বরগুনায় হাসপাতালে দ্বিগুণেরও বেশি শিশু রোগী, সেবা পেতে ভোগান্তি

বরগুনায় হাসপাতালে দ্বিগুণেরও বেশি শিশু রোগী, সেবা পেতে ভোগান্তি

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। গত ১৫ দিনে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। হঠাৎ শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে যেমন চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, অপরদিকে জায়গা সংকটে চিকিৎসা সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশুদের স্বজনরা।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। গত ১৫ দিনে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। হঠাৎ শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে যেমন চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, অপরদিকে জায়গা সংকটে চিকিৎসা সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশুদের স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকেই হঠাৎ চাপ বেড়েছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি শিশু রোগীর  সংখ্যা। আক্রান্ত এসব শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালে নির্ধারিত বেড সংখ্যা ৫০টি। তবে বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নির্ধারিত বেডের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিদিন গড়ে  হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ১২০ জনেরও বেশি শিশু রোগী। এতে বেড সংকটে পড়তে হচ্ছে অধিকাংশ শিশু রোগীদের।

সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ভর্তি শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া অনেকেই আবার ভর্তি হয়েছে সর্দি-জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে। হঠাৎ করে নির্ধারিত   বেডের বিপরীতে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি শিশু রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি রোগীর চাপ। এ কারণে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের চিকিৎসা সেবা পেতে বাধ্য হয়ে স্থান নিতে হয়েছে হাসপাতালের মেঝে, বারান্দাসহ সিঁড়ি ও লিফটের দরজার পাশে। এতে একদিকে যেমন চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের, তেমনি নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আক্রান্ত শিশু রোগীসহ তাদের স্বজনদের।

বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নম্বর ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া নামক এলাকার বাসিন্দা মোসা. শারমিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছোট বাচ্চা আয়শা আক্তার মাইশাকে নিয়ে পাঁচ দিন ধরে ভর্তি হাসপাতালে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাচ্চার ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি কিন্তু বসার মতো কোনো জায়গা নেই। অনেক খোঁজাখুজি করে কোনো রকম লিফটের দরজার সামনে একটু জায়গা পেলেও ধুলাবালি, ময়লা এবং মানুষের যাতায়াতের কারণে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এই পরিবেশের মধ্যে বড়রাও ঠিকভাবে থাকতে পারে না বাচ্চা নিয়ে কীভাবে থাকবো।

মোসা. কল্পনা ছেলের চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছেন হাসপাতালে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন ধরে আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। চিকিৎসা সেবা মোটামুটি ঠিক থাকলেও রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণে দেখা যায় কেউ বেড পায়, ফ্যান পায় না আবার যেখানে ফ্যান আছে সেখানে বেড নাই। অনেকেই গরমের কারণে বাসা থেকে ফ্যান নিয়ে এসেছেন। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মাইনুল ইসলামের মা মাহিনুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতিরিক্ত রোগী থাকায় যে পরিমাণ সিট থাকার প্রয়োজন তা হাসপাতালে নেই। হাসপাতালে আসার পরে আমরা সিট পাইনি। এ ছাড়াও যে পরিমাণ রোগী সে তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম। এ কারণে তারা সকল রোগীর কাছে আসতেও পারে না, আমাদের যেতে হয় তাদের কাছে। এতে অনেক সময় কখন কার কোন ওষুধ প্রয়োজন তা ঠিকভাবে জানে না তারা।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স আয়শা সিদ্দিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ জন শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে হাসপাতাল থেকে ৫০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছে।  এরপরও প্রতিদিনই ১০০ জনের বেশি শিশু রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকছে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে মৌসুম পরিবর্তনের সময় চলছে। এ সময় দেখা যায় দিনে গরম আবার রাতে তাপমাত্রা একটু কম, আবার শেষ রাতে ঠান্ডা। এ ছাড়া কখনো রোধ আবার কখনো বৃষ্টি, এতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে না। এ অবস্থায় সব থেকে বেশি শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথাসহ বিভিন্ন চর্মরোগেও আক্রান্ত হয়ে শিশু রোগীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্তহারে বেড়েছে। হাসপাতাল থেকে সকল রোগীকেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

মৌসুম পরিবর্তনের এ সময়ে শিশুদের স্বজনদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। পচা-বাসি খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। সবসময় ঠান্ডা স্থানে বাচ্চাকে রাখতে হবে, তবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় রেখে আবার বাচ্চার যাতে ঠান্ডা লেগে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

মো. আব্দুল আলীম/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *