু মূলধনই আনে না, সাথে উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনাও নিয়ে আসে যা আমাদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তাকালে দেখা যায় যেসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেশ বড় সেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। যেমন হংকং, তাইওয়ান (আরওসি) থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু, আমরা তেমনভাবে কখনোই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে নিট এফডিআই প্রবাহ ছিল ৩২৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। অথচ আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই পরিমাণ ছিল ৩৪৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ফলে, বছর ব্যবধানে নিট এফডিআই প্রবাহ কমেছে প্রায় ৫.৫২ শতাংশ।

প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন এবং ওয়ান স্টপ পরিষেবা গ্রহণ করা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এফডিআই-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ভারতের বড় অর্থনীতি নয়, এমনকি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র অর্থনীতি যেমন মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা এফডিআই আকর্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। 

আঙ্কটাড (United Nations Conference on Trade and Development-UNCTAD)-এর বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২৩ অনুসারে, এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শতাংশ হিসাবে এফডিআই প্রবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

আঙ্কটাড-এর তথ্য অনুসারে ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত, বাংলাদেশ বার্ষিক গড় ২.৯২ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে। ২০২২ সালে মালদ্বীপ ৭২২ মিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে, যা তার জিডিপির প্রায় ১১.৭০ শতাংশের সমান। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা, যেটি ২০২২ সালে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ছিল, তারাও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৮৯৮ মিলিয়ন ডলার এনেছে, যা তার জিডিপির ১.২০ শতাংশের সমান।

যেখানে বাংলাদেশ মার্কিন ডলারে উভয় দেশ থেকে বেশি এফডিআই পেয়েছে তারপরেও জিডিপির ভিত্তিতে মাত্র ০.৭৫ শতাংশ যা প্রয়োজনের অর্ধেকেরও কম। যদিও পাকিস্তান, ভুটান ও নেপাল জিডিপি-এর শতকরা ভিত্তিতে আমাদের তুলনায় পিছিয়ে আছে।

অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক বিনিয়োগ কমার কারণ হিসেবে ডলার সংকট, অর্থ পাচার, দুর্বল ব্যাংকিং খাত, দুর্নীতি, অনুকূল কর নীতির অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা, সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি, জ্বালানি সংকটে ও সুশাসনের ঘাটতির মতো বিষয়গুলো মূল কারণ হিসেবে মনে করেন। শিল্প ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তিও একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক বিনিয়োগ কমার কারণ হিসেবে ডলার সংকট, অর্থ পাচার, দুর্বল ব্যাংকিং খাত, দুর্নীতি, অনুকূল কর নীতির অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা, সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি, জ্বালানি সংকটে ও সুশাসনের ঘাটতির মতো বিষয়গুলো মূল কারণ হিসেবে মনে করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের কারণে এদেশে বিনিয়োগকারী অনেক বিদেশি কোম্পানি নিজ দেশে মুনাফা নিতে সমস্যায় পড়েন। এরই মাঝে জুলাইয়ে ক্রেডিট রেটিং যাচাইকারী কোম্পানি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ থেকে কমিয়ে ‘বি প্লাস’ করেছে।

তাছাড়া ২০২৩ সালের ৩১ মে বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১’- এ নামিয়ে দেয় মুডি’স। আর ফিচ রেটিংস চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ থেকে অবনমন করে ‘বি প্লাস’ রেটিং দেয়। বৈদেশিক ঋণ ছাড়াও এর প্রভাব এফডিআই-এর ওপরেও পড়বে বলে অনেকে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাছাড়া, দেশীয় বেসরকারি বিনিয়োগই যখন প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাচ্ছে না, তখন বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগে কতটুকু এগিয়ে আসবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে বস্ত্র খাতে। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এ খাতে চলছে অস্থিতিশীলতা।

বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাত ব্যাংকিং। এটাও খেলাপি ঋণে জর্জরিত। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্যাস ও জ্বালানি খাত। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে টেলিযোগাযোগ। একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে এগুলোসহ আরও অনেক খাতেই বিনিয়োগ বাড়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষে, আমাদের ভরসার জায়গা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের সাহায্যে প্রান্তিক স্তরে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আর এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ও তার গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন।

কাজেই, আমাদের প্রত্যাশা যে তার নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সকল অন্তরায় দূরীভূত হবে। বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আমাদের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াবে। ফলে, বেকার সমস্যা একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নেমে আসবে এবং সর্বোপরি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

নীলাঞ্জন কুমার সাহা ।। অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ ও প্রাক্তন ডিন, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *