বনজ কুমারসহ ৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন   

বনজ কুমারসহ ৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন   

ফেনীর আলোচিত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

ফেনীর আলোচিত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে ফেনীর সোনাগাজী আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমানের আদালতে আসামি ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নাহার এ মামলার আবেদন করেন। আদালত এ ব্যাপারে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।

মামলায় আরও যাদের আসামি করার আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার মাঈন উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, পরিদর্শক শাহ আলম, উপ-পরিদর্শক রতেপ চন্দ্র দাস, লুৎফর রহমান ও চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা।

মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে মামলায় অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাসে আসামিদের পরিবার ও স্বজন থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ৭৭ লাখ টাকাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। কিন্তু তারপরও অভিযুক্তরা আসামিদের নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আসামিদের আদালতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রায় প্রদান করা হয়।

এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলার সাক্ষী পিবিআই উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বাবলু গত ১২ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলার ঘটনাটি পুনরায় তদন্তের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। সেই পোস্টটি আসামিদের স্বজনদের নজরে এলে অভিযুক্ত সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নুসরাত হত্যা মামলার ১৩ নম্বর আসামি ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নহার বাদী হয়ে আদালতে এ মামলার আবেদন করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমারসহ অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা শুরু থেকেই প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেন। মামলার চার্জশিট দেওয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে আসামিদের স্বজনদের কাছ থেকে বনজ কুমারের কথা বলে তারা ৩০ লাখ টাকা নেন। পরে বিভিন্ন সময় এ কর্মকর্তারা স্বজনদের কাছ থেকে আরও ৪৭ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায় করেন।

তিনি আরও বলেন, আসামিরা ইতোমধ্যে আদালতে পিটিশনের সময় পিবিআই কর্মকর্তাদের নির্যাতন ও জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার কথা বলেছেন। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলার আবেদন করা হয়েছে।

এদিন বিকেলে নুসরাত হত্যা মামলা পুনঃতদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান ও আইন উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে গত ১৯ জুলাই এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত বনজ কুমার চাকরি থেকে অবসরে যান। অপর অভিযুক্তরা পিবিআইয়ের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ওই বছরের ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই বছরের ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

তারেক চৌধুরী/এমজেইউ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *