বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে একমাত্র আবাসস্থল ধসে পড়ে চুরমার হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্র। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে কান্না যেন থামছে না শিশু মারিয়ামের। নানা প্রশ্ন তার। এখন ছোট ভাই ও বাবা-মাকে নিয়ে কোথায় থাকবে সে?
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে একমাত্র আবাসস্থল ধসে পড়ে চুরমার হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্র। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে কান্না যেন থামছে না শিশু মারিয়ামের। নানা প্রশ্ন তার। এখন ছোট ভাই ও বাবা-মাকে নিয়ে কোথায় থাকবে সে?
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের দিগং গ্রামের বদ্দিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, দিগংসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটা গ্রামে পানির চাপে অনেক জায়গায় রাস্তার মাঝের অংশ ভেঙে গেছে।
এক জায়গায় রাস্তা ভেঙে পাশের একটি বাড়ির নিচে গর্ত হয়ে গেছে। বাড়িটি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে যাওয়া এই বাড়ির মালিক রানা মিয়া। বাড়ি তৈরির জন্য নেওয়া লোনের টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি তার। দুশ্চিন্তায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দিগং বদ্দিপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রানা বলেন, সব হারিয়ে আমি নিঃস্ব। ছয় মাস আগে বাড়ির গাঁথুনির কাজ শেষ হয়েছে। এখনো লোনের টাকা পরিশোধ হয়নি। অন্যদিকে বৃষ্টিতে আমার আয়ের উৎস তিনটি ঘেরের প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
তিনি বলেন, মাটির তৈরি টালিগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। ইট আর সিমেন্টের গাঁথুনি দেওয়া দেয়াল ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে। কোনোভাবেই এই ঘরটি বসবাসের উপযোগী নেই।
রানার স্ত্রী সোনিয়া খাতুন বলেন, একদিকে স্বামীর আয়ের অবলম্বন মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে, অন্যদিকে থাকার একমাত্র জায়গা ঘরটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এখন দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।
তিনি বলেন, সকলে যদি সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেতাম। তা না হলে অনেক দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হবে আমাদের।
রানার মেয়ে শিশু মারিয়াম খাতুন বলে, আমরা এখন কোথায় থাকব? যেখানে খেলা করতাম, ঘুমাতাম সব কিছু এখন পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের থাকার যে আর কোনো জায়গা থাকল না।
দিগং জামে মসজিদের ইমাম জিল্লুর রহমান বলেন, আল্লাহর অনেক বড় পরীক্ষা রানার পরিবারের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কারণ তার ঘর ভেঙে নষ্ট হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। অন্যদিকে তার আয়ের উৎস নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এখন পরিবার নিয়ে থাকবে এমন জায়গা নেই। সকলে যদি সহযোগিতা করে অবশ্যই সে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে এবং তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। অন্যদিকে ভেঙে যাওয়া রাস্তাটাও দ্রুত মেরামত করা দরকার। তা না হলে এলাকার মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটা অল্প ভাঙা ছিল। সংস্কারের জন্য মিস্ত্রি নিয়ে কাজ শুরু করলে সেই মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে সংস্কার কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তাটা ভেঙে গেছে এবং রানার বাড়িটাও ধসে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব অসুস্থ রয়েছেন। তারপরও তিনি বারবার খোঁজ নিয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়ে এলাকায় ফিরলে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
ইউপি সদস্য বলেন, রানাকে আমরা যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। তারপরও এলাকার মানুষজন যারা রয়েছে এবং প্রবাসী ভাই বা বিত্তবান যারা রয়েছেন সকলে যদি সহযোগিতা করেন তাহলে রানা অবশ্যই তার একটা থাকার আশ্রয় পাবে। অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় তাকে দিনযাপন করতে হবে না।
ইবরাহিম খলিল/আরএআর