গত ৫ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ যাবে ভারতে। মূলত এই উৎসবকে ঘিরে দেশটিতে ইলিশেরে চাহিদা বেড়ে যায়। মাঝে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল ইলিশ রপ্তানি। পরে আবারও ‘কূটনীতির হাতিয়ার’ হিসেবে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়।
গত ৫ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ যাবে ভারতে। মূলত এই উৎসবকে ঘিরে দেশটিতে ইলিশেরে চাহিদা বেড়ে যায়। মাঝে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল ইলিশ রপ্তানি। পরে আবারও ‘কূটনীতির হাতিয়ার’ হিসেবে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা দেওয়া হয় এবার ইলিশ রপ্তানি করা হবে না। মূলত দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আকতার। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটি দামি মাছ। আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারে না। কারণ সব ভারতে পাঠানো হয়। যেগুলো থাকে, সেগুলো অনেক দাম দিয়ে খেতে হয়।’
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে সব ব্যবসায়ী মাছ আমদানির জন্য আগে আবেদন করেছিলেন, তাদের আর নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তবে নতুন করে যারা আবেদন করতে চান, তাদের আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশের ফিশারি অ্যাসোসিয়েশন ও আসাদুন্নবি ফিশারিজ অ্যান্ড মার্চেন্ট কর্পোরেশন নামে এই দুই সংগঠন ইলিশ রপ্তানির জন্য মূলত দরপত্র দিয়ে থাকেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৬৬৫ টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৭৬ টন। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২১১ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৮০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়।
তবে এবার চাহিদার তুলনায় দেশের বাজারে ইলিশের জোগান কম। সেকারণে ভরা মৌসুমেও বাজারে দাম চড়া। অন্য সময় এই সময় এক কেজির একেকটি ইলিশের দাম ১১শ থেকে ১২শ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এবার সেই ইলিশের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৭শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের চড়া দাম নিয়ে শঙ্কিত ভারতের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। ফিশ ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, ‘‘মাছের দাম কত কী হবে, বলা এখনই সম্ভব নয়। এমনিতেই ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। যদি পরিমাণে বেশি আসে, তবেই দাম কম হবে। নয়তো দাম বেশিই থাকবে।’’
পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ইলিশ মাছ যখন আড়ৎদারের হাত ঘুরে ভারতের বাজারে আসবে, তখন প্রতি কেজির দাম হতে পারে ভারতীয় মুদ্রায় ২ হাজার ২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে দাম। গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করেছিল ভারত। গত বার এক কেজির কম ওজনের মাছের দাম ছিল ভারতীয় মুদ্রায় কেজি প্রতি ৭০০ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের দাম ছিল কেজি প্রতি প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা। সেই তুলনায় এ বার যে দাম বৃদ্ধি পাবে তা নিয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংশয় নেই।
এদিকে বৈধ পথ ছাড়াও সীমান্ত পথে ভারতে ইলিশ গিয়ে তাকে। তবে এবার সীমান্তে খুবই কঠোর অবস্থানে বিজিবি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে পাচারের সময় বেশ কিছু ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। সবশেষ সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।
কলকাতার ভারতীয় মাছ আমদানিকারকদের সংগঠন ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এফআইএ)পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে গত ৯ সেপ্টেম্বর পাঠানো এক চিঠিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনার তাগিদ জানানো হয়।
সংগঠনটি চিঠির সঙ্গে সংযুক্তিতে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রপ্তানির জন্য অনুমোদিত ও রপ্তানি হওয়া ইলিশের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। এফআইএর ওই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ অনুমোদিত পরিমাণে ইলিশ রপ্তানির হয়েছিল ২০১৯ ও ২০২০ সালে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে রপ্তানির জন্য অনুমোদিত ও রপ্তানি করা ইলিশের পরিমাণ ছিল ৫০০ টন। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৫০ টন। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয় ৪ হাজার ৬০০ টন। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় ১ হাজার ২০০ টন। পরের বছরের একই সময়ে ২ হাজার ৯০০ টন অনুমোদনের বিপরীতে রপ্তানি হয় ১ হাজার ৩০০ টন ইলিশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয় ৩ হাজার ৯৫০ টন। রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টন।
এসএম